মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি?
শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা নিয়ে বলা শেষ করা যাবেনা। শিক্ষা শুধু
বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এখন আমাদের হাতের মুঠো ফোনে হতে পারে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।
প্রযুক্তির এই যুগে মোবাইল ফোন কেবল যোগাযোগের মাধ্যমই নয়, এটি হয়ে উঠেছে
জ্ঞানের একটি বিশাল ভান্ডার।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা সহজ ও সুন্দর ভাষায় জানবো কিভাবে মোবাইল ফোন শিক্ষা
ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-সবাইকে সাহায্য করছে। তাই চলুন জেনে নেই।
পোস্ট সূচিপত্র: শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা
শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা
বর্তমানে মোবাইল ফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠেছে। একসময় যা শুধু
যোগাযোগের মাধ্যম ছিল, আজ তা শিক্ষাক্ষেত্রেও এক অসাধারণ বিপ্লব নিয়ে এসেছে।
প্রযুক্তির এই অগ্রগতির ফলে শিক্ষা পদ্ধতিতেও এসেছে আমুল পরিবর্তন। মোবাইল ফোন
এখন আর কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি জ্ঞান অর্জনের এক শক্তিশালী হাতিয়ার।
শিক্ষার্থীরা এর মাধ্যমে সহজেই বিভিন্ন তথ্য খুঁজে পাচ্ছে, অনলাইনে ক্লাস করতে
পারছে এবং শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারছে। মোবাইল ফোন শিক্ষার ধারণাকে আরো
বিস্তৃত করেছে, যেখানে শ্রেণীকক্ষের চার দেয়ালের বাইরেও শিক্ষার সুযোগ তৈরি
হয়েছে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা শিক্ষার্থীদের কাছে মোবাইল ফোন এখন একটি
পোর্টেবল লাইব্রেরির মতো, যেখানে তারা যখন খুশি তখন প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে
পারে। এটি তাদের গবেষণার কাজে সাহায্য করে, বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জনে
সহায়তা করে। বিশেষ করে, যে সকল শিক্ষার্থীর কাছে পর্যাপ্ত বই বা রিসোর্স নেই,
তাদের জন্য মোবাইল ফোন একটি আশীর্বাদস্বরূপ। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের উপকার করছে
না, শিক্ষকদেরও নতুন নতুন শিক্ষাদান পদ্ধতি আবিষ্কারে সহায়তা করছে। শিক্ষকরা এখন
শিক্ষার্থীদের জন্য আরো আকর্ষণীয় এবং ইন্টারেক্টিভ কন্টেন্ট তৈরি করতে পারছেন,
যা শিক্ষার মান উন্নত করছে। মোবাইল ফোনের সঠিক ব্যবহার শিক্ষার ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল
করতে পারে।
তবে, মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকলেও, এর ইতিবাচক দিকগুলো
অস্বীকার করার উপায় নেই। আমাদের শুধু জানতে হবে কিভাবে এর সঠিক ব্যবহার করা
যায়। প্রযুক্তির এই বিস্ময়কর আবিষ্কারকে শিক্ষাক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে আমরা
শিক্ষার্থীদের জন্য আরো ফলপ্রসূ এবং আনন্দদায়ক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে পারি।
এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধু জ্ঞান অর্জন করবে না, বরং ডিজিটাল যুগে নিজেদের
মানিয়ে নিতেও শিখবে। মোবাইল ফোন শুধুমাত্র একটি ডিভাইস নয়, এটি শিক্ষার
অগ্রযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ সোপান।
ভবিষ্যতে মোবাইল ফোনের ভূমিকা শিক্ষাক্ষেত্রে আরো বাড়বে বলে আশা করা যায়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মতো প্রযুক্তি মোবাইল ফোনের সাথে
যুক্ত হয়ে শিক্ষাকে আরো নতুন মাত্রা দেবে। তাই, মোবাইল ফোনকে শিক্ষার শত্রু না
ভেবে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে
আমরা একটি শিক্ষিত ও উন্নত জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারি।
তথ্যের সহজলভ্যতা ও অ্যাক্সেস
আমরা উপরে হালকা করে জেনে আসলাম শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা সম্পর্কে।
তবে আমরা আরো বেশ কয়েকটি বিষয় বিস্তারভাবে জানবো। চলুন তবে সেগুলোর মধ্য থেকে এখন
জেনে আসি তথ্যের সহজলভ্যতা ও অ্যাক্সেস সম্পর্কে।
প্রযুক্তির এই দ্রুতগতির যুগে মোবাইল ফোন এখন আর কেবল যোগাযোগের একটি মাধ্যম নয়,
বরং তথ্যের ভান্ডারে প্রবেশের এক অসাধারণ চাবিকাঠি হয়ে উঠেছে। আগে যেসব তথ্য
জানতে লাইব্রেরি যেতে হতো কিংবা শিক্ষকের সাহায্য নিতে হতো, এখন তা হাতের মুঠোয়
পাওয়া যায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। একজন শিক্ষার্থী যখন নিজের পড়ালেখা সম্পর্কে
কোনো জটিল বিষয় বুঝতে পারছে না, তখন সে গুগল সার্চ করে, ইউটিউবের ভিডিও দেখে
কিংবা বিভিন্ন অ্যাপে সহজভাবে সেই তথ্য জানতে পারছে। এটি শিক্ষার সুযোগকে আরো
বিস্তৃত ও কার্যকর করেছে। শিক্ষার এই নতুন ধারায় মোবাইল ফোন তথ্য পাওয়ার পথ সহজ
করে দিয়েছে, যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী নিজের সময় ও চাহিদা অনুযায়ী শেখার কাজ
চালিয়ে যেতে পারছে। এটি বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদ
স্বরূপ।
বর্তমানে যেসব শিক্ষার্থী ইন্টারনেট-সক্ষম মোবাইল ব্যবহার করে, তারা বইয়ের বাইরে
আরো নানা ধরনের উৎস থেকে শেখার সুযোগ পায়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলা ব্যাকরণে কোনো
নির্দিষ্ট টপিক যদি বোঝা কঠিন মনে হয়, তাহলে ইউটিউবে টাইপ করলেই বিস্তারিত ও সহজ
ভাষায় সেই বিষয় বোঝানোর অনেক ভিডিও পাওয়া যায়। ঠিক একইভাবে, গণিত, বিজ্ঞান কিংবা
ইংরেজির গ্রামার বিষয়ে অগণিত ওয়েবসাইটে বিষয়ভিত্তিক তথ্য সহজভাবে উপস্থাপন করা
আছে। আগে এইসব তথ্য খুঁজে পেতে হয়তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইব্রেরিতে ঘাঁটাঘাঁটি করতে
হতো, কিন্তু এখন কয়েক সেকেন্ডেই সেই তথ্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে মোবাইলের সাহায্যে।
এই সুবিধা শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ বাড়ায় এবং তথ্য অন্বেষণকে অনেক সহজ করে
তোলে।
তথ্য পাওয়ার এই সহজ পদ্ধতি একজন শিক্ষার্থীকে কেবল একমাত্র বইয়ের জগতে সীমাবদ্ধ
রাখে না বরং বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জ্ঞান আহরণের সুযোগ করে দেয়। এতে তার চিন্তার
গভীরতা বাড়ে, সমালোচনামূলক বিশ্লেষণের ক্ষমতা বাড়ে এবং বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলো
বুঝতে ও সমাধান করতে সে প্রস্তুত হয়। যেমন, একটি সামাজিক সমস্যা নিয়ে যখন একজন
শিক্ষার্থী একটি প্রজেক্ট তৈরি করে, তখন সে বিভিন্ন সংবাদপত্র, গবেষণাপত্র, ব্লগ
ও ভিডিওর সাহায্যে একটি পরিপূর্ণ ধারণা তৈরি করতে পারে। এই ধরনের বহুমুখী
তথ্যভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি শিক্ষার্থীর মধ্যে বাস্তব অভিজ্ঞতার ছোঁয়া এনে দেয়, যা
পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের বাইরেও ব্যক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা এখানে আরো একবার প্রকাশ পায় যখন দেখা যায়,
একজন শিক্ষার্থী তার নিজের প্রয়োজনমাফিক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে শেখার সুযোগ
পাচ্ছে। আগে যেখানে শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত, এখন
মোবাইল ফোনের কারণে গ্রামাঞ্চলেও তথ্যভিত্তিক শিক্ষা সমানভাবে পৌঁছে যাচ্ছে। শুধু
পাঠ্যবইয়ের মধ্যেই নয়, বরং অতিরিক্ত প্রশ্ন, মডেল টেস্ট, উত্তরপত্র বিশ্লেষণ,
এমনকি শিক্ষকদের ভিডিও লেকচারও এখন খুব সহজে অ্যাক্সেস করা যায়। এইসব
তথ্যপ্রাপ্তির সহজতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং তারা স্বাধীনভাবে
শেখার ক্ষমতা অর্জন করে। সব মিলিয়ে, তথ্যের সহজলভ্যতা শিক্ষাকে করেছে অনেক বেশি
বাস্তবমুখী, সময়োপযোগী এবং শিক্ষার্থীদের নিজের গতিতে শেখার সুযোগ এনে দিয়েছে।
অনলাইন ক্লাস ও ভার্চুয়াল শিক্ষা
বর্তমান যুগে শিক্ষার ধরন অনেকটাই বদলে গেছে। আগের দিনে একটি নির্দিষ্ট সময়ে
নির্দিষ্ট শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত না হলে ক্লাস মিস হয়ে যেত, কিন্তু এখন অনলাইন
ক্লাসের কারণে এই সীমাবদ্ধতা আর নেই। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী
যেকোনো স্থান থেকে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই ক্লাসে অংশ নিতে পারছে। বিশেষ করে
কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে ভার্চুয়াল শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে
দেখিয়ে দিয়েছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান শুরু করে, এবং
মোবাইল ফোন ছিল সেই শিক্ষার প্রধান মাধ্যম। এখনো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইন ও
অফলাইন ক্লাসের সমন্বয়ে হাইব্রিড শিক্ষাব্যবস্থা চালু রেখেছে। এই পদ্ধতিতে একজন
শিক্ষার্থী বাড়িতে বসেই ক্লাস করতে পারছে, যা সময়, যাতায়াত ও খরচ বাঁচিয়ে দিচ্ছে।
একজন শিক্ষক মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ক্লাস নিচ্ছেন, এবং শিক্ষার্থীরা চ্যাট বা
ভয়েস কলের মাধ্যমে সরাসরি প্রশ্ন করে উত্তর পাচ্ছে। এই ইন্টার্যাকটিভ পদ্ধতি
শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনেক বেশি সহজ, নমনীয় এবং ফলপ্রসূ করে তুলেছে।
ভার্চুয়াল শিক্ষায় মোবাইল ফোন শুধু ক্লাস করার মাধ্যম নয়, বরং তা একটি পূর্ণাঙ্গ
শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস শেষে ক্লাসের রেকর্ডিং
দেখে পুনরায় পড়া ঝালাই করতে পারে। যারা একবারে বুঝে উঠতে পারে না, তারা রেকর্ডিং
বারবার দেখে সহজে বুঝতে পারে। আবার অনেক সময় শিক্ষকরা ক্লাস শেষে গুগল ফর্ম, কুইজ
বা এসাইনমেন্ট পাঠিয়ে দেন, যা শিক্ষার্থীরা মোবাইলে সম্পন্ন করে জমা দিতে পারে।
ভার্চুয়াল শিক্ষার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও ঢাকার কিংবা
বিদেশের শিক্ষকদের ক্লাসে যুক্ত হতে পারছে, যা আগে কল্পনাতেও ছিল না। অনেক সময়
পড়াশোনার পাশাপাশি কেউ চাকরি বা অন্য কাজ করে, তাদের জন্য এই ভার্চুয়াল ক্লাস যেন
আশীর্বাদ। তারা নিজের সুবিধামতো সময় বেছে নিয়ে অনলাইনে ক্লাস করে, আর মোবাইল
ফোনের মাধ্যমে সবকিছু হাতে-কলমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল
ফোনের উপকারিতা এখানে আরো গভীরভাবে অনুভব করা যায়, যেখানে সময় ও স্থানের বাঁধা
দূর করে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে শিক্ষা গ্রহণের অবাধ সুযোগ এনে দিচ্ছে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার
বর্তমান যুগের শিক্ষা পদ্ধতিতে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এখন কেবল লিখিত নয়, অডিও ও ভিডিওর মাধ্যমেও
শিক্ষা গ্রহণ করছে। এই মাল্টিমিডিয়া উপাদানগুলোর কারণে শেখার পদ্ধতি অনেক বেশি
বাস্তবসম্মত ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। আগে যেখানে শিক্ষক শুধুমাত্র ব্ল্যাকবোর্ডে
চিত্র এঁকে কোনো বিষয় বোঝানোর চেষ্টা করতেন, এখন মোবাইলে ইউটিউব বা শিক্ষামূলক
অ্যাপে একই বিষয়ের ওপর ৩ডি এনিমেশন, বাস্তব ভিডিও এবং শব্দসহ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
যেমন, বিজ্ঞানের “মানবদেহের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া” বা ভূগোলের “ভূমিকম্প কিভাবে
হয়”-এসব বিষয় পড়লে হয়তো শিক্ষার্থীদের কাছে জটিল মনে হতে পারে, কিন্তু ভিডিও দেখে
বা অ্যানিমেশন দেখে খুব সহজেই তা বুঝে নেওয়া যায়। এই মাল্টিমিডিয়া উপকরণ
শিক্ষার্থীদের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে, ফলে তাদের শেখার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়
এবং পড়া মুখস্থ না করেও বোঝার ক্ষমতা তৈরি হয়। মোবাইল ফোন হচ্ছে সেই মাধ্যম যার
মাধ্যমে এই মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট সহজেই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, আর
একারণেই বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় এর গুরুত্ব দিন দিন বেড়ে চলেছে।
শুধু ভিডিও বা অ্যানিমেশনই নয়, মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে
শিক্ষার্থীরা কুইজ, ইন্টার্যাকটিভ গেমস ও ভার্চুয়াল এক্সপেরিমেন্টেও অংশ নিতে
পারছে। একটি বিষয় যখন তারা শুধুমাত্র পড়ে, তখন তা একরকম বোঝে, কিন্তু যখন সেই
বিষয় নিয়ে একটি গেম খেলতে হয় বা ভার্চুয়ালি সেটি প্রয়োগ করে দেখতে হয়, তখন বিষয়টি
মস্তিষ্কে আরো ভালোভাবে স্থায়ী হয়। উদাহরণস্বরূপ, গণিতের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে
মোবাইলে গেম বা চ্যালেঞ্জ থাকে-যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তর দিতে হয়। এতে
শিক্ষার্থী যেমন উৎসাহিত হয়, তেমনি তার দ্রুত চিন্তা করার অভ্যাস তৈরি হয়। আবার
ইতিহাস বা সাহিত্যের পাঠ্যাংশ পড়ে একঘেয়ে লাগলেও, সেই বিষয়কে নাট্যরূপে বা
ডকুমেন্টারি ভিডিও হিসেবে দেখলে তা অনেক বেশি বোধগম্য ও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। এই
ধরণের মাল্টিমিডিয়া উপাদান শুধু শহরের নয়, গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের কাছেও সহজলভ্য
হচ্ছে মোবাইল ফোনের কারণে। এর ফলে, শহর-গ্রামের শিক্ষার ব্যবধানও কিছুটা কমে
আসছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা তাই কেবল পাঠ্যবইয়ের সীমায় সীমাবদ্ধ
নয়, বরং শ্রবণ, দৃষ্টিনির্ভর ও ব্যবহারিক শিক্ষার বিকাশেও এটি গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখছে।
স্ব-শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি
আজকের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন এসেছে-তা হলো শিক্ষার্থী নিজে থেকে শেখার
ক্ষমতা অর্জন করছে। এই স্ব-শিক্ষা বা Self-learning পদ্ধতি অনেকটাই নির্ভর করছে
মোবাইল ফোনের উপর। এখন এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা স্কুল বা কোচিং ছাড়াও
শুধুমাত্র মোবাইল ব্যবহার করে ঘরে বসে পড়াশোনা করছে এবং পরীক্ষায় ভালো ফলাফলও
করছে। এর মূল কারণ হলো মোবাইল ফোনে অসংখ্য অ্যাপ, ওয়েবসাইট ও ভিডিও টিউটোরিয়াল
সহজেই পাওয়া যায় যেগুলো একজন শিক্ষার্থী নিজে নিজে বুঝে নিতে পারে। তারা নিজেদের
সমস্যা অনুযায়ী নির্দিষ্ট টপিক খুঁজে নেয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ভিডিও দেখে বা
লেখাপড়া পড়ে সেটি আয়ত্ত করে। এই পদ্ধতিতে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা চাপের মধ্যে না
থেকে একজন শিক্ষার্থী নিজের গতিতে শেখার সুযোগ পায়, যেটা তার আত্মবিশ্বাস বাড়ায়
এবং শেখার প্রতি আগ্রহও বাড়ায়। আগে যেখানে ছাত্রদের শুধু শিক্ষক ও পাঠ্যবইয়ের উপর
নির্ভর করতে হতো, এখন তারা অনেক বেশি স্বাধীন হয়ে নিজের মতো করে জ্ঞান অর্জন
করছে।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্ব-শিক্ষার এই সুযোগ শুধু পড়ালেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই,
বরং নানা ধরনের দক্ষতা অর্জনেও কাজে লাগছে। যেমন, ইংরেজি শেখা, কম্পিউটার
প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং-এসব বিষয় একসময় শিখতে কোর্স করতে হতো
বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যেতে হতো। এখন এসব শেখা যাচ্ছে ইউটিউব, কৌরা, উদেমি বা
অনলাইন কোর্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে, আর এইসব কিছুই মোবাইল ফোনে সহজেই চালানো
যায়। এমনকি অনেক ছাত্র নিজেদের আগ্রহ অনুযায়ী নতুন কিছু শিখে তা থেকেই আয় করার
সুযোগও পাচ্ছে। অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং বা কনটেন্ট ক্রিয়েশনের
মতো ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে উঠছে। এই স্বাধীনভাবে শেখার সংস্কৃতি একজন শিক্ষার্থীকে
শুধু পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্যই প্রস্তুত করে না, বরং জীবনের জন্যও প্রস্তুত
করে তোলে। শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা এইখানে প্রকটভাবে প্রতিফলিত হয়,
যখন দেখা যায় একজন শিক্ষার্থী নিজের আগ্রহ অনুযায়ী নিজের সময় অনুযায়ী নিজের
ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
পড়ালেখায় মনোযোগ ধরে রাখার সহজ উপায়
পড়ালেখায় মনোযোগ ধরে রাখা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। অনেক সময়ই
দেখা যায় যে বই খুলে বসার পরেও মনোযোগ দ্রুত হারিয়ে যায়। এই সমস্যার একটি কার্যকর
সমাধান হতে পারে মোবাইল ফোনের স্মার্ট ব্যবহারে তৈরি শিক্ষামূলক অ্যাপ ও টেকনিক।
বর্তমানে এমন অনেক অ্যাপ ও সফটওয়্যার আছে যেগুলো সময় নির্ধারণ করে দিয়ে
শিক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পড়াশোনা করার জন্য উৎসাহিত করে। যেমন,
পোমোডোরো মেথড ভিত্তিক অ্যাপের মাধ্যমে ২৫ মিনিট পড়া ও ৫ মিনিট বিশ্রামের মাধ্যমে
মনোযোগ ধরে রাখা যায়। এসব অ্যাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পড়ার সময়
পরিকল্পনা করে রাখতে পারে, লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে এবং পড়ার অগ্রগতি
পর্যবেক্ষণ করতে পারে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে এইরকম মনোযোগ ধরে রাখার কৌশল অনেক
শিক্ষার্থীকে শৃঙ্খলিত পড়াশোনার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। একইভাবে, নোট
নেওয়ার জন্য বা অডিও-ভয়েস রেকর্ডিংয়ের জন্য ব্যবহৃত অ্যাপগুলো পড়ালেখার সময়
মনোযোগ হারানো রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
শুধু অ্যাপ নয়, পড়ার সময় প্রয়োজনীয় রিসোর্স সঙ্গে সঙ্গে খুঁজে পাওয়া বা ভিডিও
লেকচার দেখে শেখার সুবিধাও মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক। যখন কোনো বিষয় বুঝতে
অসুবিধা হয় তখন যদি সঙ্গে সঙ্গে তা সমাধান করা না যায়, তাহলে মনোযোগ হারিয়ে
যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গেই সেই সমস্যার
সমাধান পাওয়া গেলে শিক্ষার্থী মনোযোগ ধরে রাখতে পারে। এছাড়া অনেক সময় একটানা বই
পড়া বিরক্তিকর হয়ে গেলে ভিডিও দেখে বা অডিও শুনে পড়লে তা আবার মনোযোগ ফেরায়। আরো
একটি বড় সুবিধা হলো, মোবাইল ফোনে আপনি পড়ালেখার জন্য নির্দিষ্ট একটি পরিবেশ তৈরি
করে নিতে পারেন-যেখানে বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন, অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ রেখে
শুধুমাত্র শিক্ষামূলক কনটেন্ট অ্যাক্সেস করবেন। এইভাবে, মোবাইল ফোনকে কৌশলে কাজে
লাগিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পড়াশোনার সময়টাকে গুছিয়ে নিতে পারে। শিক্ষা ক্ষেত্রে
মোবাইল ফোনের উপকারিতা তাই এখানে প্রকাশ পায়, যখন এটি মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়ক হয়ে
উঠে, শেখাকে করে তোলে আরো ফলপ্রসূ।
পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা
পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ অনেক বেশি থাকে। কীভাবে অল্প সময়ে অনেক
বিষয় পড়তে হবে, কোথা থেকে কী পড়া দরকার-এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে সবাই। এই
পরিস্থিতিতে মোবাইল ফোন একটি কার্যকরী সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে। এখন বিভিন্ন
বোর্ড পরীক্ষার জন্য প্রশ্ন ব্যাংক, মডেল টেস্ট, বিগত বছরের প্রশ্নপত্র, সাজেশনসহ
নানা রিসোর্স মোবাইল ফোনেই পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীরা এসব কনটেন্ট ডাউনলোড করে বা
সরাসরি অনলাইনে পড়ে নিজের প্রস্তুতি নিতে পারে। এমনকি, অনেক অ্যাপ বা ওয়েবসাইট
রয়েছে যেখানে ক্লাসভিত্তিক সাজেশন এবং সময় অনুযায়ী প্রস্তুতির ক্যালেন্ডার দেওয়া
থাকে। এগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কীভাবে কোন বিষয় আগে পড়বে, কিভাবে রিভিশন
নেবে-সে বিষয়েও দিকনির্দেশনা পায়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এইসব উপকরণ সহজলভ্য হওয়ায়
একজন শিক্ষার্থী ঘরে বসেই পরীক্ষার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে পারে, যা আগে কেবল
কোচিং বা প্রাইভেট টিউটরের মাধ্যমে সম্ভব হতো।
পরীক্ষার আগে নিজেকে যাচাই করার জন্যও মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যায়। এখন অনেক
অনলাইন কুইজ ও মক টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে যেগুলো পরীক্ষার অনুরূপ পরিবেশ তৈরি করে
দেয়। এতে একজন শিক্ষার্থী তার দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে পারে এবং সেই
অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারে। আবার অনেক সময় পড়ার মধ্যে ভুল থাকলেও, অনলাইন ভিডিও
দেখে বা ব্লগ পড়েই সংশোধন করে নেওয়া সম্ভব। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো,
পরীক্ষার আগে সময় ব্যবস্থাপনা খুব জরুরি, যেটি মোবাইল ফোনের ক্যালেন্ডার,
রিমাইন্ডার এবং স্টাডি প্ল্যানার অ্যাপ ব্যবহার করে সহজেই করা যায়। এতে
ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন কোন বিষয় পড়ছে, কতটা সময় দিচ্ছে, কী রিভিশন বাকি-সবকিছুর
হিসাব রাখতে পারে। শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা এখানেও স্পষ্ট, কারণ
এটি পরীক্ষার প্রস্তুতিকে শুধু সহজ করে না, বরং পরিকল্পিত, সময়মাফিক ও ফলপ্রসূ
করে তোলে।
শিক্ষকদের জন্য একটি কার্যকর সহায়ক
বর্তমান যুগে শিক্ষকদের কাজ শুধু পাঠ্যবই পাঠ করানো নয়, বরং শিক্ষার্থীদের
মানসিক, প্রযুক্তিগত ও সামাজিক দক্ষতা গড়ে তোলাও একটি বড় দায়িত্ব। এই কাজে
মোবাইল ফোন একটি কার্যকর সহায়ক হিসেবে কাজ করে। শিক্ষকেরা মোবাইল ফোন ব্যবহার
করে ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য খুব সহজেই অনলাইনে খুঁজে পেতে পারেন। যেমন ধরুন,
একটি নির্দিষ্ট পাঠের জন্য ইন্টারনেট থেকে নতুন উদাহরণ, ব্যাখ্যা বা ভিডিও
টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। এর ফলে শিক্ষকেরা নিজের পাঠদানের ধরন আরো সমৃদ্ধ ও
আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। শুধু তাই নয়, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যেসব
আপডেটেড তথ্য দরকার, সেগুলোও শিক্ষক মোবাইল ব্যবহার করে সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারেন।
এছাড়াও, বিভিন্ন অ্যাপ যেমন ডিজিটাল রুটিন তৈরি, ছাত্রছাত্রীদের অগ্রগতি
মূল্যায়ন, অথবা ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট সংগঠিত রাখার জন্য শিক্ষকদের অনেক সহযোগিতা
করে। মোবাইল ফোনে পাওয়া ক্যালেন্ডার, নোটপ্যাড, এবং রিমাইন্ডার ব্যবহার করে
শিক্ষকরা তাদের দৈনন্দিন কাজ সহজে সংগঠিত করতে পারেন, ফলে পড়ানোর মান ও গতি উভয়ই
বাড়ে।
মোবাইল ফোন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে একটি সহজ ও সরাসরি যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবেও
কাজ করে। কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে না এলে বা কোনো পড়ায় পিছিয়ে থাকলে শিক্ষক খুব
সহজেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। অনেক সময় ছাত্রদের কাছ থেকে প্রশ্ন আসে
যেগুলোর উত্তর তখনই দেওয়া সম্ভব নয়। তখন শিক্ষক মোবাইল ফোনে রিসার্চ করে উত্তর
দিয়ে দিতে পারেন বা ই-মেইল, মেসেজ কিংবা বিভিন্ন শিক্ষা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে
শেয়ার করতে পারেন। অনলাইন মিটিং বা ভিডিও ক্লাসের মাধ্যমে দূরের শিক্ষকদের সঙ্গে
অভিজ্ঞতা বিনিময়, প্রশিক্ষণ গ্রহণ, কিংবা নিজে ক্লাস নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে আজকাল
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। এ ছাড়া শিক্ষকরা নিজেদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন
কোর্সে অংশগ্রহণ করতে পারেন মোবাইলেই। সব মিলিয়ে বলা যায়, শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল
ফোনের উপকারিতা শিক্ষকদের জন্য একটি বাস্তবিক সমাধান এনে দিয়েছে, যা তাদের পেশাগত
জীবনে সময়, তথ্য ও প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করেছে।
গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষার সুযোগ
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করেন। সেখানে অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা
এখনো শহরের মতো সুবিধা পায় না। তবে মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতার কারণে এই
শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার পথ অনেকটাই উন্মুক্ত হয়েছে। আগের দিনে গ্রামের একজন
শিক্ষার্থীর জন্য ভালো মানের শিক্ষক, পাঠ্য উপকরণ বা টিউশন পাওয়া ছিল বেশ কঠিন।
কিন্তু এখন একজন শিক্ষার্থী মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইউটিউব, ফেসবুক বা
বিভিন্ন শিক্ষা অ্যাপ থেকে নিজের প্রয়োজনীয় পাঠ সহজেই শিখতে পারে। শহরের বড়
শিক্ষকদের ক্লাস সে নিজের বাড়িতে বসেই দেখতে পাচ্ছে। এই সুবিধা শুধু এককভাবে পাঠ
শেখার জন্য না, বরং গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে তুলছে। তারা জানছে
শহরের ছেলেমেয়েরা যা শিখছে, তারাও একই শিক্ষা পাচ্ছে এবং সেই জ্ঞানের আলোতে তাদের
ভবিষ্যৎ আলোকিত হতে পারে।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনলাইন এক্সাম, কুইজ বা মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করাও এখন
গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য সম্ভব হয়েছে। এতে তারা নিজের মেধা যাচাই করতে পারছে
এবং প্রস্তুতিও নিচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য। আগে যেখানে কোচিং ক্লাসে
যাওয়ার সুযোগ ছিল না অনেকের, এখন সেই শিক্ষার্থীরা মোবাইলে ভিডিও দেখে নিজে
নিজেই প্রস্তুতি নিতে পারছে। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে অনলাইনে
ফ্রি শিক্ষা কনটেন্ট সরবরাহ করা হচ্ছে, যা গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের দারুণ উপকারে
আসছে। তাদের পরিবারও এখন অনেক সচেতন হচ্ছে এবং সন্তানের হাতে একটি স্মার্টফোন
তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে যেন সে শিক্ষার দুনিয়ায় পিছিয়ে না পড়ে। ফলে বলা
যায়, শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা শুধু শহর নয়, গ্রামের
শিক্ষার্থীদের কাছেও আধুনিক শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দিতে একটি দুর্দান্ত মাধ্যম হয়ে
উঠেছে।
শিক্ষায় সামাজিক যোগাযোগের ইতিবাচক ব্যবহার
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, যেমন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, কিংবা টেলিগ্রামের মাধ্যমে
এখন শিক্ষার্থীরা শুধু বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা নয়, বরং পড়াশোনার বিষয়েও সংযুক্ত
থাকছে। আগে যেসব শিক্ষার্থী প্রশ্ন বা সমস্যা নিয়ে একা বসে থাকতো, এখন তারা
বন্ধুদের গ্রুপে প্রশ্ন করে সহজেই উত্তর পেয়ে যায়। অনেক সময় শিক্ষক নিজেই একটি
গ্রুপে সকল ছাত্রছাত্রীকে যুক্ত করে সেখানে ক্লাসের তথ্য, হোমওয়ার্ক বা এক্সট্রা
লার্নিং রিসোর্স শেয়ার করেন। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাকে কেন্দ্র করে একটি
সুন্দর যোগাযোগ তৈরি হয়। তারা একে অপরকে সাহায্য করে, এবং দলগতভাবে শেখার
মানসিকতা গড়ে তোলে। অনেক সময় তারা নিজেরাও কিছু জানার পর অন্যকে শেখানোর চেষ্টা
করে, যা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় ও শিক্ষা প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে।
অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক শিক্ষামূলক পেজ, চ্যানেল বা গ্রুপ আছে
যেগুলো থেকে নিয়মিত তথ্য, কুইজ, পরীক্ষার প্রস্তুতির টিপস বা ক্যারিয়ার গাইডেন্স
পাওয়া যায়। ছাত্রছাত্রীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে এসব প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে
নিজেদের জন্য অনেক দরকারি তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এমনকি স্কুল-কলেজে যারা একই
শ্রেণিতে পড়ছে, তারা আলাদা করে একটি ভার্চুয়াল গ্রুপ খুলে সেখানে নিজেদের মতামত,
নোটস, বা ক্লাস রিভিশন শেয়ার করে। এই ধরনের সামাজিক যোগাযোগের ইতিবাচক ব্যবহার
শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ায় এবং একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে।
এইভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও
শিক্ষার্থীদের নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
বিদেশি ভাষা শেখার সহজ মাধ্যম
বর্তমান বিশ্বে যেকোনো ভালো চাকরি বা উচ্চশিক্ষার জন্য ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষার
দক্ষতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগে যেখানে বিদেশি ভাষা শেখার জন্য ভাষা প্রশিক্ষণ
কেন্দ্রে যেতে হতো বা বই কিনে পড়তে হতো, এখন একজন শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন ব্যবহার
করেই বিভিন্ন অ্যাপ ও ভিডিও টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে ভাষা শিখতে পারছে। ইউটিউবে অনেক
চ্যানেল আছে যেখানে প্রতিদিন নতুন শব্দ, বাক্য গঠন, উচ্চারণ ও শুনে বুঝার কৌশল
শেখানো হয়। এর ফলে একজন শিক্ষার্থী নিজের মতো করে সময় নিয়ে ধাপে ধাপে বিদেশি ভাষা
আয়ত্ত করতে পারে। যারা ইংরেজি দুর্বল, তাদের জন্য বাংলা অনুবাদসহ বিভিন্ন টুল ও
অ্যাপ রয়েছে, যা শেখার প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করে তুলেছে। এভাবেই প্রযুক্তির সহজ
ব্যবহার এখন ভাষা শেখার জগতে এক নতুন বিপ্লব এনেছে।
আরো ভালো দিক হলো, অনেক অ্যাপ এখন শিক্ষার্থীর শেখার অগ্রগতি রেকর্ড রাখে ও
প্রতিদিন নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থীরা গেমের মতো করে শিখে
আনন্দ পায়। ইংরেজির পাশাপাশি ফ্রেঞ্চ, জার্মান, চাইনিজ বা আরবি শেখার অ্যাপও এখন
মোবাইলে সহজলভ্য। শিক্ষার্থী চাইলেই নিজ ভাষার বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে জানার দরজা
খুলে ফেলতে পারে। আগে যেখানে বিদেশি ভাষা শেখা একটি খরচসাপেক্ষ ও সময়সাপেক্ষ কাজ
ছিল, এখন সেটি সবার হাতের নাগালে এসেছে। ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের
উপকারিতা ভাষা শেখার জগতে শিক্ষার্থীদের একধাপ এগিয়ে রাখছে এবং তাদের আন্তর্জাতিক
মানের প্রতিযোগিতায় প্রস্তুত করে তুলছে।
প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে মোবাইল
আজকের শিক্ষাব্যবস্থায় কেবল পাঠ্যবই মুখস্থ করলেই সফলতা আসে না। সময়ের সঙ্গে তাল
মিলিয়ে চলতে হলে প্রযুক্তির ব্যবহার জানা জরুরি। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে
শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সফটওয়্যার, অ্যাপ ও অনলাইন টুলসের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। যেমন
ধরুন, ওয়ার্ড প্রসেসিং, প্রেজেন্টেশন তৈরি, ভিডিও এডিটিং, কোডিং, কিংবা গুগল
ড্রাইভ ব্যবহার – এসব কাজ আগে শুধু কম্পিউটারে সম্ভব হতো। এখন শিক্ষার্থীরা
মোবাইলে করেই এসব শিখছে ও ব্যবহার করছে। এতে তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা তৈরি
হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের কর্মজীবনে বড় ভূমিকা রাখবে। একজন শিক্ষার্থী মোবাইলে পড়া
রেকর্ড করে বা স্ক্রিনশট নিয়ে নোট তৈরি করছে, আবার কেউ ডকুমেন্ট স্ক্যান করে
মেইলে পাঠাচ্ছে – সবই সে একা শিখে নিচ্ছে।
অন্যদিকে, অনেক সময় স্কুল বা কলেজ থেকে প্রযুক্তি বিষয়ক প্রজেক্ট দেওয়া হয়। তখন
শিক্ষার্থী মোবাইল ব্যবহার করে ইউটিউব, গুগল, অথবা বিভিন্ন শিক্ষা অ্যাপে গিয়ে
প্রয়োজনীয় টিউটোরিয়াল দেখে কাজ সম্পন্ন করে। এইভাবে তারা হাতে-কলমে প্রযুক্তি
ব্যবহার শিখছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডিজিটাল শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংযোগ
তৈরি হচ্ছে, যার ফলে তারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে টিকে থাকার জন্য প্রস্তুত
হচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা প্রযুক্তিগত দিক থেকেও
শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তুলছে এবং তাদের কর্মজীবনে প্রতিযোগিতামূলক করে গড়ে
তুলছে।
শেষ মন্তব্য
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় মোবাইল ফোন শুধুই একটি যন্ত্র নয়, বরং এটি একটি
শক্তিশালী মাধ্যম যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস গঠনে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই একটি ডিভাইসের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তথ্য
খুঁজছে, পাঠ শিখছে, পরীক্ষা দিচ্ছে, ভাষা আয়ত্ত করছে, এবং প্রযুক্তি শিখছে।
শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব গতিতে, নিজের সুবিধামতো সময় বেছে নিয়ে শেখার সুযোগ
পাচ্ছে। এটি শুধু তাদের শিক্ষা জীবনের মান বাড়ায়নি, বরং শেখার আগ্রহও বাড়িয়েছে।
মোবাইল ফোনের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে, এটি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়
এক নতুন অধ্যায় তৈরি করতে পারে। তবে এর অপব্যবহার থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করাও
জরুরি।
সব শেষে বলা যায়, শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা আজ এমন এক জায়গায়
পৌঁছেছে, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী চাইলেই নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে পারে। শিক্ষাকে আর
কষ্টকর বা ব্যয়সাধ্য কিছু মনে হয় না। বরং এটি এখন হাতের মুঠোয় থাকা এক আনন্দময়
যাত্রা। আমরা যদি মোবাইল ফোনকে শুধু যোগাযোগের যন্ত্র না ভেবে একে শিক্ষার অনুঘটক
হিসেবে দেখি, তবে দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী উপকৃত হবে এবং জাতি গঠনের পথ আরো সুগম
হবে।
BLOGGER MRH-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url