গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি

প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়

গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি আপনি কি সেটি জানেন? যদি না জেনে থাকেন তবে চলুন বিস্তারিতভাবে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক।

গর্ভাবস্থায়-ইউরিন-ইনফেকশন-হলে-এন্টিবায়োটিক-ছাড়া-ভালো-হওয়ার-উপায়-কি

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা আজকের আর্টিকেলটি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের উপর ভিত্তি করে আলোচনা করবো যাতে আমাদের বুঝতে সুবিধা হয়।

পোস্ট সূচিপত্র: গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি

গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি

গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনের এক বিশেষ সময়। এই সময়ে শরীরের ভেতর অনেক পরিবর্তন আসে, যা কিছু সাধারণ সমস্যাকেও জটিল করে তুলতে পারে। এমনই একটি পরিচিত সমস্যা হলো প্রস্রাবের সংক্রমণ বা ইউরিন ইনফেকশন। সাধারণ সময়ে ইউরিন ইনফেকশন হলে হয়তো আমরা সহজেই এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করে থাকি, কিন্তু গর্ভাবস্থায় ওষুধের ব্যাপারে থাকতে হয় অনেক বেশি সতর্ক। মায়ের স্বাস্থ্য এবং গর্ভের শিশুর সুস্থতা, দুটোই খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে অনেকেই জানতে চান, এন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করে বা এর পাশাপাশি অন্য কোনো উপায়ে কীভাবে ভালো থাকা যায়? এই আর্টিকেলে আমরা সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, তবে শুরুতেই মনে রাখা জরুরি যে কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায়, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। ঘরোয়া প্রতিকার বা জীবনযাত্রার পরিবর্তন কেবল সহায়ক হতে পারে, চিকিৎসা নয়।

গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হওয়া তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়। এর কারণ শরীরের হরমোনের পরিবর্তন এবং বড় হতে থাকা জরায়ুর কারণে মূত্রনালীর উপর চাপ সৃষ্টি হওয়া, যা মূত্র প্রবাহকে ধীর করে দেয়। এতে ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধির সুযোগ বাড়ে। যদি সময়মতো এই সংক্রমণ চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। অকাল প্রসব, কম ওজনের শিশু জন্মদান এমনকি সেপসিসের মতো জটিলতাও দেখা দিতে পারে। তাই, সামান্যতম লক্ষণ দেখা দিলেই সতর্ক হওয়া এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। এন্টিবায়োটিক সাধারণত কার্যকর চিকিৎসা হলেও, গর্ভাবস্থায় কিছু এন্টিবায়োটিক নিরাপদ নয়। তাই ডাক্তার সঠিক এবং নিরাপদ ওষুধটিই বেছে নেবেন। কিন্তু ওষুধের পাশাপাশি বা প্রতিরোধের উপায় হিসেবে কিছু জিনিস আমরা নিজেরাই করতে পারি, যা ইউরিন ইনফেকশন মোকাবেলা করতে বা এর পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

নিচে কয়েকটি ঘরোয়া উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো, যেগুলো দীর্ঘমেয়াদে এন্টিবায়োটিক ছাড়াও ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা: এটি মূত্রাশয় থেকে ব্যাকটেরিয়া বের করে দিতে সাহায্য করে। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা জরুরি। পানি ছাড়াও তরল খাবার যেমন পাতলা স্যুপ, ফলের রস ইত্যাদি গ্রহণ করতে পারেন।
  • ঘন ঘন প্রস্রাব করা: প্রস্রাবের বেগ আসলে তা চেপে না রেখে প্রস্রাব করা উচিত। দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখলে ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ পায়।
  • প্রস্রাবের পর সঠিক পথ পরিষ্কার করা: প্রস্রাবের পর সামনে থেকে পেছনের দিকে মুছতে হবে। এতে মলদ্বারের ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে প্রবেশ করতে পারে না।
  • সুতি কাপড় পড়: সিনথেটিক বা টাইট অন্তর্বাস পরিহার করে ঢিলেঢালা সুতি কাপড় পড়া উচিত। সুতি কাপড়ে বাতাস চলাচল করতে সাহায্য করে এবং আর্দ্রতা কমিয়ে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি রোধ করে।
  • যৌন সম্পর্কের আগে ও পরে প্রস্রাব করা: যৌন সম্পর্কের সময় ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে প্রবেশ করতে পারে। তাই এর আগে ও পরে প্রস্রাব করলে সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব।
  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ: ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং মূত্রের অম্লতা বৃদ্ধি করে, যা ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। আমলকি, কমলা, লেবু ইত্যাদি ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস।
  • ক্র্যানবেরি জুস পান করা (ডাক্তারের পরামর্শে): কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ক্র্যানবেরি জুস ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ব্যাকটেরিয়া আটকে রাখতে সাহায্য করে। তবে গর্ভাবস্থায় এটি কতটা নিরাপদ তা নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত ক্র্যানবেরি জুস পরিহার করা উচিত।
  • প্রোবায়োটিক গ্রহণ (ডাক্তারের পরামর্শে): প্রোবায়োটিক অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কিছু প্রোবায়োটিক ইউরিনারি ট্র্যাক্টের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী হতে পারে, তবে গর্ভাবস্থায় ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • বেকিং সোডা মিশ্রিত পানি পান করা (ডাক্তারের পরামর্শে): অল্প পরিমাণে বেকিং সোডা এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করলে মূত্রের অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া কমাতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় এটি নিয়মিত পান করা উচিত নয় এবং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটি গ্রহণ করা উচিত না।
  • পেটের নিচের দিকে গরম সেঁক দেওয়া: তলপেটে হালকা গরম সেঁক দিলে মূত্রাশয়ের ব্যথা এবং অস্বস্তি কিছুটা কমতে পারে।
  • অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন পরিহার করা: অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন মূত্রাশয়কে উত্তেজিত করতে পারে এবং ডিহাইড্রেশন ঘটাতে পারে, যা ইউটিআই-এর লক্ষণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • কৃত্রিম সুগন্ধিযুক্ত পণ্য পরিহার করা: কৃত্রিম সুগন্ধিযুক্ত সাবান, বাথ বোমা, বা ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এগুলো মূত্রনালীতে জ্বালাতন সৃষ্টি করতে পারে।
  • টাইট পোশাক পরিহার করা: টাইট জিন্স বা প্যান্টের মতো পোশাক পরিহার করা উচিত, যা মূত্রনালীর উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং বাতাস চলাচল ব্যাহত করতে পারে।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া: পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ: সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়।
  • ধূমপান পরিহার করা: ধূমপান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। গর্ভাবস্থায় ধূমপান সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা উচিত।
  • মানসিক চাপ কমানো: অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে পারে। তাই যোগা, মেডিটেশন বা পছন্দের কাজের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
  • দীর্ঘক্ষণ ভেজা কাপড় পরিধান না করা: সাঁতার কাটার পর বা অতিরিক্ত ঘামলে দ্রুত ভেজা কাপড় পরিবর্তন করা উচিত। ভেজা কাপড় ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।
  • তলপেটের পেশী শক্তিশালী করার ব্যায়াম (ডাক্তারের পরামর্শে): কিছু হালকা ব্যায়াম তলপেটের পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে, যা মূত্রাশয়ের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় যেকোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
  • লবঙ্গ তেল (ডাক্তারের পরামর্শে): লবঙ্গ তেলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় এটি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সরাসরি ব্যবহার না করে, কোনো ভেজিটেবল অয়েলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • রসুন খাওয়া: রসুনে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রতিদিনের খাবারে রসুন যোগ করলে তা সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
  • আদা খাওয়া: আদার মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ইউটিআই-এর কারণে হওয়া প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • পেঁয়াজের রস (ডাক্তারের পরামর্শে): পেঁয়াজের রসে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় এটি পান করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • আপেল সিডার ভিনেগার (ডাক্তারের পরামর্শে): কিছু লোক মনে করে আপেল সিডার ভিনেগার ইউটিআই-এর জন্য উপকারী। তবে গর্ভাবস্থায় এটি কতটা নিরাপদ এবং কার্যকর তা নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এটি সরাসরি পান না করে, পানির সাথে মিশিয়ে অল্প পরিমাণে গ্রহণ করা যেতে পারে।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো: গর্ভাবস্থায় নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি। এর মাধ্যমে কোনো সংক্রমণ শুরু হলে দ্রুত শনাক্ত করা যায় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়।

মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘরোয়া উপায়গুলো শুধুমাত্র উপশম করতে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু এগুলো অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প নয়। আপনার যদি ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ থাকে, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে দৈনন্দিন অভ্যাস কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

আমরা উপরে জেনে নিলাম গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি তা নিয়ে। আমরা এখন আলোচনা করবো এবং জানবো গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে দৈনন্দিন অভ্যাস কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

প্রতিদিনের জীবনযাপনে সামান্য কিছু পরিবর্তন আনলেই গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই সময়ে নারীর শরীরে নানা ধরণের জটিলতা তৈরি হয়, যার মধ্যে ইউরিন ইনফেকশন অন্যতম। কিন্তু আমরা যদি কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলি, তাহলে ওষুধ ছাড়াও সহজে এই সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। নিচে এমন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস তুলে ধরা হলো, যা নিয়মিত অনুসরণ করলে আপনি নিজেই নিজেকে এই অসুবিধা থেকে রক্ষা করতে পারবেন।

পর্যাপ্ত পানি পান করা:

প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। পানি শরীরের ভেতরে জমে থাকা জীবাণু ধুয়ে ফেলে এবং কিডনির কাজকে সচল রাখে। গর্ভাবস্থায় দেহের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পানি না পান করলে ইউরিন ঘন হয়ে যায় এবং জীবাণু বংশবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। তাই প্রতিদিন সময় ভাগ করে পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

প্রস্রাব চেপে না রাখা:

অনেক সময় গর্ভবতীরা কাজের চাপে বা বাহিরে টয়লেটের সমস্যা থাকার কারণে প্রস্রাব আটকে রাখেন। এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর অভ্যাস। চেপে রাখা প্রস্রাবে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়, যা মূত্রনালীতে ইনফেকশন ঘটায়। তাই কখনোই প্রস্রাব আটকে রাখা উচিত নয়, টয়লেটের সুযোগ পেলেই প্রস্রাব করে ফেলুন।

অন্তর্বাস ও পোশাক পরিচ্ছন্ন রাখা:

প্রতিদিন অন্তর্বাস পরিবর্তন করা, বিশেষ করে গরমের দিনে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সুতির হালকা কাপড় ব্যবহার করলে ঘাম কম হয় এবং ত্বক শুষ্ক থাকে, ফলে জীবাণু বংশবৃদ্ধি কমে যায়। বাজারে অনেক সানিটারি ন্যাপকিন বা মেটারনিটি প্যাড পাওয়া যায় যেগুলো আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যসম্মত, সেগুলোর ব্যবহার করা উচিত।

যৌন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা:

যৌনমিলনের পরে প্রস্রাব করা একটি ভালো অভ্যাস, কারণ এটি জীবাণুকে ধুয়ে ফেলে। এই সময়ে অতিরিক্ত পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি, যৌনাঙ্গ পরিষ্কারে মৃদু গরম পানি ও সুগন্ধিবিহীন সাবান ব্যবহার করুন। যৌনমিলনের সময় জীবাণুর প্রবেশে ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, তাই সচেতন থাকুন।

সময়মতো বিশ্রাম নেওয়া:

অতিরিক্ত কাজ বা দুশ্চিন্তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া দরকার। রাতে ৮ ঘণ্টা ও দিনে অন্তত ৩০ মিনিট বিশ্রাম নিলে শরীর নিজের মতো করে নিজেকে সারাতে পারে। বিশ্রাম না পেলে দেহের ভেতরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়, যার মধ্যে ইউরিন ইনফেকশন অন্যতম।

গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন কেন হয়?

আমরা তো জেনে গেছি গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি। তবে আমরা কি জানি গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন কেন হয়? চলুন তবে এই বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার পেছনে কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে যা সাধারণ অবস্থার থেকে ভিন্ন। এই সময়ে একজন মায়ের শরীরে হরমোনের মাত্রা অনেক পরিবর্তিত হয়, বিশেষ করে প্রোজেস্টেরন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই হরমোন মূত্রনালীর পেশীগুলোকে শিথিল করে দেয়, যার ফলে মূত্রথলি থেকে মূত্রনালীর মাধ্যমে প্রস্রাব নিষ্কাশন প্রক্রিয়া কিছুটা ধীর হয়ে যেতে পারে। এতে প্রস্রাব মূত্রথলিতে বা মূত্রনালীর কোথাও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ধরে থাকতে পারে। স্থির বা ধীর গতিতে প্রবাহিত মূত্র ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।

এছাড়াও, গর্ভাবস্থার অগ্রগতির সাথে সাথে জরায়ু আকারে বড় হতে থাকে এবং এটি মূত্রথলির উপর চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপের কারণে মূত্রথলি সম্পূর্ণরূপে খালি হতে সমস্যা হতে পারে এবং কিছু প্রস্রাব ভেতরে রয়ে যেতে পারে। এই অবশিষ্ট প্রস্রাবে ব্যাকটেরিয়া সহজে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। মূত্রনালীও এই সময় প্রসারিত হয়, যা ব্যাকটেরিয়াকে ওপরের দিকে, কিডনি পর্যন্ত পৌঁছাতে সহজ করে তোলে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার ৬ষ্ঠ থেকে ২৪তম সপ্তাহের মধ্যে ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের আগে ইউরিন ইনফেকশন হয়েছে, যাদের ডায়াবেটিস আছে, বা যারা একাধিকবার গর্ভধারণ করেছেন, তাদের ঝুঁকি আরো বেশি হতে পারে। এই শারীরিক পরিবর্তনের কারণেই গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন এত সাধারণ একটি সমস্যা।

গর্ভবতী মায়ের ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি?

গর্ভবতী মায়ের ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি? চলুন জেনে আসি। গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কখনো কখনো খুব স্পষ্ট নাও হতে পারে, যা সমস্যাটিকে আরো জটিল করে তোলে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে যা দেখে সতর্ক হওয়া জরুরি। যেমন:

  • সবচেয়ে প্রচলিত লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা অনুভব করা। এটি হালকা থেকে তীব্র হতে পারে। বারবার প্রস্রাবের বেগ অনুভব করা, কিন্তু প্রতিবার অল্প পরিমাণে প্রস্রাব হওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। 
  • হঠাৎ করে প্রস্রাবের বেগ বেড়ে যাওয়া এবং প্রস্রাব আটকে রাখতে কষ্ট হওয়াও ইনফেকশনের কারণে হতে পারে।
  • প্রস্রাবের রং ঘোলাটে, অস্বাভাবিক গন্ধযুক্ত বা এমনকি রক্ত মিশ্রিত হতে পারে। 
  • তলপেটে বা পিঠের নিচের দিকে হালকা ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করাও ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। 
  • কখনও কখনও হালকা জ্বর বা শরীর ঠান্ডা লাগার মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে, যদিও এটি সবসময় ঘটে না। 
  • কিছু ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ ছাড়াই ইউরিন ইনফেকশন থাকতে পারে, যাকে অ্যাসিম্পটোমেটিক ব্যাকটেরিউরিয়া বলা হয়। এটিও গর্ভবতী মায়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে কারণ লক্ষণ না থাকায় চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয় এবং সংক্রমণ কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। 

তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং যেকোনো ছোটখাটো অস্বস্তি সম্পর্কেও ডাক্তারকে জানানো খুব জরুরি।

ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে নিয়মিত জল পান কতটা জরুরি?

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা জেনেছি যে, গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি এবং আমরা জেনেছি যে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার একটি উপায়ের মধ্যে পানি হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় যা নিয়ম মেনে পান করলে এটি থেকে বাঁচা সম্ভব। তবে চলুন আরো বিস্তারভাবে জেনে আসি ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে নিয়মিত জল পান কতটা জরুরি?

ইউরিন-ইনফেকশন-প্রতিরোধে-নিয়মিত-জল-পান-কতটা-জরুরি

ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে এবং এর তীব্রতা কমাতে নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন মোকাবেলার একটি অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক উপায়। যখন আপনি প্রচুর পরিমাণে জল পান করেন, তখন আপনার মূত্রথলি ঘন ঘন পূর্ণ হয় এবং আপনাকে বারবার প্রস্রাব করতে হয়। এই প্রক্রিয়াটি মূত্রনালী থেকে ব্যাকটেরিয়াগুলোকে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে, ঠিক যেমন বন্যার পানি ময়লা আবর্জনা ধুয়ে নিয়ে যায়। ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীর দেয়ালে আটকে থেকে বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ কম পায়।


পর্যাপ্ত জল পান করলে প্রস্রাব পাতলা হয়, যা প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। ঘোলাটে বা তীব্র গন্ধযুক্ত প্রস্রাব সাধারণত শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না পাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। প্রস্রাব পরিষ্কার এবং প্রায় গন্ধহীন হওয়া মানে আপনার শরীর যথেষ্ট হাইড্রেটেড আছে এবং মূত্রনালী পরিষ্কার থাকছে। গর্ভাবস্থায় একজন সাধারণ সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কের চেয়ে একটু বেশি পরিমাণে জলের প্রয়োজন হতে পারে। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস (২-২.৫ লিটার) বা তার বেশি জল পান করার লক্ষ্য রাখুন, তবে আপনার শরীরের প্রয়োজন এবং আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে এর পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে। শুধু জল নয়, ডাবের জল, ঘরে তৈরি ফলের রস (চিনি ছাড়া) ইত্যাদিও পান করতে পারেন, তবে মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে চলুন।

সঠিক ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা কীভাবে ইউরিন ইনফেকশন কমায়?

ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধের একটি খুব কার্যকর উপায়, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় যখন সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। সঠিক পরিচ্ছন্নতা অভ্যাস ব্যাকটেরিয়াকে মূত্রনালীতে প্রবেশ করতে বাধা দিতে সাহায্য করে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো:

  • বাথরুম ব্যবহারের পর সঠিক পদ্ধতি: মলত্যাগের পর সামনে থেকে পেছনের দিকে পরিষ্কার করা অত্যন্ত জরুরি। এর বিপরীত করলে মলদ্বারের ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীর কাছাকাছি চলে আসতে পারে এবং সংক্রমণের কারণ হতে পারে। প্রস্রাবের পরেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।
  • ঢিলেঢালা পোশাক পরা: আঁটসাঁট পোশাক বা সিনথেটিক অন্তর্বাস পরা এড়িয়ে চলুন। এগুলো শরীরের নিচের অংশে আর্দ্রতা এবং উষ্ণতা আটকে রাখে, যা ব্যাকটেরিয়ার জন্য বংশবৃদ্ধির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। ঢিলেঢালা, সুতির পোশাক পরলে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং ওই অঞ্চল শুকনো থাকে।
  • সিনথেটিক অন্তর্বাস এড়িয়ে চলা: সুতির অন্তর্বাস পরা সবচেয়ে ভালো। সুতির কাপড় শোষণক্ষমতা সম্পন্ন এবং শ্বাসপ্রশ্বাসযোগ্য, যা ত্বককে শুকনো রাখতে সাহায্য করে। সিনথেটিক অন্তর্বাস আর্দ্রতা আটকে রাখে।
  • সুগন্ধিযুক্ত পণ্য ব্যবহার না করা: যোনিপথের আশেপাশে সুগন্ধিযুক্ত সাবান, পাউডার বা স্প্রে ব্যবহার করা উচিত নয়। এই পণ্যগুলো ওই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে এবং জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। মৃদু, সুগন্ধিহীন সাবান এবং শুধুমাত্র বাইরের অংশ পরিষ্কার করার জন্য জল ব্যবহার করা ভালো।
  • যৌন মিলনের আগে ও পরে সতর্কতা: যৌন মিলনের আগে এবং পরে প্রস্রাব করা মূত্রনালী থেকে সম্ভাব্য ব্যাকটেরিয়া বের করে দিতে সাহায্য করে। যৌন মিলনের পর যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করাও গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি খেতে হয়?

আপনি যদি প্রশ্ন করেন গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি তবে এই পয়েন্টটি হতে পারে আপনার জন্য মাইনফলক। তবে চলুন জেনে আসা যাক এই পয়েন্ট আমরা কি আলোচনা করেছি।

গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন মোকাবেলায় এবং প্রতিরোধে খাবার তালিকা একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। কিছু নির্দিষ্ট খাবার সংক্রমণ কমাতে বা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। যেমন:

  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন সি মূত্রকে আরো অম্লীয় করে তুলতে পারে, যা ব্যাকটেরিয়ার জন্য বেঁচে থাকা কঠিন করে তোলে। কমলা, লেবু, পেয়ারা, আমলকী, স্ট্রবেরি, ব্রোকলি এবং ক্যাপসিকামের মতো খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। এগুলো নিয়মিত খেলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
  • টক দই বা প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার: প্রোবায়োটিক হলো উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা শরীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। টক দই এবং কিছু গাঁজানো খাবারে প্রোবায়োটিক থাকে। এই উপকারী ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
  • অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার কমানো: ব্যাকটেরিয়া চিনি পছন্দ করে এবং এটি তাদের দ্রুত বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে। মিষ্টি পানীয়, মিষ্টি ডেজার্ট এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত চিনি থাকে। এগুলো কম খেলে ব্যাকটেরিয়ার জন্য খাবার কমে আসে।
  • পর্যাপ্ত ফাইবার গ্রহণ: উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন ফলমূল, শাকসবজি এবং পূর্ণ শস্য, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য কখনো কখনো মূত্রনালীর উপর চাপ সৃষ্টি করে ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • মসলাদার ও ভাজা খাবার পরিহার: অতিরিক্ত মসলাদার এবং ভাজা খাবার মূত্রথলিতে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে, যা ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণগুলোকে আরো খারাপ করতে পারে। এগুলো এড়িয়ে চললে আরাম পাওয়া যেতে পারে।

ক্র্যানবেরি জুস কি গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনের জন্য উপকারী?

ক্র্যানবেরি জুস দীর্ঘদিন ধরে ইউরিন ইনফেকশনের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে পরিচিত। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ক্র্যানবেরিতে এমন কিছু উপাদান (বিশেষ করে প্রোঅ্যান্থোসায়ানিডিনস) থাকে যা ব্যাকটেরিয়ার, বিশেষ করে ই. কোলাই (E. coli), মূত্রনালীর দেয়ালে আটকে থাকাকে কঠিন করে তোলে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো সহজে প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় ক্র্যানবেরি জুস ব্যবহারের বিষয়ে মিশ্র মতামত এবং গবেষণা রয়েছে। কিছু ডাক্তার এটিকে সহায়ক মনে করেন, আবার কেউ কেউ এর কার্যকারিতা নিয়ে নিশ্চিত নন, বিশেষ করে যখন সংক্রমণ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।

গর্ভাবস্থায় ক্র্যানবেরি জুস পান করার আগে কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে। বাজারে প্রাপ্ত অনেক ক্র্যানবেরি জুসে প্রচুর পরিমাণে চিনি যোগ করা হয়, যা আসলে ব্যাকটেরিয়ার জন্য ভালো। চিনি ছাড়া বা কম চিনিযুক্ত ক্র্যানবেরি জুস বেছে নেওয়া উচিত। তবে এটি খেতে খুব টক লাগতে পারে। ক্র্যানবেরি সাপ্লিমেন্টও পাওয়া যায়, কিন্তু গর্ভাবস্থায় যেকোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ক্র্যানবেরি জুস কেবল প্রতিরোধ বা সহায়তা করতে পারে, এটি একটি চিকিৎসা নয়। যদি আপনার ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ থাকে, তাহলে কেবল ক্র্যানবেরি জুসের উপর নির্ভর না করে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা জরুরি। এটি কেবল ডাক্তারের নির্দেশিত চিকিৎসার পাশাপাশি একটি সহায়ক পানীয় হতে পারে।

প্রোবায়োটিকস কি ইউরিন ইনফেকশনে সাহায্য করে?

প্রোবায়োটিকস হলো উপকারী জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া এবং ইস্ট যা আমাদের শরীরের জন্য ভালো, বিশেষ করে হজমতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য। তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রোবায়োটিকস মূত্রনালীর স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী হতে পারে। প্রোবায়োটিকস শরীরের প্রাকৃতিক মাইক্রোবায়োম বা উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যখন শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা পর্যাপ্ত থাকে, তখন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, যা ইউরিন ইনফেকশনের কারণ, তাদের বংশবৃদ্ধি করা কঠিন হয়।

গর্ভাবস্থায় প্রোবায়োটিকস গ্রহণ সাধারণত নিরাপদ বলে মনে করা হয়, তবে যেকোনো সাপ্লিমেন্টের মতো এটিও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে গ্রহণ করা উচিত। প্রোবায়োটিকস মূলত দুটি উপায়ে ইউরিন ইনফেকশনে সাহায্য করতে পারে বলে ধারণা করা হয়: প্রথমত, তারা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সাথে স্থান এবং খাবারের জন্য প্রতিযোগিতা করে তাদের সংখ্যা কমিয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, তারা যোনিপথ এবং মূত্রনালীতে একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করে, যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। টক দই প্রোবায়োটিকসের একটি ভালো উৎস। এছাড়াও বাজারে প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়। তবে মনে রাখবেন, প্রোবায়োটিকস ইউরিন ইনফেকশনের চিকিৎসা নয়, বরং এটি প্রতিরোধ বা চিকিৎসার সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে। নিশ্চিত ইউরিন ইনফেকশনের ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসার জন্য অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে।

গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনের জন্য কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?

আমরা উপরে বিস্তারভাবে জেনেছি গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি? তবে আমাদের এটিও জানা খুবই জরুরী যে, গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনের জন্য কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত? তাই চলুন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন একটি গুরুতর অবস্থা হতে পারে এবং এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। তাই, যদি আপনার ইউরিন ইনফেকশনের সামান্যতম লক্ষণও দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা অপরিহার্য। প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ, প্রস্রাব আটকে রাখতে কষ্ট হওয়া, প্রস্রাবের রং বা গন্ধে পরিবর্তন, তলপেটে বা পিঠের নিচের দিকে ব্যথা- এই সব লক্ষণ দেখা দিলেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এমনকি যদি আপনার কোনো লক্ষণ না থাকে, কিন্তু নিয়মিত গর্ভাবস্থা পরীক্ষা বা ইউরিন টেস্টে যদি সংক্রমণ ধরা পড়ে (অ্যাসিম্পটোমেটিক ব্যাকটেরিউরিয়া), তাহলেও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। গর্ভাবস্থায় অ্যাসিম্পটোমেটিক ব্যাকটেরিউরিয়াও পরবর্তীকালে কিডনি সংক্রমণ এবং অকাল প্রসবের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অপেক্ষা করা বা শুধুমাত্র ঘরোয়া পদ্ধতির উপর নির্ভর করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ডাক্তার আপনার অবস্থা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারবেন এবং আপনার ও আপনার গর্ভের শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি, প্রয়োজনে নিরাপদ এন্টিবায়োটিক নির্ধারণ করতে পারবেন। মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

ইউরিন ইনফেকশন মারাত্মক আকার ধারণ করলে কী হতে পারে?

গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনকে যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয় বা এটিকে উপেক্ষা করা হয়, তাহলে এটি দ্রুত মূত্রনালী বেয়ে কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিডনির সংক্রমণকে পাইলোনেফ্রাইটিস বলা হয় এবং এটি গর্ভাবস্থায় একটি অত্যন্ত গুরুতর জটিলতা। কিডনি সংক্রমণে উচ্চ জ্বর, শরীর কাঁপানো ঠান্ডা লাগা, পিঠের উপরের দিকে বা কোমর ব্যথা (সাধারণত একপাশে), বমি বমি ভাব বা বমি এবং অসুস্থ অনুভব করার মতো গুরুতর লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

ইউরিন-ইনফেকশন-মারাত্মক-আকার-ধারণ-করলে-কী-হতে-পারে

গর্ভাবস্থায় কিডনি সংক্রমণ মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। এটি অকাল প্রসব (৩৭ সপ্তাহের আগে প্রসব) এবং জন্মকালীন কম ওজনের শিশুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়। কিছু ক্ষেত্রে, এটি মায়ের রক্তে সংক্রমণ (সেপসিস) ঘটাতে পারে, যা জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। নবজাতকের মধ্যেও স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই কারণেই গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই বা রুটিন টেস্টে ধরা পড়লে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি। সময়মতো এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই মারাত্মক জটিলতাগুলো এড়ানো সম্ভব হয়।

জীবনযাত্রায় আর কী কী পরিবর্তন আনা যেতে পারে?

ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে এবং গর্ভাবস্থায় ভালো থাকতে জীবনযাত্রায় কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন আনা যেতে পারে। এই পরিবর্তনগুলো সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। যেমন:

  • প্রস্রাব আটকে না রাখা: যখনই প্রস্রাবের বেগ অনুভব করবেন, তখনই টয়লেট ব্যবহার করুন। প্রস্রাব আটকে রাখলে মূত্রথলিতে ব্যাকটেরিয়া বেশি সময় ধরে থাকার সুযোগ পায়, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত বিরতিতে প্রস্রাব করা ভালো অভ্যাস।
  • পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে সতর্কতা: পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। ব্যবহারের আগে সিট টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া বা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। হাতের পরিচ্ছন্নতাও খুব জরুরি।
  • হালকা ব্যায়াম বা নড়াচড়া করা: গর্ভাবস্থায় নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়ক হতে পারে। তবে যেকোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই জরুরি। যোগা, মেডিটেশন বা হালকা শ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে চাপ কমানোর চেষ্টা করতে পারেন।
  • পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত এবং আরামদায়ক ঘুম শরীরের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। ঘুম শরীরকে বিশ্রাম নিতে এবং নিজেকে মেরামত করতে সাহায্য করে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।

ইউরিন ইনফেকশন থেকে সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি তা নিয়ে আমরা উপরে আলোচনা করে এবং আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কেও আলোচনা করেছি ও জেনেছি। তবে আপনি যদি ইউরিন ইনফেকশন থেকে সুস্থতা লাভ করতে চান তবে এই পয়েন্টিও আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কেননা গর্ভাবস্থায় যেকোনো শারীরিক সমস্যার সময়, ইউরিন ইনফেকশন সহ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্রাম শরীরকে সংক্রমণ মোকাবেলায় সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে। যখন আপনি অসুস্থ থাকেন বা আপনার শরীর কোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তখন শরীরের শক্তি সেই লড়াইয়ে নিয়োজিত হয়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা কমে যায়।

গর্ভাবস্থায় এমনিতেই শরীরের উপর বাড়তি চাপ থাকে। এর উপর যদি ইউরিন ইনফেকশনের মতো কোনো সমস্যা যোগ হয়, তাহলে শরীর আরো ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম শরীরকে পুনরুদ্ধার করতে এবং সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট ক্লান্তি বা অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। শুধু রাতের ঘুম নয়, দিনের বেলাও সুযোগ পেলে হালকা বিশ্রাম বা ন্যাপ নেওয়া যেতে পারে। আরামদায়ক পরিবেশে থাকা এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করাও বিশ্রামের একটি অংশ। শরীরকে তার প্রয়োজনীয় বিশ্রাম দিলে তা দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করে এবং জটিলতার ঝুঁকি কমায়।

গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা কতটা সম্ভব?

অনেক সময় গর্ভবতী নারীরা ইউরিন ইনফেকশনের মতো সমস্যার মুখোমুখি হন এবং ওষুধ খেতে চান না, বিশেষ করে এন্টিবায়োটিক এড়িয়ে চলতে চান সন্তানের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে। এই অবস্থায় ঘরোয়া চিকিৎসা একটি কার্যকর ও নিরাপদ উপায় হতে পারে, তবে শর্ত থাকে যে এটি সঠিকভাবে ও নিয়মমাফিক অনুসরণ করতে হবে। আমাদের প্রাচীন আয়ুর্বেদ ও ঘরোয়া চিকিৎসার ভান্ডারে এমন অনেক উপাদান রয়েছে, যেগুলো ইউরিন ইনফেকশন থেকে রক্ষা পেতে সহায়ক। যেমন:

  • ধনিয়া পানির কথা। এক মুঠো ধনিয়া বীজ সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি ছেঁকে খালি পেটে পান করলে প্রস্রাব পরিষ্কার হয় এবং ইনফেকশনের উপসর্গ কমে। এটি নিয়মিত কয়েকদিন খেলেই বেশ উপকার পাওয়া যায়। একইভাবে মেথি বীজও উপকারী, কারণ এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে যা মূত্রনালীর জীবাণু ধ্বংস করে। সকালে কুসুম গরম পানিতে এক চিমটি মেথি বীজ সেদ্ধ করে খেতে পারেন।
  • নারকেল পানি এবং তাজা ফলের রস একটি দারুণ প্রাকৃতিক ঔষধের মতো কাজ করে। প্রতিদিন একবার নারকেল পানি পান করলে কিডনি পরিষ্কার থাকে এবং ইউরিনের রঙ হালকা হয়, এতে করে ইনফেকশনের উপসর্গ হ্রাস পায়। তেমনি তাজা জাম্বুরা বা কমলার রসও খুব কার্যকর। এতে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যা জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে।
  • গোলমরিচ এবং মধুর মিশ্রণ খাওয়া যেতে পারে। এটি শরীরের ভিতরকার দূষিত পদার্থকে পরিষ্কার করে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে মনে রাখতে হবে, গর্ভাবস্থায় কোনো মশলা জাতীয় উপাদান খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ প্রতিটি মায়ের দেহের অবস্থা আলাদা এবং কারও কারও গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকতে পারে।
  • হালকা গরম পানিতে বসে থাকার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটিকে 'সিটজ বাথ' বলা হয়, যার ফলে নিচের অংশে রক্তসঞ্চালন বাড়ে এবং ইউরিনারির সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমে যায়। প্রতিদিন সকালে ও রাতে ১০ মিনিট করে হালকা গরম পানিতে বসে থাকলে আরাম পাওয়া যায়। পানি ফুটিয়ে সামান্য লবণ মিশিয়ে ব্যবহার করাই ভালো। তবে যদি কোনো জ্বালাপোড়া বেশি অনুভূত হয় বা সমস্যা বাড়ে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এছাড়াও, আমরা যে উপরে আলোচনা করে এসেছি “গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি” তা সম্পর্কে।

ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলার গুরুত্ব

এই আর্টিকেলে আমরা গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন মোকাবেলায় এন্টিবায়োটিক ছাড়া কিছু সহায়ক উপায় এবং প্রতিরোধের কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য বিষয়টি হলো ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা। গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এর সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো বেশ গুরুতর। একজন ডাক্তারই পারেন আপনার শরীরের অবস্থা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে, সংক্রমণের ধরণ এবং তীব্রতা নির্ণয় করতে এবং আপনার ও আপনার গর্ভের শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করতে।

যদি আপনার ডাক্তার এন্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করেন, তাহলে ভয় না পেয়ে সেটি গ্রহণ করা উচিত। গর্ভাবস্থার জন্য নিরাপদ এমন অনেক এন্টিবায়োটিক রয়েছে যা ডাক্তাররা বেছে নেন যা এন্টিবায়োটিক সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে এবং গুরুতর জটিলতা যেমন কিডনি সংক্রমণ বা অকাল প্রসব প্রতিরোধ করে। ঘরোয়া প্রতিকার বা জীবনযাত্রার পরিবর্তনগুলি সহায়ক হতে পারে, কিন্তু তারা কখনোই ডাক্তারী চিকিৎসার বিকল্প নয়। তাই, কোনো লক্ষণ দেখা দিলে বা সংক্রমণ ধরা পড়লে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন এবং তার দেওয়া সকল পরামর্শ ও নির্দেশিকা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন। আপনার সুস্থতা এবং আপনার অনাগত সন্তানের সুস্থতাই আমাদের সকলের কাম্য।

শেষ মন্তব্য

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা আজকের আর্টিকেল অর্থাৎ “গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি” এর একদম শেষ অংশে চলে এসেছি এবং আমরা শেষ কথন হিসেবে বলতে পারি যে, গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন একটি সাধারণ সমস্যা, তবে এর সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। অ্যান্টিবায়োটিকের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে এর তীব্রতা কমানো যায়। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, প্রস্রাবের বেগ আসলে দেরি না করা এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, কোনো ঘরোয়া পদ্ধতিই ডাক্তারের পরামর্শের বিকল্প নয়। তাই গর্ভবতী অবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী চলুন। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে আপনি এবং আপনার অনাগত সন্তান উভয়েই সুস্থ থাকবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

BLOGGER MRH-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url