এসি কিভাবে পরিষ্কার করতে হয় - এসি পরিষ্কার করার নিয়ম

ফ্রিজের নরমালে বরফ জমার কারণ কি - ফ্রিজে বরফ জমার কারণ

এসি কিভাবে পরিষ্কার করতে হয় আপনি কি সেটি জানেন? এই আর্টিকেলটিতে আমরা খুব সহজ ভাষায় এবং ধাপে ধাপে শেখাবো "এসি কিভাবে পরিষ্কার করতে হয়" এবং "এসি পরিষ্কার করার নিয়ম"। আপনি চাইলে নিজেই ঘরে বসে এসি পরিষ্কার করতে পারবেন, কোনো টেকনিশিয়ান ছাড়াই।

এসি-কিভাবে-পরিষ্কার-করতে-হয়

আমরা সবাই চাই আমাদের এসি যেন দীর্ঘদিন ভালোভাবে কাজ করে, তাই না? তবে সেটা সম্ভব একমাত্র নিয়মিত পরিষ্কারের মাধ্যমেই। চলুন জেনে আসা যাক এসি কিভাবে পরিষ্কার করতে হয় তা সম্পর্কে।

পোস্ট সূচিপত্র: এসি কিভাবে পরিষ্কার করতে হয় - এসি পরিষ্কার করার নিয়ম

এসি কিভাবে পরিষ্কার করতে হয় - এসি পরিষ্কার করার নিয়ম

আমরা জানি যে, গরমের দিনে এসি যেন গরম থেকে একমাত্র পরিত্রাণের উপায়। কিন্তু এটি নিয়মিত পরিষ্কার না করলে এর কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। অনেকেই জানেন না, এসি পরিষ্কারের সঠিক নিয়ম জানা না থাকলে এটি যন্ত্রের ক্ষতির কারণও হতে পারে। চলুন আমরা বিস্তারিতভাবে জেনে আসি এবং আলোচনা করে আসি কিভাবে নিরাপদে ও সঠিকভাবে এসি পরিষ্কার করতে হয় তা সম্পর্কে।

ইনডোর ইউনিট পরিষ্কার করার নিয়ম:

ইনডোর ইউনিট অর্থাৎ ঘরের ভেতরের অংশটি সবচেয়ে বেশি ধুলো ও ময়লা জমে। এটি পরিষ্কার করতে আমাদের যা করনীয়: প্রথমে এসির পাওয়ার সংযোগ খুলে নিতে হবে। এরপর এসির সামনে থাকা কভার খুলে ধীরে ধীরে ফিল্টার বের করে ফেলুন। সাধারণত ফিল্টারগুলো প্লাস্টিকের হয় এবং এগুলোতে ধুলোবালি আটকে থাকে। এগুলো হালকা গরম পানিতে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর রোদে শুকিয়ে আবার স্থানমতো লাগিয়ে দিতে হবে। ইনডোর ইউনিটে ব্লোয়ার ও কুলিং কয়েল থাকে, যা পরিষ্কারের জন্য হালকা ব্রাশ ব্যবহার করা যায়। ভালোভাবে পরিষ্কার হলে এসি বাতাস শীতল ও বিশুদ্ধ হয়।

আউটডোর ইউনিট পরিষ্কার করার নিয়ম:

আউটডোর ইউনিট মূলত এসির বাইরের অংশ। এটি বাইরে থাকে বলে বেশি ময়লা জমে। এটি পরিষ্কার করার সময় অবশ্যই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিন। তারপর ইউনিটের কভার খুলে ভিতরের পাখা ও কয়েল পরিষ্কার করুন। ময়লা জমে গেলে এসির কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় এবং বিদ্যুৎ খরচও বাড়ে। পরিষ্কারের সময় হালকা পানি স্প্রে করতে পারেন, তবে সরাসরি পানির চাপ দিলে ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এসির ড্রেন লাইন পরিষ্কার করা:

এসির ড্রেন লাইন পরিষ্কার না করলে এসির পানি নির্গমন বন্ধ হয়ে গিয়ে ঘরে পানি জমে যেতে পারে। তাই সময়মতো ড্রেন লাইন পরিষ্কার করা অত্যন্ত জরুরি। একটি সরু পাইপ বা সাকশন পাম্প ব্যবহার করে ড্রেন লাইন থেকে ময়লা বের করে ফেলা যায়। এটি খুব বেশি জটিল কাজ নয়, তবে সাবধানতার সাথে করতে হবে।

এসি পরিষ্কারে করণীয় ও বর্জনীয়:

এসি পরিষ্কারের সময় অবশ্যই এসির বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখতে হবে। খুব বেশি ভিজিয়ে পরিষ্কার করা যাবে না, এতে যন্ত্রাংশে পানি ঢুকে ক্ষতি হতে পারে। ফিল্টার ধোয়ার পর ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। শক্ত কিছু দিয়ে স্ক্র্যাচ করলে ফিনস বা কয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে নরম ব্রাশ বা পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করা নিরাপদ। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আরো বিস্তারিতভাবে জানবো এবং এসি পরিষ্কার সহ এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কেও আমরা আলোচনা করবো। 

এসি পরিষ্কার করার পূর্বে যা জানা জরুরি

এসি পরিষ্কার করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা অত্যন্ত জরুরি। কারণ অসতর্কতা আপনার যন্ত্রটির ক্ষতির কারণ হতে পারে। চলুন জেনে আসা যাক, এসি পরিষ্কার করার পূর্বে কি কি বিষয় জেনে রাখা জরুরি তা সম্পর্কে।

  • এসি বন্ধ করে পরিষ্কার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যুৎ সংযোগ চালু রেখে পরিষ্কার করলে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এই নিয়ম অমান্য করা মানেই নিজের জীবনের ঝুঁকি বাড়ানো। তাই পরিষ্কারের আগে সার্কিট ব্রেকার বন্ধ করে নেওয়া সবচেয়ে ভালো উপায়।
  • এসির কোন কোন অংশ পরিষ্কার করতে পারবেন তা জানা জরুরি। কিছু অংশ যেমন বাইরের ফ্যান বা ভিতরের কুলিং কয়েল খুবই সংবেদনশীল। যদি এগুলো পরিষ্কারের সঠিক নিয়ম না জানা থাকে তাহলে ভেঙে ফেলতে পারেন। তাই, পরিষ্কারের আগে ইউজার ম্যানুয়াল দেখে নেওয়া উচিত।
  • পরিষ্কারের সময় কোন সরঞ্জাম ব্যবহার করা যাবে তাও গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু কাপড় দিয়ে মোছা যায় না। কোথাও হালকা ব্রাশ দরকার, কোথাও আবার ভ্যাকুয়াম ক্লিনার। এমনকি ড্রেন লাইন পরিষ্কারে ছোট পাইপ বা পাম্প ব্যবহার করতে হতে পারে। তাই আগে থেকেই প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করে নেওয়া ভালো।
  • কিছু সমস্যা থাকলে পেশাদারের সাহায্য নেওয়াই ভালো। যেমন, এসি থেকে গ্যাস লিক করছে বা কম্প্রেসার থেকে অদ্ভুত শব্দ আসছে। এই সমস্যাগুলোর সমাধান ব্যবহারকারী নিজে করতে গেলে আরো বড় ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। তাই এসব সমস্যা থাকলে নিজে পরিষ্কার না করে একজন অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান ডাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।

এয়ার কন্ডিশনার পরিষ্কার করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম

আমরা উপরে জেনে নিলাম, এসি পরিষ্কার করার পূর্বে কি কি বিষয় জেনে রাখা জরুরি তা সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো এসি পরিষ্কার করার সময় কি কি সরঞ্জাম প্রয়োজন তা সম্পর্কে। এসি পরিষ্কার করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট সরঞ্জাম ব্যবহার করলে কাজ সহজ এবং নিরাপদ হয়। সব সরঞ্জাম সবসময় ঘরে না থাকলেও এগুলোর মধ্যে কিছু আপনি সহজেই পেতে পারেন।

  • প্রথমেই যা লাগবে তা হলো একটি নরম কাপড় বা মাইক্রোফাইবার কাপড়। এটি এসির কভার, ভেতরের দিক এবং ফিল্টার মুছে পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করা হয়। খেয়াল রাখতে হবে কাপড় যেন খুব বেশি ভেজা না হয়। বেশি ভেজা কাপড় এসির ভেতরের ইলেকট্রনিক অংশে পৌঁছালে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও, নরম কাপড় ব্যবহার করলে স্ক্র্যাচ পড়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।
  • এরপর, একটি হালকা ব্রাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ফিল্টারের মধ্যে জমে থাকা ধুলো পরিষ্কারের জন্য এটি ব্যবহার করা যায়। বড় ও শক্ত ব্রাশ ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ এতে ফিল্টার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেকেই পুরনো টুথব্রাশ ব্যবহার করেন, যা ভালো বিকল্প হতে পারে।
  • ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বা এয়ার ব্লোয়ার থাকলে খুবই কার্যকরী। এসির ডাস্টি অংশগুলোতে এটি ব্যবহার করলে সহজে ধুলোবালি দূর হয়ে যায়। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করার সময় এসির কুলিং কয়েলের উপর বেশি চাপ না দেওয়াই ভালো।
  • ড্রেন পাইপ পরিষ্কারের জন্য সরু একটি পাইপ বা সাকশন পাম্প দরকার হতে পারে। এগুলোর সাহায্যে আপনি সহজেই পাইপের ভেতর জমে থাকা ময়লা বের করতে পারবেন। পানি বেরিয়ে আসা বন্ধ হলে, এসি ঠিকমতো কাজ করে না। তাই নিয়মিত ড্রেন পাইপ পরিষ্কার রাখা দরকার।

এসির পাখনা কিভাবে পরিষ্কার করব?

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা উপরে হালকা ভাবে জেনে এসেছি, এসি কিভাবে পরিষ্কার করতে হয় বা এসি পরিষ্কার করার নিয়ম সম্পর্কে। এখন আমরা আলোচনা করবো এবং জানবো এসির পাখনা কিভাবে পরিষ্কার হয় তা সম্পর্কে। একটি এসির কার্যকারিতা অনেকাংশেই নির্ভর করে এর পাখনার উপর। এসির পাখনা মূলত ঠান্ডা বাতাস বাহিরে পাঠানোর কাজ করে এবং এটি ধূলাবালিতে আবৃত হয়ে গেলে এসির ঠান্ডা করার ক্ষমতা কমে যায়। তাই নিয়মিত পাখনা পরিষ্কার করা খুবই জরুরি। পাখনা পরিষ্কারের নিয়ম:

  • প্রথমেই এসির বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন। এটি একটি নিরাপত্তাজনক পদক্ষেপ যা পরিষ্কার করার সময় দুর্ঘটনা এড়াতে সাহায্য করবে।
  • এরপর একটি নরম ব্রাশ অথবা শুকনো কাপড় দিয়ে পাখনার ওপরের ধুলো ঝাড়ুন। যেহেতু এসির পাখনা অনেক সময় অ্যালুমিনিয়াম ফিন বা পাতলা ধাতুর তৈরি হয়ে থাকে, তাই বেশি চাপ প্রয়োগ করবেন না। ধীরে ধীরে ও মনোযোগ সহকারে পাখনার প্রতিটি কোণ পরিষ্কার করতে হবে। এটি করলে ধুলাবালি ও ময়লা সহজেই উঠে যাবে।
  • পরবর্তী ধাপে একটি হালকা ভেজা কাপড় ব্যবহার করে পাখনার চারপাশ পরিষ্কার করতে পারেন। কেউ কেউ হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করে থাকেন ধুলো ফুঁ দিয়ে সরানোর জন্য, তবে তা প্রয়োজন না হলেও চলে। এরপর একটি শুকনো তোয়ালে দিয়ে পুরো অংশটি ভালোভাবে মুছে ফেলুন যাতে কোনও আর্দ্রতা না থাকে। কারণ পানি জমে থাকলে সেটা এসির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • যদি দেখেন পাখনাগুলো খুব বেশি নোংরা এবং সাধারণ পরিষ্কার উপায়ে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়, তাহলে স্পেশাল এয়ার কন্ডিশনার ফিন ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এই ধরনের ক্লিনার পাওয়া যায়। এটি ব্যবহার করার সময় অবশ্যই গাইডলাইন পড়ে নিতে হবে।
  • শেষে মনে রাখবেন, মাসে অন্তত একবার এসির পাখনা পরিষ্কার করা উচিত। এতে করে এসি দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং বিদ্যুৎ খরচও কমবে। পরিষ্কার পাখনা ঠান্ডা বাতাস দ্রুত ছড়াতে সাহায্য করে এবং আপনার ঘরের তাপমাত্রা সহজেই নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমাদের বলা নিয়ম অনুযায়ী যদি আপনি কাজ করেন তবে আপনার এসি পাখনা অবশ্যই পরিষ্কার এবং টেকসই হবে বলে আমরা মনে করে।

এসির ভেতরের অংশ পরিষ্কার করার নিয়ম

এসির ভেতরের অংশ মানে মূলত ইনডোর ইউনিটের ভিতরের ফিন, কুলিং কয়েল এবং ব্লোয়ার। এই অংশগুলোতে সবচেয়ে বেশি ধুলাবালি জমে এবং এগুলো পরিষ্কার না করলে এসির ঠান্ডা করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। আমরা যদিও বা এই বিষয়টি সর্বপ্রথমে জেনে এসেছি তবুও এটি সম্পর্কে আরেকটু পরিষ্কার হওয়া দরকার কেননা এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ আমাদের এসির। চলুন তবে জেনে আসা যাক। 

এসির ভেতরের অংশ পরিষ্কার শুরু করার আগে অবশ্যই এসির প্লাগ খুলে দিন। নিরাপত্তা সবার আগে। প্রথমে এসির কভার খুলুন। বেশিরভাগ স্প্লিট এসিতে সামনের ঢাকনাটি খুব সহজেই খুলে যায়। তারপর ফিল্টার সরিয়ে ফেলুন এবং আলতো করে ফিন ও কুলিং কয়েলের দিকে তাকান। এগুলোর গায়ে যদি ধুলো জমে থাকে, তাহলে একটি নরম ব্রাশ বা শুকনো কাপড় দিয়ে হালকাভাবে পরিষ্কার করুন। পরবর্তী ধাপে কুলিং কয়েল ক্লিনার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাজারে স্প্রে টাইপ কয়েল ক্লিনার পাওয়া যায় যা কয়েলের গায়ে স্প্রে করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হয়। যদি আপনি হাত দিয়ে পরিষ্কার করতে চান তাহলে একটি হালকা ভেজা কাপড় ব্যবহার করুন, তবে পানি যেন যন্ত্রাংশে ঢুকে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ব্লোয়ার ফ্যানের দিকে নজর দিন। এটি সাধারণত গভীর ভেতরে থাকে এবং ঘূর্ণায়মান ব্লেডে ধুলো জমে ঠান্ডা বাতাসের গতি কমে যায়। ব্লোয়ার পরিষ্কার করতে একটি সরু ব্রাশ বা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। কেউ কেউ ব্লোয়ার খুলেও পরিষ্কার করেন তবে এটি ঝুঁকিপূর্ণ, তাই প্রয়োজনে টেকনিশিয়ানের সাহায্য নেয়া ভালো। শেষে পুরো ভেতরের অংশ শুকিয়ে নিন এবং ফিল্টার বসিয়ে ঢাকনাটি বন্ধ করুন। প্রতিমাসে অন্তত একবার এই পরিষ্কার প্রক্রিয়া পালন করলে এসি থাকবে টেকসই এবং কার্যকর।

এসির বাইরের অংশ পরিষ্কার করার সঠিক উপায়

এসির বাইরের অংশ অর্থাৎ আউটডোর ইউনিটটি বাইরে খোলা জায়গায় থাকে বলে এতে ধুলাবালি, কাদা এবং পাতাঝরা জমে যায়। এই ইউনিট পরিষ্কার না করলে এসির কার্যকারিতায় প্রভাব পড়ে। আমরা এই বিষয়টি অল্প করে সর্বপ্রথমেই জেনে এসেছি। তবে এই বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের আরো ভালোভাবে জানতে হবে। চলুন তবে জেনে আসা যাক।

এসির-বাইরের-অংশ-পরিষ্কার-করার-সঠিক-উপায়

বাইরের অংশ পরিষ্কার করার জন্য প্রথমে মূল বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিন। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ধাপে একটি নরম ব্রাশ দিয়ে বাহিরের ফিনগুলো ঝাড়ুন। খুব জোরে ঘষবেন না কারণ ফিনগুলো সাধারণত নরম ধাতুর তৈরি হয় এবং সহজে বেঁকে যেতে পারে। ধুলো ঝেড়ে নেওয়ার পর একটি ভেজা কাপড় দিয়ে ফিন এবং কেসিং পরিষ্কার করতে পারেন। যদি দেখেন অনেক বেশি ময়লা জমেছে, তাহলে হালকা পানি স্প্রে করে পরিষ্কার করা যেতে পারে। এখানে মনে রাখতে হবে, পানি সরাসরি মোটরে ঢুকে পড়লে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাই পানির চাপ কম রেখে দূর থেকে স্প্রে করুন এবং সরাসরি সার্কিট বোর্ডের দিকে পানি দিবেন না। যারা অভিজ্ঞ নন, তারা এই কাজটি টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে করানোই ভালো।


আউটডোর ইউনিটের পাশে যদি গাছপালা বা আবর্জনা জমে থাকে, তাহলে তা সরিয়ে দিন। কারণ এসব কারণে ইউনিটের বাতাস চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। এছাড়া ফ্যান ব্লেডে ধুলো জমে গেলে সেটিও পরিষ্কার করতে হবে। ব্লেড ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করুন এবং পরে একটি শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। বাইরের অংশটি মাসে অন্তত একবার পরিষ্কার রাখলে এসির কর্মক্ষমতা বজায় থাকে এবং এটি দীর্ঘদিন ভালো সার্ভিস দেয়। যারা শহরের ধূলাবালিময় এলাকায় থাকেন, তাদের জন্য প্রতি সপ্তাহে একবার পরিষ্কার করাই ভালো।

এসি পরিষ্কার করার জন্য কি পানি স্প্রে করা যায়?

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা উপরে আলোচনা করে এসেছি, এসি কিভাবে পরিষ্কার করতে হয় বা এসি পরিষ্কার করার নিয়ম সম্পর্কে। চলুন এবার জেনে আসা যাক, এসি পরিষ্কার করার জন্য পানি স্প্রে করা যায় কি যায় না? এসি পরিষ্কার করার সময় অনেকেই প্রশ্ন করেন যে পানি ব্যবহার করা নিরাপদ কিনা। উত্তর হলো, হ্যাঁ- তবে সতর্কতার সঙ্গে। কারণ এসির ভিতরে বিদ্যুতচালিত অংশ থাকে, যা পানির সংস্পর্শে এলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

যদি আপনি এসির বাইরের অংশ বা ফিন পরিষ্কার করতে চান তাহলে হালকা পানি স্প্রে করা যায়। তবে তা অবশ্যই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে করতে হবে। স্প্রে করার সময় এমনভাবে করতে হবে যেন পানি ভিতরে প্রবেশ না করে, বিশেষ করে সার্কিট বা মোটরের অংশে। এসির ভিতরের অংশ পরিষ্কারের সময় পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে। ফিন ও কয়েল পরিষ্কার করতে স্পেশাল ক্লিনার বা হালকা ভেজা কাপড় ব্যবহার করা উত্তম। সরাসরি পানি স্প্রে করা এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এতে যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

যদি আপনি ব্লোয়ার বা ফ্যান পরিষ্কার করতে চান, তাহলে শুকনো ব্রাশ ব্যবহার করাই নিরাপদ। কেউ কেউ হালকা পানি বা ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করেন তবে সেক্ষেত্রে এসির অংশ খুলে তা শুকিয়ে নেওয়া জরুরি। বাজারে এখন এমন কিছু ক্লিনিং স্প্রে পাওয়া যায় যেগুলো এসির যন্ত্রাংশের জন্য নিরাপদ এবং এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যেকোনো ধরনের তরল ব্যবহার করার আগে ব্যবহার নির্দেশনা ভালোভাবে পড়ে নেওয়া উচিত। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজন হলে টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিন।

স্প্লিট এসির ফিল্টার পরিষ্কার করার সহজ নিয়ম

স্প্লিট এসির ফিল্টার হলো সেই অংশ যা বাতাস থেকে ধুলো ছেঁকে ভিতরের দিকে পাঠায়। এই ফিল্টার যদি পরিষ্কার না থাকে তাহলে এসির কার্যকারিতা কমে যায় এবং ঘরের বাতাসে ধুলা মিশে যায়। তাই নিয়মিত ফিল্টার পরিষ্কার করা জরুরি। প্রথমে এসির ঢাকনাটি খুলে ফেলুন। বেশিরভাগ মডেলে ফিল্টার সহজেই খুলে আসে। ফিল্টার সাধারণত প্লাস্টিক বা ফাইবারের তৈরি হয়। এটি খুলে বাইরে এনে একটি শুকনো ব্রাশ দিয়ে প্রথমে ধুলো ঝাড়ুন। তারপর পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে কিছুক্ষণ রাখুন।

ভিজিয়ে রাখার পর একটি হালকা সাবান ব্যবহার করে আলতোভাবে পরিষ্কার করুন। ফিল্টার অনেক সময় তেল-ময়লায় আটকে যায়, তাই সাবান বা হালকা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। তবে কোনওভাবে জোরে ঘষবেন না, এতে ফিল্টার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন এবং ছায়ায় শুকাতে দিন। কখনোই ফিল্টার রোদে শুকাবেন না কারণ এতে ফিল্টারের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

ফিল্টার সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে আবার সেটি এসিতে লাগিয়ে দিন এবং ঢাকনাটি বন্ধ করুন। প্রতিমাসে অন্তত একবার ফিল্টার পরিষ্কার করলে এসি অনেকদিন ভালো থাকবে এবং ঘরের বাতাসও থাকবে বিশুদ্ধ ও ঠান্ডা।

উইন্ডো এসি পরিষ্কার করার পদ্ধতি

উইন্ডো এসি আমাদের অনেকের বাসায় ব্যবহৃত হয় কারণ এটি সহজলভ্য এবং ইনস্টল করাও তুলনামূলকভাবে সহজ। তবে নিয়মিত পরিষ্কার না করলে এর কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং বিদ্যুৎ বিল বাড়ে। তাই উইন্ডো এসি পরিষ্কার করার সঠিক পদ্ধতি জানা খুব জরুরি। চলুন ধারাবাহিকভাবে জেনে নেওয়া যাক, উইন্ডো এসি পরিষ্কার করার পদ্ধতি সম্পর্কে।

  • প্রথমে এসিটি খুলে নিন। খুলতে গেলে অবশ্যই এসি বন্ধ করে মূল সুইচ অফ করতে হবে। এরপর ফ্রন্ট কভার খুলে ফিল্টার বের করে নিন। এটি সাধারণত প্লাস্টিকের তৈরি হয় এবং খুব সহজেই ধুয়ে ফেলা যায়। পরিষ্কার করার জন্য হালকা গরম পানিতে কিছু ডিটারজেন্ট মিশিয়ে নিতে পারেন।
  • ফিল্টার ভালোভাবে শুকিয়ে তারপর পুনরায় স্থাপন করুন। এরপর এসি'র ভিতরের কনডেনসার কয়েল পরিষ্কার করতে হবে। এই কয়েল সাধারণত ধুলা এবং ফাঙ্গাসে আচ্ছন্ন থাকে। একটি সফট ব্রাশ দিয়ে কয়েল আলতোভাবে পরিষ্কার করতে পারেন। এরপর শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে।
  • এরপর এসির বাইরের অংশ পরিষ্কার করতে হবে। বাইরের অংশে সাধারণত পাখা বা ফ্যান থাকে যেটি গরম বাতাস বাইরে বের করে দেয়। এই অংশটি পরিষ্কার না থাকলে এসি যথাযথভাবে ঠান্ডা করতে পারবে না। শুকনা কাপড় এবং প্রয়োজনে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন।
  • সবশেষে, এসি চালু করে চেক করুন ঠিকমতো কাজ করছে কি না। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তবে আপনি সফলভাবে উইন্ডো এসি পরিষ্কার করতে পেরেছেন।

আমি কি নিজে এসি পরিষ্কার করতে পারি?

অনেকেই ভাবেন, এসি পরিষ্কার করা বুঝি কেবল একজন দক্ষ টেকনিশিয়ানের কাজ। তবে বাস্তবে, আপনি নিজেও কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে এসি পরিষ্কার করতে পারেন। তবে এটি করতে গেলে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। নিচে আমরা চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করেছি যা আপনাকে সাহায্য করবে নিজে এসি পরিষ্কার করতে।

ফিল্টার পরিষ্কার করা:

এসির ফিল্টার হচ্ছে ধুলা এবং ময়লা আটকানোর প্রধান অংশ। এটি নিয়মিত পরিষ্কার না করলে এসির বাতাসে দুর্গন্ধ এবং জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফিল্টার সাধারণত সহজেই খুলে ফেলা যায়। প্রথমে এসি বন্ধ করে দিন, তারপর ফ্রন্ট কভার খুলে ফিল্টার বের করে নিন। একটি বালতিতে হালকা গরম পানি এবং কিছু হালকা ডিটারজেন্ট মিশিয়ে ফিল্টারটি ডুবিয়ে রাখুন ১৫-২০ মিনিট। এরপর একটি নরম ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করুন এবং রোদে শুকিয়ে তারপর আবার বসিয়ে দিন।

কনডেনসার কয়েল পরিষ্কার করা:

কনডেনসার কয়েল হচ্ছে এসি'র এমন একটি অংশ যেটি বাতাস ঠান্ডা করার জন্য দায়ী। এটি ধুলা-ময়লায় আটকে গেলে এসি সঠিকভাবে ঠান্ডা করতে পারে না। আপনি একটি নরম ব্রাশ এবং শুকনা কাপড় দিয়ে এই কয়েল পরিষ্কার করতে পারেন। খুব বেশি চাপ দিয়ে ঘষবেন না, কারণ এতে কয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ড্রেনেজ সিস্টেম পরীক্ষা করা:

এসি ব্যবহারের সময় পানি জমে এবং সেই পানি নির্গত হওয়ার জন্য একটি ড্রেন পাইপ থাকে। এটি বন্ধ হয়ে গেলে এসি থেকে পানি পড়তে শুরু করে। আপনি নিজেই ড্রেন পাইপ খুলে দেখতে পারেন এবং প্রয়োজনে হালকা প্রেসার দিয়ে পানি চালিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন। একটি পাতলা তার অথবা পাইপ ক্লিনার দিয়েও এটি পরিষ্কার করা যায়।

বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা:

নিজে এসি পরিষ্কার করতে গেলে অবশ্যই বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। কখনোই এসি চালু থাকা অবস্থায় পরিষ্কার করা যাবে না। সবসময় প্রধান সুইচ বন্ধ করে পরিষ্কার কাজ শুরু করুন। যদি মনে হয় কোনও অংশে স্পার্কিং বা অস্বাভাবিক কিছু হচ্ছে, তবে সাথে সাথে কাজ বন্ধ করুন এবং একজন টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিন।

এসি পরিষ্কার করার সময় যে বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিত

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা উপরে কিন্তু বিস্তারিতভাবে জেনে এসেছি, এসি কিভাবে পরিষ্কার করতে হয় বা এসি পরিষ্কার করার নিয়ম সম্পর্কে। এখন আমরা আলোচনা করবো এবং জানবো, এসি পরিষ্কার করার সময় যে বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিত সে সম্পর্কে। এসি পরিষ্কার করতে গিয়ে অনেকেই কিছু সাধারণ ভুল করে থাকেন যেগুলো এসির ক্ষতির কারণ হতে পারে। এসি একটি সংবেদনশীল যন্ত্র এবং অতি যত্নের প্রয়োজন হয়। নিচে আমরা এমন চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি যেগুলো এসি পরিষ্কারের সময় অবশ্যই এড়িয়ে চলা উচিত।

এসি-পরিষ্কার-করার-সময়-যে-বিষয়গুলো-এড়িয়ে-যাওয়া-উচিত

  • পানি সরাসরি স্প্রে করা: অনেকেই মনে করেন যে, এসির ভিতরের অংশে পানি স্প্রে করলে সেটি ভালোভাবে পরিষ্কার হবে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এসির ভিতরের ইলেকট্রিকাল অংশগুলো পানির সংস্পর্শে এলে শর্টসার্কিট হতে পারে। ফলে এসি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কখনোই সরাসরি পানি ব্যবহার করবেন না। বরং একটি স্যাঁতসেঁতে কাপড় ব্যবহার করুন।
  • ধারালো বস্তু দিয়ে পরিষ্কার করা: কিছু অংশে জমে থাকা ময়লা তুলতে গিয়ে ধারালো বস্তু ব্যবহার করা মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এতে কয়েল, ফ্যান বা অন্যান্য অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বরং একটি নরম ব্রাশ বা টুথব্রাশ ব্যবহার করুন।
  • এসি চালু থাকা অবস্থায় পরিষ্কার করা: এটি সবচেয়ে বড় ভুল। এসি পরিষ্কারের সময় অবশ্যই মেইন সুইচ বন্ধ করে কাজ শুরু করতে হবে। এসি চালু থাকা অবস্থায় পরিষ্কার করলে বৈদ্যুতিক শক বা শর্টসার্কিট হতে পারে।
  • অতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার: অনেকেই বাজারের বিভিন্ন ক্লিনার বা কেমিক্যাল ব্যবহার করেন যা এসির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এইসব কেমিক্যালের প্রভাবে এসির প্লাস্টিক অংশ ভেঙে যেতে পারে বা কয়েলে জং ধরতে পারে। তাই হালকা ডিটারজেন্ট এবং পানি ব্যবহার করাই নিরাপদ।

কতদিন পর পর এসি পরিষ্কার করা উচিত?

এসি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদ্যুতিক যন্ত্র, যা গরমের দিনে আমাদের আরামদায়ক রাখে। কিন্তু নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করলে এর কার্যকারিতা কমে যায় এবং বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়। তাই সময়মতো এসি পরিষ্কার করা অপরিহার্য। সাধারণত বিশেষজ্ঞদের মতে, এসি'র ফিল্টার প্রতি দুই সপ্তাহে একবার এবং সম্পূর্ণ ইউনিট প্রতি তিন মাসে একবার পরিষ্কার করা উচিত।

যদি আপনার বাড়িতে ধুলাবালির পরিমাণ বেশি হয় বা আপনি শহরের ব্যস্ত রাস্তাঘাটের পাশে থাকেন, তাহলে পরিষ্কারের ফ্রিকোয়েন্সি আরও বাড়ানো উচিত। কারণ এই ধুলাবালি এসির ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং ঠান্ডা করার ক্ষমতা হ্রাস করে। এছাড়াও, পশু পালনের বাড়িতে আরও ঘন ঘন পরিষ্কার করাই উত্তম। অফিস, দোকান বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এসি প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে চালু থাকে। এই ক্ষেত্রে প্রতি মাসে একবার পুরো এসি ইউনিট পরিষ্কার করা সবচেয়ে ভালো। শুধু ফিল্টার নয়, কনডেনসার, ড্রেন পাইপ এবং বাইরের ইউনিটও নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

কিছু কিছু এসি মডেলে ফিল্টার পরিষ্কারের জন্য নির্দেশনা নিজে থেকেই দেয়। এই ধরনের এসিগুলোতে একটি সংকেত বা আলো জ্বলে ওঠে যা ফিল্টার পরিষ্কারের সময় নির্দেশ করে। যদি আপনার এসি এমন হয়, তাহলে সেই সংকেত অনুসরণ করাই উত্তম। সবশেষে, যদি আপনি নিশ্চিত না হন কখন এসি পরিষ্কার করতে হবে, তবে বছরে অন্তত দুইবার পেশাদার টেকনিশিয়ান দ্বারা পরিষ্কার করিয়ে নিন। এটি আপনার এসিকে দীর্ঘস্থায়ী এবং কার্যকর রাখবে।

এসি পরিষ্কার না করলে কী সমস্যা হয়?

অনেকেই ভাবেন, এসি একবার ইনস্টল করলেই সেটা দীর্ঘদিন নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করবে। কিন্তু নিয়মিত পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করলে এসি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, এটি স্বাস্থ্য ও বিদ্যুৎ খরচ-  উভয় দিক থেকেই ক্ষতিকর হতে পারে। চলুন আপনাদের জানানো যাক, এসি পরিষ্কার না করলে কী সমস্যা হয় সে সম্পর্কে।

  • ঠান্ডা করার ক্ষমতা কমে যায়: ফিল্টার, কনডেনসার এবং অন্যান্য অংশে ময়লা জমে গেলে বাতাস সঠিকভাবে চলাচল করতে পারে না। এর ফলে এসি তার স্বাভাবিক ঠান্ডা করার ক্ষমতা হারায় এবং ঘর ঠান্ডা হতে বেশি সময় লাগে।
  • বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যায়: ময়লা জমে গেলে এসি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি শক্তি ব্যবহার করে ঘর ঠান্ডা করতে। এর ফলে বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যায়। পরিষ্কার এসি কম সময়ে ঘর ঠান্ডা করতে পারে, ফলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।
  • দুর্গন্ধ এবং অ্যালার্জি সমস্যা: ফিল্টারে জমে থাকা ধুলা ও জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে এসি থেকে দুর্গন্ধ আসতে পারে। অনেক সময় এতে অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট এবং ত্বকের সমস্যা হতে পারে, বিশেষত শিশু এবং প্রবীণদের মধ্যে।
  • যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি: ড্রেনেজ সিস্টেম বন্ধ হয়ে গেলে এসি থেকে পানি পড়া শুরু করে। এছাড়া ধুলা-ময়লার কারণে ফ্যান, মোটর বা কনডেনসার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলস্বরূপ, পুরো এসি সেটটি মেরামত বা পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে।
  • এসি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়: পরিষ্কার না থাকলে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এসির ওপর এবং সেটি মাঝেমধ্যে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমনকি অনেক সময় এসির সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ করে যায়, যা ঝুঁকিপূর্ণ।

এসি রক্ষণাবেক্ষণের কিছু টিপস

আমরা উপরে জেনে আসলাম, এসি পরিষ্কার না করলে কী সমস্যা হয় তা সম্পর্কে। চলুন এবার জেনে আসা যাক, এসি রক্ষণাবেক্ষণে আমাদের করনীয়। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এসির দীর্ঘস্থায়ীত্ব নিশ্চিত করে এবং এর কর্মক্ষমতা বজায় রাখে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হলো যা মেনে চললে আপনি আপনার এসিকে আরো কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।

  • নিয়মিত ফিল্টার পরিষ্কার করুন: প্রতি দুই সপ্তাহে একবার ফিল্টার খুলে হালকা গরম পানি ও ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিন এবং শুকিয়ে তারপর বসান। এটি এসির বাতাসকে পরিষ্কার রাখবে।
  • তাপমাত্রা নির্ধারণে সচেতন থাকুন: অতিরিক্ত ঠান্ডা করার জন্য তাপমাত্রা খুব নিচে নামানো থেকে বিরত থাকুন। ২৪-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এসি চালালে এসি কম চাপ নিয়ে কাজ করবে এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।
  • বাইরের ইউনিট ছায়ায় রাখুন: যদি সম্ভব হয়, তাহলে এসির বাইরের অংশটি এমন জায়গায় রাখুন যেখানে সরাসরি রোদ পড়ে না। অতিরিক্ত গরমে বাইরের ইউনিট অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় এবং এসির কার্যক্ষমতা কমে যায়।
  • বছরে অন্তত একবার টেকনিশিয়ান দিয়ে সার্ভিস করান: নিজে পরিষ্কার করলেও বছরে অন্তত একবার একজন পেশাদার টেকনিশিয়ান ডেকে সম্পূর্ণ এসি চেকআপ ও পরিষ্কার করিয়ে নেওয়া উচিত। তারা এসির গ্যাস, কনডেনসার, ফ্যান, ড্রেন সিস্টেম সবকিছু ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেবেন।
  • এসি চালু অবস্থায় দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন: এসি চালু থাকা অবস্থায় ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখলে ঠান্ডা বাতাস বাইরে বের হয় না, ফলে এসি কম সময়ে ঘর ঠান্ডা করতে পারে। এতে বিদ্যুৎ খরচও কমে যায়।

শেষ মন্তব্য

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা আজকের আর্টিকেলের শেষ অংশে চলে এসেছি এবং এসি কিভাবে পরিষ্কার করতে হয় বা এসি পরিষ্কার করার নিয়ম’এর শেষ মন্তব্য হিসেবে আমরা বলতে পারি যে, এয়ার কন্ডিশনার বা এসি আজকাল শুধু বিলাসিতা নয় বরং আমাদের আধুনিক জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গ্রীষ্মকালে আরামের নিঃশ্বাস নিতে, কর্মপরিবেশকে স্বস্তিদায়ক রাখতে, কিংবা ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এসির গুরুত্ব অপরিসীম। তবে শুধুমাত্র এসি ব্যবহার করলেই চলবে না- তার কার্যকারিতা বজায় রাখতে নিয়মিত এবং সঠিকভাবে পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করাটাও সমান জরুরি।

আপনার এসি যেন দীর্ঘদিন কার্যকর থাকে এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারে, সে জন্যে আপনাকে জানতে হবে কিভাবে এসি পরিষ্কার করতে হয় এবং পরিষ্কারের পূর্বে কোন বিষয়গুলো জানা জরুরি। শুধু তাই নয়, পরিষ্কারের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে পাখনার ধুলো পরিষ্কার, ভেতরের ও বাইরের অংশের যত্ন, এমনকি ফিল্টার পরিষ্কারের সঠিক নিয়ম- সব কিছুই সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে স্প্লিট ও উইন্ডো এসির ভিন্ন ভিন্ন ধরন অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পরিষ্কার করা উচিত।

অনেকে প্রশ্ন করেন, নিজে কি এসি পরিষ্কার করা সম্ভব? - হ্যাঁ, সম্ভব, তবে সাবধানতা এবং সচেতনতা অপরিহার্য। কখনই চলমান এসি পরিষ্কার করবেন না, বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা সর্বাগ্রে নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে এড়িয়ে চলতে হবে পানি সরাসরি স্প্রে করা, ধারালো বস্তু ব্যবহার, কিংবা ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহারের মতো ভুলগুলো। এগুলো থেকে সচেতন না থাকলে আপনার এসি শুধু নষ্টই হবে না, বরং জীবনের জন্যও হতে পারে বিপজ্জনক।

আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো, কতদিন পর পর এসি পরিষ্কার করা উচিত? এর উত্তর নির্ভর করে আপনার ব্যবহারের ধরন, বাসস্থানের পরিবেশ, ধুলাবালির পরিমাণ ও আবহাওয়ার উপর। তবে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি দুই সপ্তাহে ফিল্টার পরিষ্কার এবং প্রতি তিন মাসে পুরো এসি পরিষ্কার করাটাই সর্বোত্তম।

যদি এসি নিয়মিত পরিষ্কার না করা হয়, তাহলে এর ফলে দেখা দিতে পারে ঠান্ডা হওয়ার ক্ষমতা হ্রাস, অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ খরচ, দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস, এমনকি স্বাস্থ্যঝুঁকি পর্যন্ত। তাই এসব সমস্যা এড়াতে অবশ্যই পালন করা উচিত কিছু ব্যবহারিক রক্ষণাবেক্ষণ টিপস- যেমন, এসি ব্যবহারের মাঝে কিছুটা বিশ্রাম দেওয়া, সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করা, এবং সময়মতো পেশাদার টেকনিশিয়ানের সহায়তা নেওয়া।

সবশেষে বলা যায়, এসি পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কোনো অতিরিক্ত ঝামেলা নয় বরং একটি নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ। আপনি যদি নিয়মিত এবং সঠিকভাবে এসির যত্ন নেন, তবে এটি শুধু আপনার ঘরের বাতাস ঠান্ডা রাখবে না, বরং আপনার স্বাস্থ্যের সুরক্ষা, মানিব্যাগের নিরাপত্তা এবং যন্ত্রটির দীর্ঘস্থায়ীত্বও নিশ্চিত করবে। একবার এই অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে, আপনি কেবল এসির সেবা নেবেন না- বরং এসিকেও সঠিকভাবে সেবা করার সুযোগ দেবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

BLOGGER BD-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url