ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ ও সমাধান

কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ঘুম না আসার পেছনে লুকিয়ে থাকে নানা কারণ। তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ ও সমাধান সম্পর্কে তবে চলুন বিস্তারিতভাবে বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ঘুম-না-আসার-৮টি-সাধারণ-কারণ-ও-সমাধান

আজকের এই আটিকেলে আমরা আলোচনা করবো ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ ও সমাধান, যা সহজ ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করবো আমরা।

পোস্ট সূচিপত্র: ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ ও সমাধান

ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ কি কি?

প্রিয় পাঠকবৃন্দ চলুন সর্বপ্রথমে জেনে আসি ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণগুলো সম্পর্কে। ঘুম মূলত- মানসিক চাপ ও উদ্বেগ, অতিরিক্ত মোবাইল বা স্ক্রিন ব্যবহার, অনিয়মিত ঘুমের রুটিন, বিনা কারণে অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা করা, ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল সেবন করা, শারীরিক অসুস্থতা বা ব্যথা, পর্যাপ্ত শরীরচর্চার অভাব, পরিবেশগত সমস্যা যেমন: আলো, শব্দ, গরমের কারণে হয়না। আমরা এখন এখানে উল্লেখিত প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আকারে আলোচনা করবো এবং জানবো ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ ও সমাধান সম্পর্কে।

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ

ঘুম না আসার সর্বপ্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ কারণটি হচ্ছে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ, যা সকলের মাঝে থাকে। অনেক সময় আমাদের মনের মধ্যে এমন সব চিন্তা কাজ করে, যা রাতে ঘুমাতে দেয় দেয়। যেমন: পরীক্ষার ভয়, চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তা, সংসারের টানাপোড়েন কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়ে অজানা ভয়। এসব মানসিক চাপ আমাদের মাথায় একটার পর একটা ভাবনার ঢেউ তোলে। যখন আমরা বিছানাই শুইতে বা ঘুমাতে যাই, তখন মস্তিষ্ক শান্ত হতে পারে না। ফলে চোখে ঘুম আসে না। এই কারণে ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ ও সমাধান-এর মধ্যে মানসিক চাপ অন্যতম একটি কারণ। এখন প্রশ্ন হলো এই চাপকে কিভাবে কমানো যায়? চাপ কমাতে হলে প্রথমেই আমাদের চিন্তাগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে ধ্যান করুন যা খুবই উপকারী হতে পারে। ধ্যান করার সময় মনকে এক জায়গায় স্থির রাখার চেষ্টা করুন। কেউ চাইলে ধ্যানের পাশাপাশি মৃদু শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। এতে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে এবং শরীর ও মন শান্ত হয়। এতে চোখে ঘুম আসা সহজ হয়।

মানসিক চাপ কাটাতে দিনের শুরুতেই কিছু ইতিবাচক বা ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন। যেমন: সকালে হালকা ব্যায়াম, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা বা প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছুক্ষণ সময় কাটানো মানসিক প্রশান্তি দিতে পারে। এছাড়া কাজের সময় মাঝে মাঝে বিরতি নেয়া, পছন্দের গান শোনা, বা বই পড়ার অভ্যাসও দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে। চাপমুক্ত থাকতে চাইলে নিজের মনের কথা বিশ্বস্ত কাউকে বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন, এতে আপনার মনের চাপ কমে যাবে এবং আপনি ভেতরে থেকে প্রশান্তি লাভ করবেন। অনেকেই রাতে বিছানায় শুয়ে নিজের ভুল বা সমস্যা নিয়ে ভাবতে থাকেন। এটি ঘুমে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এর পরিবর্তে রাতে নিজের ভালো অভিজ্ঞতা বা ভবিষ্যতের ইতিবাচক পরিকল্পনা নিয়ে ভাবা ভালো। রাতে শুয়ে আগে থেকে নির্ধারিত কোনো রিল্যাক্সিং কাজ যেমন: কুরআন তেলওয়াত শোনা বা হালকা ম্যাসাজ করা যেতে পারে। এতে মন ও শরীর উভয়ই আরাম পায় এবং সহজেই ঘুম আসে।

অতিরিক্ত মোবাইল বা স্ক্রিন ব্যবহার

আজকের দিনে আমরা প্রায় সবাই মোবাইল, ট্যাব বা ল্যাপটপ ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু ঘুমের ঠিক আগে এসব স্ক্রিনে চোখ রাখলে ঘুম আসতে অনেক সমস্যা হয়। কারণ এসব ডিভাইস থেকে নীল আলো নির্গত হয় যা আমাদের মস্তিষ্কে 'ঘুমের হরমোন' মেলাটোনিনের কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে আমরা ক্লান্ত হলেও ঘুম আসে না। ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ ও সমাধান-এর মধ্যে এটি অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল বা স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা উচিত। এই সময়টায় বই পড়া, কুরআন তেলওয়াত শোনা কিংবা পরিবারে কারও সঙ্গে গল্প করা ভালো। এতে মন শান্ত হয় এবং চোখের ওপর চাপ পড়ে না। যারা মোবাইলে আসক্ত, তাদের জন্য এটা প্রথমে কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যাস গড়ে উঠলে ঘুম অনেক ভালো হয়।

অনেক সময় আমরা শুয়ে শুয়ে ভিডিও দেখি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রল করি। এতে শুধু সময়ই নষ্ট হয় না, মাথাও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এই উত্তেজনা ঘুমে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই স্ক্রিন ব্যবহারে সময়সীমা নির্ধারণ করা জরুরি। রাত ৯টার পর থেকে স্ক্রিনে সময় না দেওয়া ঘুমের জন্য ভালো উপায় হতে পারে। একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, মোবাইল বা ল্যাপটপের উজ্জ্বলতা কমিয়ে রাখা এবং 'নাইট মোড' চালু রাখলে চোখে কম চাপ পড়ে। তবে সবচেয়ে ভালো হলো, রাতে বিছানায় এসব ডিভাইস না নেওয়া। ঘুমানোর জায়গাটা শুধু ঘুম ও বিশ্রামের জন্য নির্ধারিত হলে আমাদের মস্তিষ্কও বুঝতে পারে কখন বিশ্রামের সময়, আর তখন ঘুম সহজেই আসে।

অনিয়মিত ঘুমের রুটিন

অনেকেই আছেন যারা কখনো রাত ১০ টায় ঘুমান, আবার কখনো ১টা-২টায়। এমন অনিয়মিত ঘুমের রুটিন শরীর ও মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব ফেলে। আমাদের শরীরের ঘড়ি বা বডি ক্লক একটি নির্দিষ্ট ছন্দে কাজ করে। যখন আমরা প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাই এবং একই সময়ে জাগি, তখন শরীর অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং ঘুম সহজে আসে। কিন্তু রুটিন ভেঙে গেলে এই ছন্দ নষ্ট হয় এবং ঘুমে সমস্যা হয়। ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ ও সমাধান এর মধ্যে এটি অনেক বড় ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ছুটির দিনেও এই অভ্যাস বজায় রাখলে শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি ঠিক থাকে। এতে করে মস্তিষ্ক সহজেই বুঝতে পারে কখন বিশ্রামের সময় এসেছে এবং তখন ঘুমিয়ে পড়া সহজ হয়।

রাতে দেরিতে ঘুমালে সকালে দেরিতে ওঠা স্বাভাবিক। এতে সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব লাগে এবং রাতে আবার ঘুম আসতে দেরি হয়। এই চক্র থেকে বের হতে হলে একদিন একটু কম ঘুমিয়ে হলেও সকালে ঠিক সময় ওঠা উচিত। এরপর দিনে অতিরিক্ত না ঘুমিয়ে রাতে নির্ধারিত সময়ে শুয়ে পড়লে রুটিন ঠিক হয়ে যাবে। ঘুমের আগে হালকা খাবার খাওয়া, এক কাপ গরম দুধ পান করা কিংবা উষ্ণ পানিতে গোসল করা ঘুমের রুটিন ঠিক রাখতে সহায়ক হতে পারে। যারা দীর্ঘদিন অনিয়মিত রুটিনে অভ্যস্ত, তাদের জন্য প্রথমে কঠিন হতে পারে। তবে ধৈর্য ধরে কিছুদিন নিয়ম মেনে চললে শরীর অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং ঘুম আসা স্বাভাবিক হয়।

বিনা কারণে অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা করা

অনেক মানুষ আছেন, যারা কোনো কারণ ছাড়াই সারাদিন কিংবা রাতজেগে নানা চিন্তায় ভোগেন। এমনকি ছোট ছোট বিষয় নিয়েও তাদের মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘোরে, যা ধীরে ধীরে বিশাল দুশ্চিন্তায় রূপ নেয়। এই অকারণ ভাবনা দিনের শেষে রাতে ঘুমাতে বাঁধা দেয়। মস্তিষ্ক যখন একের পর এক চিন্তায় জর্জরিত থাকে, তখন শান্তভাবে ঘুমানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই সমস্যা থেকে বের হতে হলে আমাদের ভাবনার ধরন পরিবর্তন করতে হবে। প্রতিদিন একটি সময় নির্ধারণ করে সেই সময়টাতে শুধুই ইতিবাচক ও বাস্তবভিত্তিক চিন্তা করার অভ্যাস করতে হবে। যেমন, সকালবেলা কিছু সময় ধ্যান, ভালো চিন্তা ও আত্মবিশ্লেষণে ব্যয় করলে মন শান্ত থাকে এবং সারাদিনে অপ্রয়োজনীয় ভাবনা কমে যায়। এই অভ্যাস ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সহায়ক হয়।

রাতের বেলায় মাথায় যদি কোনো চিন্তা ভিড় করে, তাহলে সেই ভাবনাগুলো একটি খাতায় লিখে রাখা যেতে পারে। এতে মন হালকা হয় এবং মস্তিষ্ক ওই চিন্তা থেকে কিছুটা মুক্তি পায়। অনেক সময় আমাদের ভাবনা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে থাকে, শুধু কল্পনার জাল বুনে আমরা উদ্বিগ্ন হই। তাই ভাবনার জগতে আটকে না থেকে বাস্তবিক চিন্তার চর্চা করাটা জরুরি। যারা অতিরিক্ত ভাবনায় ভোগেন, তারা রিল্যাক্সিং এক্টিভিটি যেমন ধীরে ধীরে হাঁটা, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা হালকা সংগীত শুনতে পারেন। এছাড়া রাতের বেলায় কোনো উপকারী বই বা গল্প পড়ে মনটাকে অন্যদিকে সরিয়ে নেয়া সম্ভব। ধাপে ধাপে এই অভ্যাস গড়ে তুললে অপ্রয়োজনীয় চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব, আর তখন ঘুম আসতেও কোনো সমস্যা হয় না।

ক্যাফেইন-ও-অ্যালকোহল-সেবন-করা

ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল সেবন করা

চা, কফি বা অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় অনেকের প্রিয়। তবে এগুলোর অতিরিক্ত গ্রহণ বিশেষ করে সন্ধ্যার পর, ঘুমে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ক্যাফেইন এক ধরনের উত্তেজক পদার্থ, যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করে তোলে। ফলে ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দ ভেঙে যায়। ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ ও সমাধান-এর মধ্যে এটি একেবারে সাধারণ অথচ গুরুত্বপূর্ণ কারণ। অনেক সময় সন্ধ্যায় ক্লান্ত লাগলে আমরা এক কাপ চা বা কফি খেয়ে নেই, ভাবি এতে শরীর চাঙা হবে। কিন্তু ক্যাফেইনের প্রভাব ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে, যার অর্থ রাত ৮টার সময় খাওয়া এক কাপ কফি মধ্যরাত পর্যন্ত ঘুমে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে যাদের ঘুমের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি আরও ক্ষতিকর। ক্যাফেইনের পরিবর্তে রাতে গরম দুধ, হারবাল টি বা শুধু উষ্ণ পানি খাওয়ার অভ্যাস করা ভালো। এগুলো শরীর ও মনকে আরাম দেয় এবং ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে। যারা দীর্ঘদিন ক্যাফেইনে অভ্যস্ত, তারা ধীরে ধীরে বিকল্প পানীয়তে অভ্যস্ত হলে ভালো ফল পেতে পারেন।

ঘুমের সমস্যা কমাতে চাইলে দিনে মাত্র ১-২ কাপ চা বা কফি পান করার চেষ্টা করুন এবং বিকেলের পর আর তা এড়িয়ে চলুন। যারা দিনে অনেকবার ক্যাফেইন গ্রহণ করেন, তারা রাতে ঘুমাতে সমস্যা ছাড়াও মাথাব্যথা, মনোযোগে ঘাটতি ও উদ্বেগে ভুগতে পারেন। তাই সচেতনভাবে এই অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করাই উত্তম।

শারীরিক অসুস্থতা বা ব্যথা

শরীরের কোনো অংশে অসুবিধা থাকলে স্বাভাবিক ঘুম আসতে চায় না। যেমন, ঘাড়ে, পিঠে বা হাঁটুতে ব্যথা থাকলে আমরা ঠিকমতো বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিতে পারি না। এতে করে ঘুমে বিঘ্ন ঘটে। এছাড়া হাঁপানি, গ্যাস্ট্রিক, কিডনি সমস্যা বা ফ্লু থাকলে শরীর অস্বস্তিতে ভরে ওঠে এবং রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যায়। অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের কারণে শরীরে অদ্ভুত এক চাপ অনুভূত হয়, যার ফলে মন অস্থির হয়ে পড়ে। এর প্রভাব ঘুমের উপর পড়ে, এবং সেই ঘুম হয় খণ্ডিত ও অশান্ত। কেউ কেউ রাতে বুক ধড়ফড় বা শ্বাস নিতে কষ্ট হলে তা থেকেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এই সব শারীরিক সমস্যাগুলো আমাদের মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিতে দেয় না। এমন পরিস্থিতিতে ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ ও সমাধান বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের বুঝতে হবে- শরীর সুস্থ না থাকলে ঘুমও ভালো হবে না। তাই আগে শরীরের সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেউ যদি নিয়মিত ব্যথানাশক খাচ্ছেন বা ঘন ঘন স্যালাইন নিচ্ছেন, তবে সেটা থেকেও ঘুমে প্রভাব পড়তে পারে। কারণ এসব ওষুধ মস্তিষ্কের ঘুমের স্বাভাবিক সিগন্যালকে ব্যাহত করে। অনেক সময় মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন থেকেও রাতে ঘুম আসতে চায় না। তখন টিভি বা মোবাইল দেখা আরও বেশি বিরক্তি তৈরি করে। তাই এসব পরিস্থিতিতে জোর করে ঘুমানোর চেয়ে শরীরকে আরাম দেওয়া বেশি জরুরি।

শারীরিক ব্যথা কমানোর জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় আছে যা ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে। যেমন, গরম পানিতে স্নান নেওয়া, ব্যথার স্থানে হালকা গরম প্যাড ব্যবহার করা বা হালকা মসৃণ মালিশ করা। এসব পদ্ধতি মস্তিষ্ককে একটি সিগন্যাল দেয়-এখন বিশ্রামের সময়। এর পাশাপাশি আরামদায়ক বিছানা ও বালিশ ব্যবহারে ঘুমের মান উন্নত হয়। রাতে ঝলমলে আলো বন্ধ করে, একটি নরম কম্বল গায়ে জড়িয়ে আরাম করে শুয়ে থাকলে শরীর ধীরে ধীরে বিশ্রাম নিতে শুরু করে। তখন মস্তিষ্কও শান্ত হয় এবং ঘুম সহজেই চলে আসে। এসব ছোট ছোট অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে অনেক বড় পরিবর্তন আনে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-রাতের খাবার। যদি খাবার বেশি ঝাল, তৈলাক্ত বা ভারী হয় তবে শরীর হজমে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং বিশ্রাম নিতে পারে না। তখন ঘুম বিলম্বিত হয়। তাই ঘুমের আগে হালকা এবং সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত। কেউ কেউ ব্যথার কারণে রাতে ঘন ঘন ঘুম থেকে উঠে পানি পান করেন বা বারবার দিক পাল্টে শুয়ে থাকেন। এতে ঘুমের গভীরতা নষ্ট হয় এবং পরদিন মেজাজ খারাপ থাকে। তাই এমন পরিস্থিতিতে শুধু ওষুধ খাওয়া নয়, বরং নিজের জীবনযাত্রা এবং অভ্যাসের দিকেও নজর দিতে হবে। নিয়মিত মেডিটেশন বা প্রার্থনার অভ্যাস শরীর-মনকে শান্ত রাখে এবং তা ঘুমের জন্য সহায়ক হয়।

পর্যাপ্ত শরীরচর্চার অভাব

আজকাল অনেকেই সারা দিন বসে কাজ করেন। অফিসে দীর্ঘসময় চেয়ারে বসে থাকা, বাসায় ফিরে আবার মোবাইল বা টিভির সামনে সময় কাটানো-এসব অভ্যাস শরীরকে একেবারে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ফলে শরীরে কোনো প্রাকৃতিক ক্লান্তি তৈরি হয় না। ঘুম আসার জন্য শরীর ও মস্তিষ্ক দুটোই ক্লান্ত হওয়া দরকার। কিন্তু যদি আমরা সারা দিনই অলসভাবে কাটিয়ে দিই, তাহলে ঘুম সহজে আসে না। ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ ও সমাধান নিয়ে কথা বললে এই শরীরচর্চার অভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা দিনে ২০ মিনিটও হাঁটেন না, তাঁদের মধ্যে ঘুমের সমস্যা বেশি দেখা যায়। কারণ শরীর যখন কাজ করে না, তখন মস্তিষ্কও বিশ্রামের প্রয়োজন অনুভব করে না।

শরীরচর্চা শুধু শরীর ফিট রাখার জন্য নয়, বরং এটি মস্তিষ্কের স্নায়ু গুলোকে শিথিল করে। হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, ধীরে ধীরে দৌড়ানো বা নিয়মিত কিছু হালকা স্ট্রেচিং করলে শরীর থেকে একধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়, যা ঘুমের জন্য সহায়ক। এই হরমোনের নাম মেলাটোনিন। যখন আমরা ব্যায়াম করি, তখন শরীর স্বাভাবিক নিয়মে রাতের দিকে ক্লান্ত হয়। এই ক্লান্তি শরীরকে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে। অথচ যারা একেবারে স্থির জীবনযাপন করেন, তাঁদের মধ্যে এই প্রক্রিয়াটা বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে তাঁরা বিছানায় শুয়ে লম্বা সময় ঘুমের জন্য অপেক্ষা করলেও ঘুম আসে না। অনেকেই মনে করেন, ঘুম না এলে শুধু ওষুধ খেলেই হবে। কিন্তু আসলে ঘুমের সমস্যার পেছনে যদি শরীরচর্চার অভাব থাকে, তাহলে ওষুধ খেয়ে সাময়িক ঘুম এলেও তা টেকসই হবে না। বরং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে শরীরকে স্বাভাবিক ঘুমের পথে ফেরানো যায়। স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের খেলাধুলা করার সময় নেই, তারাও ঘুমজনিত সমস্যায় ভোগে। অনেকে রাতে মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে একেবারে নিস্তেজ হয়ে যায়, কিন্তু ঘুম আসে না। এর পেছনের কারণ হলো-তাদের শরীর সারাদিনে কোনো কাজ করে ক্লান্ত হয়নি। তাই শরীর রাতে বিশ্রাম চায় না। এটা একটা ভয়ানক অভ্যাস।

সমাধান হিসেবে বলা যায়, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হেঁটে আসা, সকালবেলা বা বিকেলে হালকা ব্যায়াম করা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা, বাসার ভেতরে ছোট খাটো কাজ করা-এসবই শরীরচর্চার সহজ উপায়। ছোটরা খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকলে রাতের ঘুম ভালো হয়। বড়রাও যদি সকালে বা সন্ধ্যায় একটু সময় বের করে হাঁটেন বা ধীরে ধীরে দৌড়ান, তাহলে ঘুম সহজেই চলে আসে। শরীরচর্চা করার পর শরীর একটা প্রশান্তি অনুভব করে, মনের ভিতরে এক ধরনের তৃপ্তি তৈরি হয়। এই তৃপ্তিই মস্তিষ্ককে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে। তাই যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের উচিত প্রতিদিন একটু শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তোলা।

পরিবেশগত সমস্যা যেমন: আলো, শব্দ, গরম

ঘুম না আসার পিছনে অন্যতম বড় কারণ হলো আমাদের চারপাশের পরিবেশ। আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, যদি ঘুমের পরিবেশটা ঠিক না থাকে, তাহলে ঘুম আসতে চায় না। বিশেষ করে অতিরিক্ত আলো, অনবরত শব্দ এবং গরম পরিবেশ ঘুমকে পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়। অনেকেই ঘরের বাতি জ্বালিয়ে রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করেন, আবার কেউ কেউ জানালার পর্দা না টেনে বাইরে থেকে আসা আলো সহ্য করেন। এই আলো আমাদের মস্তিষ্ককে বোঝাতে ব্যর্থ হয় যে এখন রাত, এখন বিশ্রামের সময়। ফলে আমাদের মস্তিষ্ক "সজাগ" অবস্থায় থেকে যায়। আবার বাইরের হর্ন, গাড়ির আওয়াজ বা বাসার সদস্যদের টিভি/মোবাইলের শব্দ ঘুমের মাঝে ব্যাঘাত ঘটায়।

শুধু শব্দ আর আলো নয়, গরমও ঘুমের বড় শত্রু। গ্রীষ্মকালে অনেকেই শুধু ফ্যান চালিয়ে ঘুমাতে যান, কিন্তু প্রচণ্ড গরমে ঘেমে গিয়ে ঘুম ভেঙে যায় বারবার। আমাদের শরীর যখন স্বস্তিতে থাকে, তখন ঘুম সহজে আসে। কিন্তু অতিরিক্ত গরম শরীরকে অস্বস্তি দেয়, ঘাম সৃষ্টি করে এবং ঘুমকে বারবার ব্যাঘাত ঘটায়। ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ ও সমাধান নিয়ে বললে, পরিবেশগত কারণগুলোর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ, শারীরিক বা মানসিক সমস্যা না থাকলেও যদি পরিবেশ ঠিক না থাকে, তাহলেও ঘুম হতে চায় না। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে- শব্দদূষণ। শহরাঞ্চলে বাস করা মানুষরা প্রায়ই এই সমস্যায় ভোগেন। রাস্তার পাশে যারা থাকেন, তাঁদের বাসার জানালা দিয়েই প্রতিনিয়ত গাড়ির শব্দ, লোডশেডিংয়ের জেনারেটরের আওয়াজ বা মানুষের কোলাহল ভেসে আসে। এই শব্দগুলো আমাদের মস্তিষ্ককে ‘ঘুমের পরিবেশ’ থেকে সরিয়ে দেয়। যখন আমাদের মস্তিষ্ক বুঝে ফেলে যে চারপাশ নিরাপদ নয় বা অস্বস্তিকর, তখন ঘুম আসতে চায় না। একইভাবে অতিরিক্ত আলো যেমন চোখকে বিরক্ত করে, তেমনি ঘুমের স্বাভাবিক প্রবাহকে ধ্বংস করে দেয়।

এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে কিছু সহজ পরিবর্তন আনা দরকার। ঘুমানোর আগে ঘরের আলো নিভিয়ে দিতে হবে। চাইলে হালকা একটা নাইট লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে। জানালায় গাঢ় পর্দা ব্যবহার করলে বাইরের আলো ও শব্দ অনেকটাই কমে যায়। কেউ যদি শব্দের প্রতি সংবেদনশীল হন, তাহলে ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। গরমের সময় ঘরে হালকা ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করতে হবে। যদি এসি বা কুলার না থাকে, তাহলে নিয়মিত পানি ছিটিয়ে ঘর ঠাণ্ডা রাখা যায়, জানালায় ভেজা কাপড় দিয়ে হাওয়া ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করা যেতে পারে।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, ঘুমের জন্য শান্ত, অন্ধকার এবং ঠাণ্ডা পরিবেশ প্রয়োজন। আমরা যদি নিজের ঘরটাকেই এইভাবে সাজিয়ে নিতে পারি, তাহলে ওষুধ ছাড়াও ঘুম সহজেই আসবে। অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ ঘুমের ওষুধ খায় কিন্তু পরিবেশ ঠিক রাখে না। এতে ঘুমের অভ্যাস নষ্ট হয়ে যায় এবং ভবিষ্যতে ওষুধ ছাড়া ঘুমানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই যে যাই বলুক, ঘুমের পরিবেশ ঠিক করা ঘুম না আসার সমস্যার অন্যতম কার্যকর সমাধান। প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব রুম, আলো, শব্দ এবং তাপমাত্রা কেমন পছন্দ করে সেটা বুঝে ঘরের পরিবেশ গড়ে তুললে ঘুমের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।

অনিদ্রা মোকাবিলায় ঘরোয়া প্রতিকার

আমরা উপরে বিস্তারিতভাবে জেনে নিলাম ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ ও সমাধান সম্পর্কে। তবে আমাদের আলোচনা এখনে শেষ হয়নি। আমরা এখন আলোচনা করবো অনিদ্রা মোকাবিলায় ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে। চলুন তবে প্রিয় পাঠকবৃন্দ বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

আমাদের জীবনের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে অনিদ্রা। দিনে পরিশ্রম করেও যদি রাতে ঠিকভাবে ঘুম না হয়, তাহলে শরীর ও মন দুটোই দুর্বল হয়ে পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আগে আমরা চাই ঘরে বসেই কিছু সহজ সমাধান খুঁজে পেতে। এখন আলোচনা করা হবে অনিদ্রা মোকাবিলার জন্য ৫টি ঘরোয়া পদ্ধতি নিয়ে, যেগুলো শতভাগ প্রাকৃতিক এবং সহজলভ্য। এই পদ্ধতিগুলো নিয়মিত চর্চা করলে ঘুমের সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।

উষ্ণ দুধ পান করুন:

রাত ঘুমানোর আগে এক গ্লাস হালকা গরম দুধ খেলে মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রা বাড়ে, যা ঘুম আনতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যারা দিনে মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন, তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম ও ট্রিপটোফান মানসিক শান্তি আনে। চাইলে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন, এতে ঘুম আরও দ্রুত আসবে। এটি সহজ, সস্তা এবং কার্যকর একটি পদ্ধতি।

পায়ের তলায় তেল মালিশ:

প্রতিদিন রাতে শোবার আগে নারকেল তেল বা সরিষার তেল গরম করে পায়ের তলায় মালিশ করুন। এতে রক্তসঞ্চালন ঠিক থাকে এবং পা হালকা লাগে। পায়ের নিচে থাকা স্নায়ুতন্ত্রের সংযোগস্থলে চাপ পড়লে তা ঘুম আনতে সহায়তা করে। অনেক সময় মাথার ক্লান্তি শরীরেও ছড়িয়ে পড়ে, যা দূর করতে এই পদ্ধতি কার্যকর। তেলের উষ্ণতা ও গন্ধ মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।

লেবু পাতার চা:

লেবু পাতা, তুলসি বা তোকমা দানা দিয়ে তৈরি ঘরোয়া চা ঘুমের জন্য খুব উপকারী। এক কাপ গরম পানিতে কিছু লেবু পাতা দিয়ে ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। তারপর ছেঁকে একটু মধু মিশিয়ে পান করুন। এই চা শরীরকে শিথিল করে এবং মাথার চাপ কমায়। এটি ক্যাফেইন মুক্ত হওয়ায় হৃদযন্ত্রেও কোনো চাপ পড়ে না। রাতে ঘুমানোর আধঘণ্টা আগে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ল্যাভেন্ডার তেল ব্যবহার:

ল্যাভেন্ডার একটি প্রাকৃতিক সুগন্ধ যা মানসিক প্রশান্তি আনে। কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল আপনার বালিশের কভারে ছিটিয়ে দিন বা ঘরে সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করুন। এটি স্নায়ু শান্ত করে এবং মনকে চঞ্চলতা থেকে মুক্ত রাখে। যারা বারবার ঘুম ভেঙে যায় তাদের জন্যও এটি কার্যকর। ল্যাভেন্ডারের ঘ্রাণ ঘুমের পরিবেশ তৈরি করে।

নিরিবিলি পরিবেশ তৈরি করুন:

অনিদ্রা দূর করতে আপনার ঘর ও বিছানার পরিবেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। শোবার ঘরটি হালকা আলো ও শব্দহীন রাখা উচিত। বিছানা নরম ও পরিপাটি রাখলে মন স্বস্তি পায়। অতিরিক্ত মোবাইল বা টিভি ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত। ঘর ঠান্ডা ও আরামদায়ক রাখলে সহজে ঘুম আসে। এই ছোট ছোট জিনিসগুলো মিলেই ঘুমের জন্য সঠিক পরিবেশ গড়ে তোলে।

ঘুম না আসলে কী করবেন?

অনেক সময় রাত জেগে থাকলেও ঘুম আসে না। বারবার পাশ পরিবর্তন করেও মন শান্ত হয় না। ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ ও সমাধান সম্পর্কে জানার পাশাপাশি আপনি কিছু সহজ কাজ করে নিজেকে ঘুমের উপযুক্ত অবস্থায় আনতে পারেন। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো:

  • মোবাইল দূরে রাখুন: ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে মোবাইল বন্ধ রাখুন বা পাশে রাখবেন না। মোবাইলের নীল আলো মস্তিষ্কে ঘুমের সংকেত বন্ধ করে দেয়। এ কারণে মস্তিষ্ক সক্রিয় থেকে যায় এবং ঘুম আসতে দেরি হয়।
  • হালকা বই পড়ুন: ঘুমানোর আগে হালকা গল্প বা উপন্যাস পড়া যেতে পারে। এতে মন শান্ত হয় এবং চোখ ক্লান্ত হয়ে ঘুম চলে আসে। তবে থ্রিলার বা উত্তেজনাপূর্ণ বই না পড়াই ভালো।
  • গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের চর্চা করুন: বিছানায় শুয়ে ধীরে ধীরে গভীরভাবে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। ১০ বার এই অনুশীলন করলে স্নায়ু শান্ত হয় ও ঘুম সহজ হয়। এটি মেডিটেশন হিসেবেও কাজ করে।
  • ঘর অন্ধকার রাখুন: ঘুমের জন্য সম্পূর্ণ অন্ধকার উপযোগী। হালকা আলোও মস্তিষ্কে ঘুমের সংকেত প্রভাবিত করে। ঘরে ঘন পর্দা ব্যবহার করতে পারেন।
  • উষ্ণ পানি দিয়ে গোসল করুন: ঘুমানোর আগে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল শরীরকে আরাম দেয়। পেশী শিথিল হয় এবং ঘুম সহজ হয়। শীতকালে এটি আরও কার্যকর।

ঘুম নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভুল ধারণা

অনেকেই ঘুম নিয়ে কিছু ভুলভ্রান্তি মেনে চলেন যা দীর্ঘমেয়াদে তাদের ঘুমের মান খারাপ করে দেয়। এসব ভুল ধারণা শুধুমাত্র ঘুম না আসার সমস্যাকেই বাড়িয়ে তোলে। তাই সঠিক তথ্য জানা এবং ভুল ধারণা দূর করাই হলো ভালো ঘুমের মূল চাবিকাঠি। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক ঘুম নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভুল ধারণা সম্পর্কে।

ঘুম-নিয়ে-কিছু-গুরুত্বপূর্ণ-ভুল-ধারণা

  • কম ঘুমালেও চলবে, কাজ করলেই হবে: অনেকেই মনে করেন, ঘুম না হলেও সমস্যা নেই, কাজ করলেই শরীর ঠিক থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, শরীরের প্রতিটি কোষ, মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ড ঘুমের সময়েই বিশ্রাম নেয়। পর্যাপ্ত ঘুম ছাড়া দেহ ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। দীর্ঘমেয়াদে এটি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, মানসিক চাপসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণ হতে পারে।
  • ঘুম আসছে না মানেই বড় সমস্যা: এক-দু’দিন ঘুম না আসা মানেই যে কোনো রোগ হয়েছে, এটা ঠিক নয়। কখনো মানসিক চাপ বা আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে সাময়িকভাবে ঘুমে সমস্যা হতে পারে। তবে নিয়মিত না ঘুমাতে পারলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • ঘুমানোর জন্য ওষুধ খেলেই ভালো: ঘুমের সমস্যা হলেই অনেকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস করে ফেলেন। অথচ এই অভ্যাস ধীরে ধীরে মস্তিষ্ককে নির্ভরশীল করে তোলে। ফলে প্রাকৃতিকভাবে ঘুম আসার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ঘুমের সমস্যার স্থায়ী সমাধান ঘরোয়া অভ্যাস ও লাইফস্টাইলে পরিবর্তনেই সম্ভব।
  • দিনে ঘুমালেই রাতে ঘুম আসবে না: এটি পুরোপুরি সত্য নয়। দুপুরে ১৫–২০ মিনিট বিশ্রাম বা হালকা ঘুম শরীরকে চাঙ্গা করে। তবে এক ঘণ্টা বা তার বেশি ঘুমিয়ে ফেললে শরীরের ঘুমের চক্র বিঘ্নিত হয়। তাই দিনের ঘুম সীমিত হলে রাতে ঘুমে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
  • বয়স বাড়লে ঘুমের প্রয়োজন কমে যায়: এই ধারণাও সঠিক নয়। বয়স বাড়লে ঘুমের ধরন পরিবর্তন হয়, যেমন বেশি ভোরে উঠে যাওয়া। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজনই পড়ে। তাই বয়স যতই হোক, ভালো ঘুমের জন্য অভ্যাস বজায় রাখা জরুরি।

নিয়মিত ভালো ঘুমের জন্য কিছু অভ্যাস গড়ুন

ভালো ঘুম আসার জন্য শুধু ওষুধ বা ঘরোয়া প্রতিকার নয়, নিয়মিত কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা সবচেয়ে জরুরি। ঘুম আসার আগে আমাদের শরীর ও মনকে প্রস্তুত রাখতে হয়, আর সেটাই সম্ভব হয় কিছু নিয়ম মেনে চললে। নিচে এমন কিছু অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করা হলো-

  • একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস করুন: প্রতিদিন এক নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে গেলে শরীরের ভেতরে ঘুমের ঘড়ি তৈরি হয়। এতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম আসতে শুরু করে। দৈনিক ঘুমানোর সময় এলোমেলো হলে ঘুমে বিঘ্ন ঘটে। এমনকি ছুটির দিনেও এই রুটিন বজায় রাখা উচিত।
  • ঘুমানোর আগে ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন: ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খাওয়া উচিত। ভারী ও মসলাদার খাবার খেলে হজমে সমস্যা হয়, যা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খেলে ঘুম দ্রুত আসে।
  • ঘুমানোর আগে পর্দা ব্যবহার ও আলো নিয়ন্ত্রণ করুন: ঘুমানোর ঘরে আলো ও শব্দ যত কম থাকবে, তত ভালো ঘুম হবে। তাই ঘুমের সময় মোবাইল বা টিভি বন্ধ রাখা উচিত। পর্দা দিয়ে ঘরের বাইরের আলো বন্ধ করা ঘুমের জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করে।
  • রাতের সময় ক্যাফেইন গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন: চা, কফি বা কোল্ড ড্রিংকসে থাকা ক্যাফেইন মস্তিষ্ককে উত্তেজিত রাখে। এতে ঘুম আসতে দেরি হয় বা ঘুম ভেঙে যায়। সন্ধ্যার পর থেকে এসব পানীয় না খাওয়াই উত্তম।

ঘুমের সমস্যা কতদিন থাকলে চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা উপরে বিস্তারিতভাবে জেনেছি ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ ও সমাধান সম্পর্কে।। এছাড়াও আমরা আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে উপরে থেকে জেনে এসেছি। এখন আমরা জানবো ঘুমের সমস্যা কতদিন থাকলে চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

  • প্রতিদিনকার জীবনের ক্লান্তি ও মানসিক চাপের কারণে মাঝে মাঝে ঘুমের সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে এই সমস্যা যদি একটানা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে, তাহলে সেটিকে হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। ঘুমের সমস্যা কতটা গুরুতর, কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার, তা জানা জরুরি।
  • যদি সপ্তাহে তিনদিন বা তার বেশি রাতে ঘুম না হয়, বা ঘুম ভেঙে যায় এবং আপনি পরদিন কাজে মনোযোগ দিতে না পারেন, তাহলে এটি অনিদ্রার লক্ষণ হতে পারে। ঘুমের এই রুটিন যদি ২ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, তবে অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি ঘুম না আসার পাশাপাশি উদ্বেগ, বিষণ্ণতা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে এটি হতে পারে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা নিউরোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করতে হবে। কখনো কখনো ঘুমের সমস্যার পেছনে থাকে অবচেতন মানসিক চাপ, যেটি চিকিৎসা ছাড়া সমাধান হয় না।
  • ঘুমানোর সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হলে, নাক ডাকা এতটা তীব্র হয় যে নিজেই জেগে উঠেন, তাহলে তা হতে পারে ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হওয়ার সমস্যা (Sleep Apnea)। এ সমস্যায় নিঃশ্বাস থেমে যাওয়া বা ঘুমে দম আটকে যাওয়ার মতো জটিলতা দেখা দেয়। এটি হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও বাড়ায়। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
  • যদি ঘুমের সমস্যা আপনার পারিবারিক, সামাজিক বা পেশাগত জীবনে প্রভাব ফেলে-যেমন মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা, বা ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া-তবে চিকিৎসা ছাড়া বিকল্প নেই। চিকিৎসক আপনার সমস্যা অনুযায়ী উপযুক্ত সমাধান দিতে পারবেন।

শেষ মন্তব্য

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা ঘুম না আসার ৮টি সাধারণ কারণ ও সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। প্রতিটি সমস্যার পেছনে রয়েছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু না কিছু ভুল বা অবহেলা। তাই অনিদ্রা কোনো আলাদা রোগ না হলেও এটি আমাদের শরীর ও মনের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। সঠিক তথ্য, ভালো অভ্যাস এবং ঘরোয়া কিছু চর্চা আমাদের ঘুমের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। প্রতিদিনের জীবনে একটু নিয়ম মেনে চললে ঘুমের সমস্যা অনেকাংশে দূর করা সম্ভব। বিশেষ করে মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, রাতের খাবারের নিয়ম, নিরিবিলি পরিবেশ তৈরি করা এবং দুশ্চিন্তা কমানো-এই বিষয়গুলো ঘুমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যেসব ভুল ধারণা নিয়ে চলি, সেগুলো শুধরে ফেললে অনিদ্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে।

যদি এসব চেষ্টার পরও দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা থেকে যায়, তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ অবহেলা করলে তা ভবিষ্যতে বড় অসুস্থতার রূপ নিতে পারে। ঘুম আমাদের জীবনের অপরিহার্য একটি অংশ-এটি শুধু বিশ্রামের জন্য নয়, সুস্থ থাকার জন্যও জরুরি। সবশেষে বলা যায়, ভালো ঘুম মানে ভালো জীবন। তাই এখন থেকেই ঘুমের প্রতি যত্নবান হোন এবং নিজের জন্য একটি সুন্দর জীবন গড়ে তুলুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

BLOGGER MRH-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url