প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়

পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম

প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায় আপনি কি সেটি সম্পর্কে জানেন প্রিয় পাঠক? যদি না জেনে থাকেন তবে আজ আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন। কেননা আজকে আমরা বিস্তারিতভাবে বিষয়টি সম্পর্কে জানবো।

প্রস্রাবে-ইনফেকশন-হলে-কি-কি-লক্ষণ-দেখা-যায়

চলুন প্রিয় পাঠকবৃন্দ ধারাবাহিকভাবে আমাদের সূচিপত্র অনুসারে আলোচনা শুরু করা যাক এবং জেনে নেওয়া যাক প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায় সে সম্পর্কে।

পোস্ট সূচিপত্র: প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়

প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়

প্রস্রাবের ইনফেকশন বা ইউটিআই (UTI) কথাটা আমরা অনেকেই শুনেছি। এটা আসলে আমাদের প্রস্রাব তৈরি এবং বের হয়ে যাওয়ার যে রাস্তাটা আছে, সেই ইউরিনারি ট্র্যাক্টের একটা সমস্যা। সাধারণত কিছু জীবাণু, বেশিরভাগ সময়েই ব্যাকটেরিয়া, এই রাস্তাটাতে ঢুকে ঝামেলা পাকায়। নারী, পুরুষ সবারই এটা হতে পারে, তবে কিছু শারীরিক কারণে মেয়েদের মধ্যে এই সমস্যাটা একটু বেশি দেখা যায়। সময়মতো যদি আমরা এর লক্ষণগুলো চিনতে পারি, তাহলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়া যায়। নয়তো কিন্তু কিডনির মতো জরুরি অঙ্গেরও ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এই আর্টিকেলে আমরা একদম সহজ ভাষায় জানার চেষ্টা করব, প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে আমাদের শরীরে কোন ধরনের অস্বস্তি বা পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক।

সত্যি বলতে, প্রস্রাবের ইনফেকশন হলে যে কতটা কষ্ট হয়, সেটা যার হয়েছে শুধু সেই বোঝে। এটা আমাদের রোজকার কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়, মন মেজাজ খারাপ করে দেয়। অনেক সময় শুরুতে আমরা ছোটখাটো সমস্যা মনে করে পাত্তা দিই না, আর এতেই সমস্যাটা বড় হয়ে যায়। ইনফেকশনটা ইউরিনারি ট্র্যাক্টের ঠিক কোথায় হয়েছে এবং কতটা ছড়িয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে লক্ষণগুলো একেকজনের কাছে একেকরকম লাগতে পারে। যদি ইনফেকশনটা শুধু নিচের দিকে, মানে মূত্রনালী বা মূত্রাশয়ে থাকে, তাহলে সমস্যাগুলো সাধারণত হালকা বা মাঝারি ধরনের হয়। কিন্তু যদি এটা কিডনি পর্যন্ত চলে যায়, তাহলে কিন্তু ব্যাপারটা বেশ সিরিয়াস হয়ে যেতে পারে। তাই প্রস্রাবের ইনফেকশনের যে কোনো ছোট্ট লক্ষণও যদি দেখেন, সচেতন হোন এবং দরকার হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। বাড়িতে হয়তো কিছু করলে সাময়িক আরাম লাগতে পারে, কিন্তু আসল সমাধান বা পুরোপুরি সারানোর জন্য ডাক্তার দেখানোই বুদ্ধিমানের কাজ। এবার আসুন দেখে নিই, ঠিক কী কী দেখে আমরা বুঝতে পারি যে প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়েছে কিনা।

প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া করে বা ব্যথা লাগে:

প্রস্রাবের ইনফেকশনের একদম শুরুর দিকের এবং খুব চেনা একটা লক্ষণ হলো প্রস্রাব করার সময়টাতেই প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া বা ব্যথা অনুভব করা এবং এটি হচ্ছে প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায় তার প্রথম চেনার উপায়। মনে হবে যেন গরম কিছু বেরিয়ে আসছে বা ধারালো কিছু দিয়ে আঁচড় লাগছে। প্রস্রাব শুরু করার ঠিক আগে বা শেষ হওয়ার ঠিক পরেই এই অনুভূতিটা বেশি হয়। ভাবুন তো, কতটা অস্বস্তিকর হতে পারে ব্যাপারটা! জীবাণুগুলো যখন আমাদের প্রস্রাবের রাস্তার ভেতরের নরম জায়গাগুলোতে কামড় দেয়, তখন সেখানে প্রদাহ হয় আর তারই ফলে এই ধরনের কষ্ট হয়। এই ব্যথা বা জ্বালাপোড়াটা কারো হালকা হতে পারে, আবার কারো এত তীব্র হয় যে বাথরুমে যেতেই ভয় লাগে। এটাই বেশিরভাগ সময়ে ইনফেকশনের প্রথম সিগনাল দেয়। বিশেষ করে যখন মূত্রাশয় বা মূত্রনালীতে প্রদাহ হয় (যাকে ডাক্তারি ভাষায় সিস্টাইটিস বলে), তখন এই জ্বালাপোড়াটা খুব বেশি হয়। অনেক সময় বারবার বাথরুমে গেলেও মনে হবে প্রস্রাব পুরোটা বের হচ্ছে না, আর তার সাথেও এই ব্যথাটা থাকতে পারে। তাই প্রস্রাব করতে গিয়ে যদি এই ধরনের কোনো অস্বস্তি হয়, তাহলে এটাকে ছোট করে দেখবেন না।

ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয়:

প্রস্রাবের ইনফেকশন হলে আমাদের মূত্রাশয়টা খুব বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে একটু প্রস্রাব জমলেই মনে হয় বাথরুমে যাওয়া দরকার, অথচ হয়তো কিছুক্ষণ আগেই গেছেন। স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশিবার বাথরুমের দিকে দৌড়াতে হতে পারে, এমনকি রাতে ঘুমানোর সময়ও বারবার ওঠার প্রয়োজন হতে পারে। এটা খুবই বিরক্তিকর একটা লক্ষণ, যা আমাদের ঘুম বা কাজের মনোযোগ নষ্ট করে দেয়। শরীর হয়তো চেষ্টা করে বারবার প্রস্রাব বের করে দিয়ে জীবাণুগুলোকে বের করে দিতে, কিন্তু ইনফেকশনের কারণে এই তাগিদটা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এবং নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। মনে হবে যেন প্রস্রাবের বেগটা সবসময় লেগেই আছে, কিন্তু যখন বাথরুমে যাবেন, তখন হয়তো খুব সামান্য প্রস্রাবই হবে, আর তার সাথে জ্বালাপোড়া তো আছেই। স্কুলে বা অফিসে বা বাইরে কোথাও থাকলে এই ঘন ঘন বাথরুমে যাওয়ার তাগিদটা বেশ বিড়ম্বনার সৃষ্টি করতে পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে রাতের বেলা বিছানায় প্রস্রাব করার প্রবণতা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে, যদি তাদের ইনফেকশন হয়। তাই যদি দেখেন হঠাৎ করে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশিবার বাথরুমে যেতে হচ্ছে, তাহলে এটাও একটা লক্ষণ হতে পারে।

প্রস্রাবের জন্য তীব্র বেগ অনুভব করা:

প্রস্রাবের তীব্র বেগ অনুভব করা, মানে হঠাৎ করেই মনে হবে যেন এক্ষুনি বাথরুমে যেতেই হবে, না গেলেই হয়তো কাপড় নষ্ট হয়ে যাবে- এটাও প্রস্রাবের ইনফেকশনের একটা বড় লক্ষণ। এই বেগটা এতটাই তীব্র হয় যে হয়তো আপনি কোনো কাজ করছেন বা বাইরে আছেন, হঠাৎ করেই মনে হবে আর এক মিনিটও দেরি করা যাবে না। এটা হয় কারণ জীবাণুগুলো যখন মূত্রাশয়ে থাকে, তখন মূত্রাশয়ের পেশীগুলো খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং সামান্য প্রস্রাব জমলেই তীব্রভাবে সঙ্কুচিত হতে চায়। আর এই সঙ্কোচনের ফলই হলো এই প্রবল বেগ। অনেক সময় এই বেগের কারণে টয়লেটে পৌঁছানোর আগেই সামান্য প্রস্রাব বেরিয়েও যেতে পারে। এই লক্ষণটা বিশেষ করে রাতের বেলা বেশি কষ্ট দেয়, কারণ এর জন্য গভীর ঘুম ভেঙে বারবার বাথরুমে দৌড়াতে হয়। বয়স্কদের এবং ছোট বাচ্চাদের মধ্যে এই ধরনের অনিয়ন্ত্রিত বেগ বেশি দেখা যায়। স্বাভাবিকভাবে আমাদের প্রস্রাবের বেগ ধীরে ধীরে বাড়ে, কিন্তু ইনফেকশন হলে এটা হঠাৎ করেই খুব তীব্র হয়। তাই যদি এমনটা হয় যে প্রস্রাবের বেগ সামলানোই কঠিন হয়ে পড়ছে, তাহলে অবশ্যই সাবধান হোন।

তলপেটের নিচের দিকে ব্যথা বা অস্বস্তি লাগে:

তলপেটের একদম নিচের দিকে, নাভির ঠিক নিচে, যেখানে মূত্রাশয়টা থাকে, সেই জায়গাটাতে একটা স্থির ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে। এটা হালকা চাপ লাগার মতো থেকে শুরু করে বেশ তীব্র ব্যথাও হতে পারে। অনেক সময় মনে হবে পেটের নিচের অংশটা ভারি হয়ে আছে বা ফুলে আছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ব্যথাটা শ্রোণীচক্রের (পেটের একদম নিচের অংশ) ভেতরের দিকেও অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথাটা হয় মূলত মূত্রাশয় বা মূত্রনালীতে হওয়া প্রদাহের কারণে। ইনফেকশনের জন্য এই জায়গাগুলো ফুলে যায় আর তার ফলে চারপাশের নার্ভগুলোতে চাপ লাগে, আর এতেই ব্যথা হয়। অনেক সময় যখন মূত্রাশয় ভরা থাকে বা আপনি নড়াচড়া করেন, তখন ব্যথাটা আরও বেশি লাগতে পারে। পুরুষদের যদি প্রোস্টেট গ্রন্থিতে ইনফেকশন হয়, তাহলে তলপেটের সাথে সাথে কুঁচকি বা অণ্ডকোষেও ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথাটা সবসময় খুব তীব্র হবে এমন নয়, অনেক সময় এটা শুধু একটা স্থির অস্বস্তি বা চাপ হিসেবেও থাকতে পারে। এই তলপেটের ব্যথাটা প্রায়শই প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া আর ঘন ঘন প্রস্রাবের সাথে একসাথে দেখা দেয়, যা দেখে আমরা সহজেই ইনফেকশনটা ধরতে পারি।

প্রস্রাবের রঙ বা গন্ধ পরিবর্তন হওয়া:

প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায় এই বিষয় পরবর্তী বিষয়টি হচ্ছে- প্রস্রাবের রঙ বা গন্ধ পরিবর্তন হওয়া। প্রস্রাবের রঙ বা গন্ধ হঠাৎ করে অস্বাভাবিক মনে হওয়াটাও প্রস্রাবের ইনফেকশনের একটা জরুরি লক্ষণ। সাধারণত আমাদের প্রস্রাবের রঙ হালকা হলুদ বা প্রায় স্বচ্ছ থাকে এবং এর গন্ধ তেমন তীব্র হয় না। কিন্তু ইনফেকশন হলে প্রস্রাবের রঙটা গাঢ় হলুদ, ঘোলাটে বা ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে। কখনো কখনো সামান্য লালচেও লাগতে পারে (যদি রক্ত থাকে)। প্রস্রাব ঘোলাটে দেখালে বুঝতে হবে এর মধ্যে পুঁজ বা অনেক জীবাণু থাকতে পারে। গন্ধটাও খুব কড়া বা অপ্রীতিকর হয়ে যায়। অনেকে বলেন এটা কেমন যেন বাজে, ঝাঁঝালো বা আঁশটে গন্ধ। এই তীব্র দুর্গন্ধটা আসলে জীবাণুগুলোর বর্জ্য পদার্থের কারণে হয়। প্রস্রাবের এই ধরনের পরিবর্তনগুলো খালি চোখেই দেখা যায় বা অনুভব করা যায়, তাই এটা সহজেই চেনা যায়। যদিও কিছু খাবার খেলে বা ওষুধ খেলে প্রস্রাবের রঙ বা গন্ধ সাময়িকভাবে একটু বদলাতে পারে, তবে যদি দেখেন এই পরিবর্তনটা অবিরত চলছেই এবং তার সাথে অন্য লক্ষণও আছে, তাহলে এটা প্রস্রাবের ইনফেকশনকেই ইঙ্গিত করে। প্রস্রাবের এই পরিবর্তন দেখে ইনফেকশনটা কতটা তীব্র, সে সম্পর্কেও একটা ধারণা পাওয়া যায়।

প্রস্রাবের সাথে রক্ত যায়:

প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়াটা প্রস্রাবের ইনফেকশনের একটা বেশ গুরুতর লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় রক্তটা এত কম থাকে যে খালি চোখে দেখা যায় না, শুধু মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষার দরকার হয়। আবার কখনো কখনো প্রস্রাবের রঙ হালকা গোলাপি, লাল বা কালচে হয়ে যায়, যা দেখে সহজেই বোঝা যায় রক্ত যাচ্ছে। ইনফেকশনের কারণে মূত্রনালী বা মূত্রাশয়ের ভেতরের ছোট ছোট রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আর সেখান থেকেই রক্তক্ষরণ হয়। এই লক্ষণটা সাধারণত তখন দেখা যায় যখন ইনফেকশনটা বেশ গভীর হয় বা মূত্রাশয়ের দেয়ালকে ভালোভাবে ধরে ফেলে। প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়াটা সবসময়ই চিন্তার বিষয় এবং দ্রুত ডাক্তার দেখানো উচিত। প্রস্রাবের ইনফেকশন ছাড়াও কিডনিতে পাথর, কিডনি রোগ বা অন্য কোনো গুরুতর সমস্যার কারণেও রক্ত যেতে পারে। তাই এই লক্ষণটা দেখলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তার পরীক্ষা করে নিশ্চিত করবেন কেন রক্ত যাচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দেবেন। বাচ্চা বা বয়স্কদের প্রস্রাবের সাথে রক্ত গেলে এটাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

জ্বর আসে বা শরীর কাঁপিয়ে ঠান্ডা লাগে:

যদি প্রস্রাবের ইনফেকশনটা শুধু মূত্রাশয়ে না থেকে উপরের দিকে উঠে কিডনি পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তাহলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় মানে জ্বর আসে, বা শরীর কাঁপিয়ে ঠান্ডা লাগতে শুরু করে। নিচের দিকের ইনফেকশনে সাধারণত জ্বর হয় না। কিন্তু কিডনি ইনফেকশন হলে (যাকে ডাক্তারি ভাষায় পাইলোনেফ্রাইটিস বলে) শরীরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে। জ্বরের সাথে শরীর কাঁপতে পারে, প্রচণ্ড শীত লাগতে পারে, এমনকি গরমের দিনেও মনে হবে যেন ঠান্ডা লাগছে। এই লক্ষণগুলো দেখে বুঝতে হবে ইনফেকশনটা শরীরের ভেতরে আরও গভীরে ছড়িয়ে পড়ছে এবং এটা একটা জরুরি অবস্থা। কিডনি ইনফেকশন দ্রুত চিকিৎসা না করলে কিডনির মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। জ্বর আর ঠান্ডা লাগার সাথে প্রায়শই পিঠের নিচের অংশে বা কোমরের পাশে ব্যথাও থাকে, ঠিক যেখানে কিডনি থাকে। তাই প্রস্রাবের অন্য লক্ষণের সাথে যদি জ্বর আর ঠান্ডা লাগা দেখেন, তাহলে এক মুহূর্তও দেরি না করে ডাক্তারের কাছে চলে যান।

বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া:

অনেক সময় প্রস্রাবের ইনফেকশন, বিশেষ করে যদি এটা খুব বেশি হয় বা কিডনি পর্যন্ত চলে যায়, তাহলে বমি বমি লাগতে পারে বা সত্যিই বমি হয়ে যেতে পারে। যদিও এটা সরাসরি প্রস্রাবের রাস্তার সমস্যা নয়, তবে যখন শরীর কোনো বড় ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়ে, তখন পুরো শরীরটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে আর তার প্রভাবে হজমের সমস্যা হয়ে বমি ভাব হতে পারে। কিডনি ইনফেকশন হলে এই লক্ষণটা প্রায়ই জ্বর, পিঠ ব্যথা আর শরীর খুব খারাপ লাগার সাথে একসাথে দেখা দেয়। বমি হওয়ার ফলে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। তাই বমি ভাব বা বমি হলে একটু একটু করে পানি বা তরল খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন, যদি না ডাক্তার অন্য কিছু বলেন। এই লক্ষণটা বুঝিয়ে দেয় যে ইনফেকশনটা শরীরের ওপর বেশ চাপ ফেলছে এবং এর জন্য অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাহায্য দরকার। বিশেষ করে বাচ্চা আর বয়স্কদের ক্ষেত্রে বমি হলে তাদের ডিহাইড্রেশন এর ঝুঁকি বেড়ে যায়, তাই তাদের দিকে একটু বেশি খেয়াল রাখা দরকার।

পিঠের নিচের অংশে বা কোমরে ব্যথা:

যদি প্রস্রাবের ইনফেকশন মূত্রাশয় থেকে উপরের দিকে নল দিয়ে কিডনি পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তাহলে পিঠের একদম নিচের দিকে বা কোমরের পাশে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথাটা সাধারণত পাঁজরের শেষ অংশ থেকে কোমর পর্যন্ত একপাশে বা দুটো পাশেই হতে পারে, যেখানে কিডনিগুলো থাকে। কিডনি ইনফেকশনের ক্ষেত্রে (পাইলোনেফ্রাইটিস) এই ব্যথাটা একটা প্রধান লক্ষণ। ব্যথাটা কখনো একটানা হতে পারে, আবার কখনো থেমে থেমে হতে পারে এবং এর তীব্রতা একেকরকম হতে পারে। মনে হবে যেন ভেতরে গভীরে ব্যথা করছে। নড়াচড়া করলে বা বিশেষ কোনো ভঙ্গিতে বসলে ব্যথাটা বাড়তে পারে। কিডনিতে যখন ইনফেকশন হয় আর সেখানে প্রদাহ হয়, তখন এই অঞ্চলের নার্ভগুলো উত্তেজিত হয়ে ব্যথা তৈরি করে। এই ব্যথাটা প্রায়শই জ্বর, ঠান্ডা লাগা আর বমি বমি ভাবের সাথে একসাথে দেখা যায়। পিঠের নিচের বা কোমরের ব্যথা যদি প্রস্রাবের অন্য লক্ষণের সাথে দেখেন, তাহলে এটা কিডনি ইনফেকশনের স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় এবং দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়াটা খুব জরুরি। কিডনি ইনফেকশনকে অবহেলা করলে কিডনির স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

শরীর খুব ক্লান্ত বা দুর্বল লাগা:

প্রস্রাবের ইনফেকশন হলে আমাদের শরীরের ভেতরের সৈন্যরা (ইমিউন সিস্টেম) জীবাণুদের সাথে লড়াই করতে শুরু করে। এই লড়াইয়ে শরীরের অনেক শক্তি খরচ হয়। এর ফলে আমাদের শরীর খুব ক্লান্ত আর দুর্বল লাগতে পারে। এমনকি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরও মনে হবে যেন শরীরে কোনো শক্তিই নেই। এই ক্লান্তিটা হালকা থেকে শুরু করে এতটাই তীব্র হতে পারে যে রোজকার সাধারণ কাজগুলো করতেও কষ্ট হয়। মনে হবে যেন শরীরটা কেউ নিংড়ে নিয়েছে। এই লক্ষণটা প্রায়শই জ্বর, শরীর ব্যথা আর সব মিলিয়ে একটা অসুস্থ ভাবনার সাথে দেখা যায়। ইনফেকশন যত গুরুতর হয়, ক্লান্তি আর দুর্বলতাও তত বেশি হতে পারে। বিশেষ করে যাদের বয়স বেশি বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই একটু দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এই ক্লান্তিটা বেশি বোঝা যায়। অনেক সময় বয়স্কদের ক্ষেত্রে শুধু ক্লান্তিই হয়তো একমাত্র লক্ষণ হতে পারে, কারণ তাদের হয়তো প্রস্রাবের অন্য লক্ষণগুলো (যেমন জ্বালাপোড়া বা ঘন ঘন প্রস্রাব) ততটা স্পষ্ট নাও বোঝা যেতে পারে। এই ক্লান্তি আর দুর্বলতা দেখেও বোঝা যায় যে শরীরটা ঠিক নেই এবং এর চিকিৎসার প্রয়োজন।

কাদের প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?

আমরা উপর বিস্তারিতভাবে জেনে নিলাম প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায় সে সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো কাদের প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্রস্রাবের ইনফেকশন যে কোনো মানুষেরই হতে পারে, তবে কিছু কারণ আছে যা এই সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এই কারণগুলো জেনে রাখলে একটু সতর্ক থাকা যায়। চলুন জেনে আসি কাদের এই ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে একটু বেশি থাকে:

মেয়েদের ঝুঁকি বেশি কেন?

মেয়েদের প্রস্রাবের রাস্তাটা (মূত্রনালী) ছেলেদের চেয়ে অনেক ছোট হয়, আর এটা মলদ্বারের খুব কাছাকাছি থাকে। এই কারণে জীবাণুগুলো সহজেই মলদ্বার থেকে মূত্রনালীতে ঢুকে মূত্রাশয় পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। যৌন মিলনের সময়ও জীবাণু মূত্রনালীতে ঢুকতে পারে। গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হয়, যা প্রস্রাবের রাস্তার কার্যকারিতা কিছুটা বদলে দেয় আর এতে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে। বয়স বাড়লে, বিশেষ করে মেনোপজের পর মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন (estrogen) হরমোন কমে যায়, এতে মূত্রনালীর টিস্যুগুলো পাতলা আর দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে জীবাণু সহজে বাসা বাঁধতে পারে। কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, যেমন ডায়াফ্রাম বা স্পার্মিসাইড (spermicide) ব্যবহার করলেও ইনফেকশনের ঝুঁকি কিছুটা বাড়তে পারে।

বয়স্কদের ঝুঁকি:

বয়স্ক মানুষ, বিশেষ করে যারা বিছানাগত বা যাদের চলাফেরায় সমস্যা আছে, তাদের প্রস্রাবের ইনফেকশন বেশি হয়। বয়সের সাথে সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু কমে আসে। এছাড়া মূত্রাশয় পুরোপুরি খালি করতে সমস্যা হওয়া, পুরুষদের প্রোস্টেট বড় হয়ে যাওয়া, এবং ডায়াবেটিসের মতো অন্য অসুস্থতাও ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক সময় বয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার মতো পরিচিত লক্ষণগুলো স্পষ্ট নাও দেখা দিতে পারে, তার বদলে তারা হয়তো একটু খিটখিটে হয়ে যান, গুলিয়ে ফেলেন বা খুব দুর্বল হয়ে পড়েন- এগুলোও ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি:

ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণত একটু কম থাকে, তাই তারা সহজেই যেকোনো ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে পারেন। যাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে, তাদের প্রস্রাবের রাস্তায় জীবাণু বেড়ে ওঠার জন্য বেশ উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। ডায়াবেটিসের কারণে অনেক সময় মূত্রাশয়ের স্নায়ুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে (Diabetic Neuropathy), যার ফলে মূত্রাশয় পুরোপুরি খালি হতে চায় না আর প্রস্রাব জমে থাকার কারণে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে।

কিডনিতে পাথর বা প্রস্রাবের রাস্তায় অন্য সমস্যা থাকলে

যদি কিডনিতে পাথর থাকে বা প্রস্রাবের রাস্তায় অন্য কোনো বাঁধা থাকে, যেমন মূত্রনালী সরু হয়ে যাওয়া বা জন্মগত কোনো ত্রুটি, তাহলে প্রস্রাব ঠিকঠাকভাবে বের হতে পারে না। প্রস্রাব জমে থাকলে সেই জমে থাকা প্রস্রাবে জীবাণু খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে এবং ইনফেকশন তৈরি করতে পারে। যাদের প্রস্রাবের রাস্তায় কোনো অপারেশান হয়েছে বা মূত্রনিষ্কাশনযন্ত্র লাগানো আছে, তাদেরও জীবাণু ঢোকার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে:

কিছু অসুখ, যেমন HIV/AIDS, বা যারা ক্যান্সারের জন্য কেমোথেরাপি নিচ্ছেন, বা যাদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে এবং সেই কারণে ওষুধ খেতে হচ্ছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তাদের ক্ষেত্রে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল থাকলে জীবাণুদের সাথে লড়াই করা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস বা স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি এর মতো কিছু অসুখ যা মূত্রাশয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ নষ্ট করে দেয়, সেগুলোও ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

কখন ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে?

তাহলে প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা বিস্তারিতভাবে জেনে আসলাম কাদের প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি? এখন আমরা জানবো কখণ ডাক্তারের নিকট যেতে হবে আমাদের তা সম্পর্কে। 

কখন-ডাক্তারের-কাছে-যেতে-হবে

প্রস্রাবে ইনফেকশনের কোনো লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু হবে, তত তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে এবং বড় কোনো সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি কমবে। তবে কিছু লক্ষণ আছে যা দেখলে একটুও দেরি না করে সরাসরি ডাক্তারের কাছে চলে যাওয়া উচিত। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো:

  • যদি প্রচণ্ড ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হয়: যদি প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়াটা এত বেশি হয় যে আপনি সহ্য করতে পারছেন না, বা এই ব্যথাটা ক্রমশ বাড়ছে, তাহলে দেরি না করে ডাক্তার দেখান। এই তীব্র ব্যথা ইঙ্গিত করে যে ইনফেকশনটা বেশ সক্রিয় অবস্থায় আছে এবং জরুরি চিকিৎসা দরকার। দোকানে যে ব্যথানাশক ওষুধ পাওয়া যায়, সেগুলো হয়তো সাময়িক আরাম দেবে, কিন্তু ইনফেকশনটাকে সারাবে না।
  • জ্বর, গা কাঁপিয়ে ঠান্ডা লাগা বা কোমর ব্যথা হলে: যদি প্রস্রাবের অন্য লক্ষণগুলোর সাথে সাথে আপনার জ্বর আসে (বিশেষ করে যদি শরীরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর বেশি হয়), শরীর কাঁপিয়ে ঠান্ডা লাগে বা পিঠের একদম নিচের অংশে বা কোমরের পাশে তীব্র ব্যথা হয়, তাহলে এটা কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। মনে রাখবেন, কিডনি ইনফেকশন একটা সিরিয়াস ব্যাপার এবং এর জন্য ইমিডিয়েট চিকিৎসা দরকার। দ্রুত চিকিৎসা না করালে কিডনির স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
  • প্রস্রাবের সাথে যদি রক্ত যায়: যদি দেখেন আপনার প্রস্রাবের রঙ গোলাপি, লালচে বা কালচে লাগছে, বা প্রস্রাবের সাথে স্পষ্ট রক্ত দেখা যাচ্ছে, তাহলে এটা একটা চিন্তার বিষয়। প্রস্রাবের ইনফেকশন ছাড়াও কিডনিতে পাথর, কিডনি রোগ বা অন্য কোনো গুরুতর সমস্যার কারণেও রক্ত যেতে পারে। তাই প্রস্রাবের সাথে রক্ত গেলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান এবং কারণটা জেনে নিন।
  • চিকিৎসা শুরুর পরও যদি সমস্যা না কমে বা বাড়ে: যদি আপনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া শুরু করেছেন, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে লক্ষণগুলো কমছে না, বরং আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে, তাহলে আবার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। এর মানে হতে পারে যে ওষুধটা ঠিকঠাক কাজ করছে না বা ইনফেকশনটা অন্য ধরনের, যার জন্য অন্য ওষুধের দরকার। ডাক্তার হয়তো আপনাকে অন্য ওষুধ দেবেন বা আরও কিছু পরীক্ষা করতে বলতে পারেন।
  • যদি আপনি গর্ভবতী হন বা অন্য কোনো বড় রোগ থাকে: যদি আপনি গর্ভবতী হন এবং প্রস্রাবের ইনফেকশনের কোনো লক্ষণ দেখেন, তাহলে এক মুহূর্তও দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এই রোগের গর্ভাবস্থায় চিকিৎসা না করা মা এবং বাচ্চা উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এছাড়া আপনার যদি আগে থেকেই ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ বা এমন কোনো অসুখ থাকে যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তাহলে প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা করানো জরুরি, কারণ এই অবস্থায় ইনফেকশন দ্রুত গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।

প্রস্রাবের ইনফেকশন কেন হয়?

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা জেনে এসেছি প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায় সে সম্পর্কে এবং আমরা একই সাথে আরো বেশ কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। চলুন এবার জেনে আসি প্রস্রাবের ইনফেকশন কেন হয়? সে সম্পর্ক।

প্রস্রাবের ইনফেকশনের মূল কারণ হলো জীবাণু, বেশিরভাগ সময়েই ব্যাকটেরিয়া। আমাদের মলাশয়ে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে যার নাম ই. কোলাই (E. coli)। এই ব্যাকটেরিয়াই সবচেয়ে বেশি প্রস্রাবের ইনফেকশন ঘটায়। এই জীবাণুগুলো মলদ্বার থেকে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে ঢুকে মূত্রাশয় বা কিডনি পর্যন্ত চলে যায়। মেয়েদের প্রস্রাবের রাস্তা ছোট হওয়ায় এবং এটা মলদ্বারের কাছাকাছি থাকায় তাদের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া ঢোকার ঝুঁকি একটু বেশি। টয়লেট ব্যবহারের পর ঠিকভাবে পরিষ্কার না করলেও বা ভুল পদ্ধতিতে পরিষ্কার করলেও জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। যৌন মিলনের সময়ও ব্যাকটেরিয়া প্রস্রাবের রাস্তায় প্রবেশ করতে পারে। খুব কম ক্ষেত্রে ফাঙ্গাস বা ভাইরাসের কারণেও ইনফেকশন হতে পারে। এছাড়া প্রস্রাবের রাস্তায় যদি কোনো বাধা থাকে, যেমন কিডনিতে পাথর, প্রোস্টেট বড় হওয়া, বা জন্মগত কোনো ত্রুটি, তাহলে প্রস্রাব জমে জীবাণু বাড়ার সুযোগ পায়।

প্রস্রাবের ইনফেকশন কীভাবে ধরা পড়ে?

প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়েছে কিনা, সেটা জানার জন্য ডাক্তার আপনার কাছ থেকে সব লক্ষণগুলো শুনে নেবেন এবং হয়তো একটু পরীক্ষা করবেন। তারপর কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষার দরকার হয়। সবচেয়ে বেশি করা হয় প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় প্রস্রাবের মধ্যে কোনো জীবাণু আছে কিনা, পুঁজ আছে কিনা বা রক্ত আছে কিনা দেখা হয়। প্রস্রাব কালচার পরীক্ষাটাও খুব জরুরি। এতে প্রস্রাবের নমুনা ল্যাবে পাঠিয়ে দেখা হয় ঠিক কোন ধরনের জীবাণু আছে এবং কোন ওষুধ দিয়ে সেগুলোকে মারা যাবে। যদি ইনফেকশন বারবার হতে থাকে বা কিডনি ইনফেকশনের সন্দেহ হয়, তাহলে আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান বা সিস্টোস্কোপির মতো পরীক্ষা করে দেখা হতে পারে প্রস্রাবের রাস্তার ভেতরে কোনো সমস্যা আছে কিনা।

ইনফেকশন হলে কী চিকিৎসা নিতে হয়?

প্রস্রাবের ইনফেকশনের প্রধান চিকিৎসা হলো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ। প্রস্রাব কালচার রিপোর্টের ভিত্তিতে ডাক্তার ঠিক করেন কোন অ্যান্টিবায়োটিকটা আপনার জন্য ভালো হবে। কতদিন ওষুধ খেতে হবে সেটা নির্ভর করে ইনফেকশনটা কতটা গুরুতর আর কোথায় হয়েছে তার ওপর। সাধারণত কয়েকদিনের কোর্স হয়, তবে কিডনি ইনফেকশনের মতো সিরিয়াস হলে ওষুধ বেশি দিন খেতে হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করার কয়েক দিনের মধ্যেই আপনি হয়তো ভালো বোধ করতে শুরু করবেন, কিন্তু মনে রাখবেন, ডাক্তার যতদিন ওষুধ খেতে বলেছেন ঠিক ততদিনই ওষুধটা চালিয়ে যেতে হবে, যদি আপনি সুস্থও বোধ করেন। কোর্স শেষ না করলে ইনফেকশন আবার ফিরে আসতে পারে বা জীবাণুগুলো ওষুধের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। চিকিৎসার সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা খুব জরুরি, এতে প্রস্রাবের সাথে জীবাণু বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। ব্যথানাশক ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায়

চলুন প্রিয় পাঠকবৃন্দ এবার আলোচনা করা যাক ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায় সম্পর্কে। প্রসাবে ইনফেকশন, যাকে আমরা সাধারণভাবে ইউরিন ইনফেকশন বলি, এটি একটি অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। বিশেষ করে নারীরা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন। তবে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ও সচেতনতা অবলম্বন করলে এই সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়। নিচে প্রসাবে ইনফেকশন দূর করার ১০টি কার্যকর উপায় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

  • ০১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন: যারা দিনে কম পানি পান করেন, তাদের প্রসাবে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করলে শরীরের টক্সিন বা বর্জ্য উপাদানগুলো প্রসাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। বেশি পানি খেলে বারবার প্রসাব হয়, যার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়াগুলো ধীরে ধীরে দূর হয়ে যায়। তাই সুস্থ থাকতে প্রতিদিন নিয়ম করে বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
  • ০২. প্রসাব চেপে না রাখা: অনেকেই প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় ধরে প্রসাব আটকে রাখেন। এতে মূত্রথলিতে ব্যাকটেরিয়া জমে গিয়ে ইনফেকশন তৈরি হয়। প্রসাব চাপ পেলেই সেটি দ্রুত ছাড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
  • ০৩. সঠিকভাবে যৌনাঙ্গ পরিষ্কার রাখা: প্রতিদিন গোসলের সময় এবং টয়লেট ব্যবহারের পর সামনে থেকে পিছনে পরিষ্কার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ভুলভাবে পরিষ্কার করলে পায়ুপথের ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে ঢুকে পড়ে, যা ইনফেকশনের মূল কারণ হতে পারে। নরম এবং পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করে শুকনো রাখতে হবে, যেন আর্দ্রতা না থাকে।
  • ০৪. তুলসী পাতা সেবন করুন: তুলসী পাতায় থাকা প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক উপাদান প্রসাবে ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২-৩টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। চাইলে তুলসী পাতার রস সামান্য মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • ০৫. দই বা টকদই খাওয়ার অভ্যাস: দইয়ে থাকে উপকারী ব্যাকটেরিয়া যেগুলো শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সহায়ক। প্রতিদিন এক কাপ টকদই খাওয়ার অভ্যাস করলে মূত্রনালীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধে শরীর সক্ষম হয়।
  • ০৬. নারিকেল পানি পান করুন: নারিকেল পানি শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং মূত্রনালীকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। দিনে একবার নারিকেল পানি পান করলে শরীরের পানির ঘাটতিও পূরণ হয় এবং প্রসাবের জ্বালাপোড়া অনেকটাই কমে।
  • ০৭. খাবারে ফলমূল ও শাকসবজি যোগ করুন: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন আমলকি, লেবু, কমলা, পেয়ারা, টমেটো ইত্যাদি রাখলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি কমে। এসব ফল প্রসাবের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।
  • ০৮. পরিষ্কার অন্তর্বাস ব্যবহার করুন: ঘামে ভেজা কিংবা অপরিষ্কার অন্তর্বাস ব্যবহার করলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। দিনে অন্তত একবার অন্তর্বাস বদলানো উচিত। তুলার তৈরি হালকা ও পরিষ্কার অন্তর্বাস ব্যবহার করাই ভালো। রাতে ঘুমানোর সময় ঢিলে জামাকাপড় পরুন যাতে বায়ু চলাচল ঠিক থাকে।
  • ০৯. ঘরোয়া মিশ্রণ সেবন করুন (জলজিরা ও মেথি): এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ জলজিরা ও আধা চামচ মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেই পানি পান করুন। এটি মূত্রনালীর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে সাহায্য করে। চাইলে মেথি গুঁড়ো করে গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • ১০. ডাক্তারের পরামর্শ নিন: যদি ইনফেকশন বারবার হয় বা জ্বালাপোড়া, জ্বর, পিঠে ব্যথা দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ইনফেকশন ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলেও কখনো কখনো অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।

প্রসাবে ইনফেকশন একবার হলে তা পুনরায় হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই প্রতিদিনের জীবনে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললেই এই সমস্যা সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। উপরে উল্লেখিত প্রতিটি উপায়ই স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ, যা নিয়মিত চর্চা করলে আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন ইনফেকশন থেকে মুক্ত হয়ে।

ছেলেদের প্রস্রাবের ইনফেকশন

মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের প্রস্রাবের ইনফেকশন একটু কম হয়, কারণ তাদের প্রস্রাবের রাস্তাটা লম্বা। তবে প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে গেলে বা প্রোস্টেটে ইনফেকশন হলে ছেলেদেরও ইউটিআই হতে পারে। প্রোস্টেট বড় হলে সেটা প্রস্রাবের রাস্তায় চাপ দেয়, এতে মূত্রাশয় ঠিকঠাক খালি হতে পারে না আর প্রস্রাব জমে ইনফেকশন হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রেও লক্ষণগুলো মেয়েদের মতোই হয়- জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাব, ব্যথা ইত্যাদি। যদি প্রোস্টেটে ইনফেকশন হয়, তাহলে কুঁচকি বা অণ্ডকোষেও ব্যথা থাকতে পারে এবং জ্বরও আসতে পারে। ছেলেদের ইউটিআই হলে ডাক্তার সাধারণত এর কারণ খুঁজে বের করার জন্য একটু বেশি পরীক্ষা করেন। চিকিৎসা মেয়েদের মতোই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে করা হয়।

শিশুদের-প্রস্রাবের-ইনফেকশন

শিশুদের প্রস্রাবের ইনফেকশন

ছোট বাচ্চাদের যখন প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়, তখন সেটা বোঝা একটু কঠিন হতে পারে, কারণ তারা হয়তো ঠিক করে বলতে পারে না তাদের কী হচ্ছে। বাচ্চাদের জ্বর আসতে পারে, বমি বমি লাগতে পারে, খেতে চাইতে নাও পারে, খুব কান্না করতে পারে বা প্রস্রাব করার সময় কষ্ট পেতে পারে, আর প্রস্রাবটা দুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে। যে বাচ্চারা আগে বিছানায় প্রস্রাব করত না, হঠাৎ করে আবার শুরু করলে সেটাও একটা লক্ষণ হতে পারে। বাচ্চাদের ইউটিআই দ্রুত চিকিৎসা না করলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। তাই বাচ্চাদের মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখলে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

প্রস্রাবের ইনফেকশন আর যৌনতার সম্পর্ক

হ্যাঁ, প্রস্রাবের ইনফেকশন আর যৌনতার মধ্যে একটা যোগসূত্র আছে, বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে। যৌন মিলনের সময় জীবাণু মূত্রনালীতে ঢুকতে পারে, যা ইনফেকশনের কারণ হতে পারে। তাই অনেক মহিলা যৌন মিলনের পর ইউটিআই অনুভব করেন। এটা অনেকের কাছে 'হানিমন সিস্টাইটিস' নামেও পরিচিত। যৌন মিলনের পর প্রস্রাব করলে জীবাণু বের হয়ে যেতে সাহায্য করে। কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিও ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যদি মনে হয় আপনার ক্ষেত্রে যৌনতার কারণে বারবার ইনফেকশন হচ্ছে, তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

প্রসাবে ইনফেকশন হলে কী খেতে হবে

আপনি যদি প্রসাবে ইনফেকশন হয়ে থাকে তবে আপনি কোন জিনিসটি খেতে হবে এবং কোন জিনিসটি এড়িয়ে চলতে হবে তা জানা আপনার জন্য খুবই জরুরী। তাই চলুন জেনে আসি প্রসাবে ইনফেকশন হলে কী খেতে হবে তা সম্পর্কে।

  • প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। বেশি পানি খেলে শরীর থেকে টক্সিন এবং ব্যাকটেরিয়া প্রসাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। পানি ইনফেকশন কমাতে সবচেয়ে কার্যকর।
  • নারিকেল পানি একটি প্রাকৃতিক ডিউরেটিক (প্রস্রাব বাড়ায়) যা প্রসাবের মাধ্যমে জীবাণু বের করতে সাহায্য করে এবং শরীর ঠান্ডা রাখে।
  • তুলসী পাতা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণে ভরপুর। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২-৩টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • দইয়ে থাকে উপকারী ব্যাকটেরিয়া (প্রোবায়োটিক), যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঠেকায় এবং পেট ও মূত্রনালীর স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • লেবু, কমলা, পেয়ারা, আমলকি ইত্যাদি খেলে প্রসাবের অম্লতা বাড়ে এবং ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।
  • এদের মধ্যে পানি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। এগুলো শরীর ঠান্ডা রাখে এবং প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায়, ফলে ইনফেকশন কমে।
  • এটি ঘরোয়া উপায়ে ইনফেকশন কমাতে দারুণ কার্যকর। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করলে উপকার পাওয়া যায়।

প্রসাবে ইনফেকশন হলে কী খাওয়া উচিত নয়

প্রিয় পাঠক আমরা উপরে বিস্তারিতভাবে জেনে এসেছি প্রসাবে ইনফেকশন হলে কী খেতে হবে তা সম্পর্কে। তবে আপনি কি জানেন প্রসাবে ইনফেকশন হলে কী খাওয়া উচিত নয়? যদি জেনে না থাকে চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক প্রসাবে ইনফেকশন হলে কী খাওয়া উচিত নয় তা সম্পর্কে।

  • চা ও কফিতে ক্যাফেইন থাকে, যা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বাড়ায় এবং মূত্রনালীকে উত্তেজিত করে। ইনফেকশনের সময় এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।
  • অতিরিক্ত ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার মূত্রনালীকে উত্তপ্ত করে তোলে এবং জ্বালাপোড়া আরও বাড়ায়। এই সময় ঝাল কম খাওয়া উচিত।
  • আনারস, তেঁতুল, পাকা কলা ইত্যাদি কিছু ফলে এমন উপাদান থাকে যা মূত্রনালীর টিস্যুতে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, তাই এই সময় এগুলো কম খাওয়াই ভালো।
  • অ্যালকোহল শরীরকে ডিহাইড্রেট করে এবং কোমল পানীয়তে থাকা কেমিক্যাল ইনফেকশন বাড়াতে পারে। তাই এই ধরনের পানীয় একেবারে এড়িয়ে চলা উচিত।
  • চিনি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। ইনফেকশনের সময় মিষ্টি বা মিষ্টি খাবার বেশি খাওয়া উচিত নয়।
  • ফাস্টফুডে থাকা অতিরিক্ত তেল ও প্রিজারভেটিভ শরীরে বিষক্রিয়ার মতো কাজ করতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

প্রসাবে ইনফেকশন হলে শুধু ওষুধ নয়, সঠিক খাদ্যাভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ। উপরের খাবারগুলো খেলে ইনফেকশন দ্রুত সারে এবং যা এড়ানো উচিত তা না খেলেই দ্রুত আরোগ্য লাভ সম্ভব। শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত পানি পান, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি। তাই খাবারের বিষয়ে সচেতন থাকুন, ইনফেকশনকে দূরে রাখুন।

শেষ মন্তব্য

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা আজকের আর্টিকেল অর্থাৎ প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়’এর শেষ অংশে চলে এসেছি এবং শেষ মন্তব্য হিসেবে বলা যায় যে- প্রস্রাবের ইনফেকশন আসলে খুব অপরিচিত কোনো সমস্যা নয়। এর লক্ষণগুলোও বেশ চেনা চেনা। প্রস্রাবের সময় কষ্ট হওয়া, বারবার বাথরুমে যাওয়া, তলপেটে ব্যথা- এই ধরনের কিছু হলেই সতর্ক হয়ে যান। বিশেষ করে যদি জ্বর আসে বা কোমর ব্যথা করে, তাহলে একদমই দেরি করবেন না, দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার যেমন ওষুধ দেবেন, সেটা ঠিকঠাক মেনে চলুন এবং প্রচুর পানি পান করুন। কিছু সাধারণ অভ্যাস মেনে চললে হয়তো এই সমস্যাটা হওয়া থেকেই নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। মনে রাখবেন, শরীরের ছোটখাটো সমস্যাকেও গুরুত্ব দেওয়া ভালো। প্রিয় পাঠক নিজের শরীরের যত্ন নিন এবং এই তথ্যসমূহ আপনার নিজের ও প্রিয়জনের সুস্থ জীবনের জন্য খুবই কার্যকর হতে পারে। তাই আজ থেকেই সচেতন হোন এবং সুস্থ থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

BLOGGER MRH-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url