গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি
প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়
গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি আপনি কি সেটি জানেন? যদি না জেনে থাকেন তবে চলুন বিস্তারিতভাবে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা আজকের আর্টিকেলটি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের উপর ভিত্তি করে আলোচনা করবো যাতে আমাদের বুঝতে সুবিধা হয়।
পোস্ট সূচিপত্র: গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি
- গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি
- গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে দৈনন্দিন অভ্যাস কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
- গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন কেন হয়?
- গর্ভবতী মায়ের ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি?
- ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে নিয়মিত জল পান কতটা জরুরি?
- সঠিক ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা কীভাবে ইউরিন ইনফেকশন কমায়?
- গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি খেতে হয়?
- ক্র্যানবেরি জুস কি গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনের জন্য উপকারী?
- প্রোবায়োটিকস কি ইউরিন ইনফেকশনে সাহায্য করে?
- গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনের জন্য কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
- ইউরিন ইনফেকশন মারাত্মক আকার ধারণ করলে কী হতে পারে?
- জীবনযাত্রায় আর কী কী পরিবর্তন আনা যেতে পারে?
- ইউরিন ইনফেকশন থেকে সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
- গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা কতটা সম্ভব?
- ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলার গুরুত্ব
- শেষ মন্তব্য
গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা: এটি মূত্রাশয় থেকে ব্যাকটেরিয়া বের করে দিতে সাহায্য করে। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা জরুরি। পানি ছাড়াও তরল খাবার যেমন পাতলা স্যুপ, ফলের রস ইত্যাদি গ্রহণ করতে পারেন।
- ঘন ঘন প্রস্রাব করা: প্রস্রাবের বেগ আসলে তা চেপে না রেখে প্রস্রাব করা উচিত। দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখলে ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ পায়।
- প্রস্রাবের পর সঠিক পথ পরিষ্কার করা: প্রস্রাবের পর সামনে থেকে পেছনের দিকে মুছতে হবে। এতে মলদ্বারের ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে প্রবেশ করতে পারে না।
- সুতি কাপড় পড়: সিনথেটিক বা টাইট অন্তর্বাস পরিহার করে ঢিলেঢালা সুতি কাপড় পড়া উচিত। সুতি কাপড়ে বাতাস চলাচল করতে সাহায্য করে এবং আর্দ্রতা কমিয়ে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি রোধ করে।
- যৌন সম্পর্কের আগে ও পরে প্রস্রাব করা: যৌন সম্পর্কের সময় ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে প্রবেশ করতে পারে। তাই এর আগে ও পরে প্রস্রাব করলে সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ: ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং মূত্রের অম্লতা বৃদ্ধি করে, যা ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। আমলকি, কমলা, লেবু ইত্যাদি ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস।
- ক্র্যানবেরি জুস পান করা (ডাক্তারের পরামর্শে): কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ক্র্যানবেরি জুস ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ব্যাকটেরিয়া আটকে রাখতে সাহায্য করে। তবে গর্ভাবস্থায় এটি কতটা নিরাপদ তা নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত ক্র্যানবেরি জুস পরিহার করা উচিত।
- প্রোবায়োটিক গ্রহণ (ডাক্তারের পরামর্শে): প্রোবায়োটিক অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কিছু প্রোবায়োটিক ইউরিনারি ট্র্যাক্টের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী হতে পারে, তবে গর্ভাবস্থায় ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- বেকিং সোডা মিশ্রিত পানি পান করা (ডাক্তারের পরামর্শে): অল্প পরিমাণে বেকিং সোডা এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করলে মূত্রের অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া কমাতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় এটি নিয়মিত পান করা উচিত নয় এবং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটি গ্রহণ করা উচিত না।
- পেটের নিচের দিকে গরম সেঁক দেওয়া: তলপেটে হালকা গরম সেঁক দিলে মূত্রাশয়ের ব্যথা এবং অস্বস্তি কিছুটা কমতে পারে।
- অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন পরিহার করা: অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন মূত্রাশয়কে উত্তেজিত করতে পারে এবং ডিহাইড্রেশন ঘটাতে পারে, যা ইউটিআই-এর লক্ষণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
- কৃত্রিম সুগন্ধিযুক্ত পণ্য পরিহার করা: কৃত্রিম সুগন্ধিযুক্ত সাবান, বাথ বোমা, বা ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এগুলো মূত্রনালীতে জ্বালাতন সৃষ্টি করতে পারে।
- টাইট পোশাক পরিহার করা: টাইট জিন্স বা প্যান্টের মতো পোশাক পরিহার করা উচিত, যা মূত্রনালীর উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং বাতাস চলাচল ব্যাহত করতে পারে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া: পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক।
- স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ: সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়।
- ধূমপান পরিহার করা: ধূমপান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। গর্ভাবস্থায় ধূমপান সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা উচিত।
- মানসিক চাপ কমানো: অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে পারে। তাই যোগা, মেডিটেশন বা পছন্দের কাজের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
- দীর্ঘক্ষণ ভেজা কাপড় পরিধান না করা: সাঁতার কাটার পর বা অতিরিক্ত ঘামলে দ্রুত ভেজা কাপড় পরিবর্তন করা উচিত। ভেজা কাপড় ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।
- তলপেটের পেশী শক্তিশালী করার ব্যায়াম (ডাক্তারের পরামর্শে): কিছু হালকা ব্যায়াম তলপেটের পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে, যা মূত্রাশয়ের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় যেকোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
- লবঙ্গ তেল (ডাক্তারের পরামর্শে): লবঙ্গ তেলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় এটি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সরাসরি ব্যবহার না করে, কোনো ভেজিটেবল অয়েলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- রসুন খাওয়া: রসুনে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রতিদিনের খাবারে রসুন যোগ করলে তা সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
- আদা খাওয়া: আদার মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ইউটিআই-এর কারণে হওয়া প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- পেঁয়াজের রস (ডাক্তারের পরামর্শে): পেঁয়াজের রসে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় এটি পান করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- আপেল সিডার ভিনেগার (ডাক্তারের পরামর্শে): কিছু লোক মনে করে আপেল সিডার ভিনেগার ইউটিআই-এর জন্য উপকারী। তবে গর্ভাবস্থায় এটি কতটা নিরাপদ এবং কার্যকর তা নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এটি সরাসরি পান না করে, পানির সাথে মিশিয়ে অল্প পরিমাণে গ্রহণ করা যেতে পারে।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো: গর্ভাবস্থায় নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি। এর মাধ্যমে কোনো সংক্রমণ শুরু হলে দ্রুত শনাক্ত করা যায় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়।
গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে দৈনন্দিন অভ্যাস কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
পর্যাপ্ত পানি পান করা:
প্রস্রাব চেপে না রাখা:
অন্তর্বাস ও পোশাক পরিচ্ছন্ন রাখা:
যৌন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা:
সময়মতো বিশ্রাম নেওয়া:
গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন কেন হয়?
গর্ভবতী মায়ের ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কি কি?
- সবচেয়ে প্রচলিত লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা অনুভব করা। এটি হালকা থেকে তীব্র হতে পারে। বারবার প্রস্রাবের বেগ অনুভব করা, কিন্তু প্রতিবার অল্প পরিমাণে প্রস্রাব হওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
- হঠাৎ করে প্রস্রাবের বেগ বেড়ে যাওয়া এবং প্রস্রাব আটকে রাখতে কষ্ট হওয়াও ইনফেকশনের কারণে হতে পারে।
- প্রস্রাবের রং ঘোলাটে, অস্বাভাবিক গন্ধযুক্ত বা এমনকি রক্ত মিশ্রিত হতে পারে।
- তলপেটে বা পিঠের নিচের দিকে হালকা ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করাও ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।
- কখনও কখনও হালকা জ্বর বা শরীর ঠান্ডা লাগার মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে, যদিও এটি সবসময় ঘটে না।
- কিছু ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ ছাড়াই ইউরিন ইনফেকশন থাকতে পারে, যাকে অ্যাসিম্পটোমেটিক ব্যাকটেরিউরিয়া বলা হয়। এটিও গর্ভবতী মায়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে কারণ লক্ষণ না থাকায় চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয় এবং সংক্রমণ কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে নিয়মিত জল পান কতটা জরুরি?
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা জেনেছি যে, গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি এবং আমরা জেনেছি যে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার একটি উপায়ের মধ্যে পানি হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় যা নিয়ম মেনে পান করলে এটি থেকে বাঁচা সম্ভব। তবে চলুন আরো বিস্তারভাবে জেনে আসি ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে নিয়মিত জল পান কতটা জরুরি?
ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে এবং এর তীব্রতা কমাতে নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন মোকাবেলার একটি অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক উপায়। যখন আপনি প্রচুর পরিমাণে জল পান করেন, তখন আপনার মূত্রথলি ঘন ঘন পূর্ণ হয় এবং আপনাকে বারবার প্রস্রাব করতে হয়। এই প্রক্রিয়াটি মূত্রনালী থেকে ব্যাকটেরিয়াগুলোকে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে, ঠিক যেমন বন্যার পানি ময়লা আবর্জনা ধুয়ে নিয়ে যায়। ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীর দেয়ালে আটকে থেকে বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ কম পায়।
সঠিক ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা কীভাবে ইউরিন ইনফেকশন কমায়?
- বাথরুম ব্যবহারের পর সঠিক পদ্ধতি: মলত্যাগের পর সামনে থেকে পেছনের দিকে পরিষ্কার করা অত্যন্ত জরুরি। এর বিপরীত করলে মলদ্বারের ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীর কাছাকাছি চলে আসতে পারে এবং সংক্রমণের কারণ হতে পারে। প্রস্রাবের পরেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।
- ঢিলেঢালা পোশাক পরা: আঁটসাঁট পোশাক বা সিনথেটিক অন্তর্বাস পরা এড়িয়ে চলুন। এগুলো শরীরের নিচের অংশে আর্দ্রতা এবং উষ্ণতা আটকে রাখে, যা ব্যাকটেরিয়ার জন্য বংশবৃদ্ধির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। ঢিলেঢালা, সুতির পোশাক পরলে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং ওই অঞ্চল শুকনো থাকে।
- সিনথেটিক অন্তর্বাস এড়িয়ে চলা: সুতির অন্তর্বাস পরা সবচেয়ে ভালো। সুতির কাপড় শোষণক্ষমতা সম্পন্ন এবং শ্বাসপ্রশ্বাসযোগ্য, যা ত্বককে শুকনো রাখতে সাহায্য করে। সিনথেটিক অন্তর্বাস আর্দ্রতা আটকে রাখে।
- সুগন্ধিযুক্ত পণ্য ব্যবহার না করা: যোনিপথের আশেপাশে সুগন্ধিযুক্ত সাবান, পাউডার বা স্প্রে ব্যবহার করা উচিত নয়। এই পণ্যগুলো ওই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে এবং জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। মৃদু, সুগন্ধিহীন সাবান এবং শুধুমাত্র বাইরের অংশ পরিষ্কার করার জন্য জল ব্যবহার করা ভালো।
- যৌন মিলনের আগে ও পরে সতর্কতা: যৌন মিলনের আগে এবং পরে প্রস্রাব করা মূত্রনালী থেকে সম্ভাব্য ব্যাকটেরিয়া বের করে দিতে সাহায্য করে। যৌন মিলনের পর যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করাও গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি খেতে হয়?
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন সি মূত্রকে আরো অম্লীয় করে তুলতে পারে, যা ব্যাকটেরিয়ার জন্য বেঁচে থাকা কঠিন করে তোলে। কমলা, লেবু, পেয়ারা, আমলকী, স্ট্রবেরি, ব্রোকলি এবং ক্যাপসিকামের মতো খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। এগুলো নিয়মিত খেলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
- টক দই বা প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার: প্রোবায়োটিক হলো উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা শরীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। টক দই এবং কিছু গাঁজানো খাবারে প্রোবায়োটিক থাকে। এই উপকারী ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
- অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার কমানো: ব্যাকটেরিয়া চিনি পছন্দ করে এবং এটি তাদের দ্রুত বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে। মিষ্টি পানীয়, মিষ্টি ডেজার্ট এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত চিনি থাকে। এগুলো কম খেলে ব্যাকটেরিয়ার জন্য খাবার কমে আসে।
- পর্যাপ্ত ফাইবার গ্রহণ: উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন ফলমূল, শাকসবজি এবং পূর্ণ শস্য, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য কখনো কখনো মূত্রনালীর উপর চাপ সৃষ্টি করে ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- মসলাদার ও ভাজা খাবার পরিহার: অতিরিক্ত মসলাদার এবং ভাজা খাবার মূত্রথলিতে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে, যা ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণগুলোকে আরো খারাপ করতে পারে। এগুলো এড়িয়ে চললে আরাম পাওয়া যেতে পারে।
ক্র্যানবেরি জুস কি গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনের জন্য উপকারী?
প্রোবায়োটিকস কি ইউরিন ইনফেকশনে সাহায্য করে?
গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনের জন্য কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
ইউরিন ইনফেকশন মারাত্মক আকার ধারণ করলে কী হতে পারে?
গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনকে যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয় বা এটিকে উপেক্ষা করা হয়, তাহলে এটি দ্রুত মূত্রনালী বেয়ে কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিডনির সংক্রমণকে পাইলোনেফ্রাইটিস বলা হয় এবং এটি গর্ভাবস্থায় একটি অত্যন্ত গুরুতর জটিলতা। কিডনি সংক্রমণে উচ্চ জ্বর, শরীর কাঁপানো ঠান্ডা লাগা, পিঠের উপরের দিকে বা কোমর ব্যথা (সাধারণত একপাশে), বমি বমি ভাব বা বমি এবং অসুস্থ অনুভব করার মতো গুরুতর লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কিডনি সংক্রমণ মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। এটি অকাল প্রসব (৩৭ সপ্তাহের আগে প্রসব) এবং জন্মকালীন কম ওজনের শিশুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়। কিছু ক্ষেত্রে, এটি মায়ের রক্তে সংক্রমণ (সেপসিস) ঘটাতে পারে, যা জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। নবজাতকের মধ্যেও স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই কারণেই গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই বা রুটিন টেস্টে ধরা পড়লে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি। সময়মতো এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই মারাত্মক জটিলতাগুলো এড়ানো সম্ভব হয়।
জীবনযাত্রায় আর কী কী পরিবর্তন আনা যেতে পারে?
- প্রস্রাব আটকে না রাখা: যখনই প্রস্রাবের বেগ অনুভব করবেন, তখনই টয়লেট ব্যবহার করুন। প্রস্রাব আটকে রাখলে মূত্রথলিতে ব্যাকটেরিয়া বেশি সময় ধরে থাকার সুযোগ পায়, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত বিরতিতে প্রস্রাব করা ভালো অভ্যাস।
- পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে সতর্কতা: পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। ব্যবহারের আগে সিট টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া বা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। হাতের পরিচ্ছন্নতাও খুব জরুরি।
- হালকা ব্যায়াম বা নড়াচড়া করা: গর্ভাবস্থায় নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়ক হতে পারে। তবে যেকোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই জরুরি। যোগা, মেডিটেশন বা হালকা শ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে চাপ কমানোর চেষ্টা করতে পারেন।
- পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত এবং আরামদায়ক ঘুম শরীরের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। ঘুম শরীরকে বিশ্রাম নিতে এবং নিজেকে মেরামত করতে সাহায্য করে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।
ইউরিন ইনফেকশন থেকে সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা কতটা সম্ভব?
- ধনিয়া পানির কথা। এক মুঠো ধনিয়া বীজ সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি ছেঁকে খালি পেটে পান করলে প্রস্রাব পরিষ্কার হয় এবং ইনফেকশনের উপসর্গ কমে। এটি নিয়মিত কয়েকদিন খেলেই বেশ উপকার পাওয়া যায়। একইভাবে মেথি বীজও উপকারী, কারণ এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে যা মূত্রনালীর জীবাণু ধ্বংস করে। সকালে কুসুম গরম পানিতে এক চিমটি মেথি বীজ সেদ্ধ করে খেতে পারেন।
- নারকেল পানি এবং তাজা ফলের রস একটি দারুণ প্রাকৃতিক ঔষধের মতো কাজ করে। প্রতিদিন একবার নারকেল পানি পান করলে কিডনি পরিষ্কার থাকে এবং ইউরিনের রঙ হালকা হয়, এতে করে ইনফেকশনের উপসর্গ হ্রাস পায়। তেমনি তাজা জাম্বুরা বা কমলার রসও খুব কার্যকর। এতে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যা জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে।
- গোলমরিচ এবং মধুর মিশ্রণ খাওয়া যেতে পারে। এটি শরীরের ভিতরকার দূষিত পদার্থকে পরিষ্কার করে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে মনে রাখতে হবে, গর্ভাবস্থায় কোনো মশলা জাতীয় উপাদান খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ প্রতিটি মায়ের দেহের অবস্থা আলাদা এবং কারও কারও গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকতে পারে।
- হালকা গরম পানিতে বসে থাকার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটিকে 'সিটজ বাথ' বলা হয়, যার ফলে নিচের অংশে রক্তসঞ্চালন বাড়ে এবং ইউরিনারির সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমে যায়। প্রতিদিন সকালে ও রাতে ১০ মিনিট করে হালকা গরম পানিতে বসে থাকলে আরাম পাওয়া যায়। পানি ফুটিয়ে সামান্য লবণ মিশিয়ে ব্যবহার করাই ভালো। তবে যদি কোনো জ্বালাপোড়া বেশি অনুভূত হয় বা সমস্যা বাড়ে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এছাড়াও, আমরা যে উপরে আলোচনা করে এসেছি “গর্ভাবস্থায় ইউরিন ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভালো হওয়ার উপায় কি” তা সম্পর্কে।
BLOGGER MRH-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url