কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক আপনি কি জানেন সকালে খালি পেটে কোন ৫টি খাবার খেলে মিলবে অশেষ উপকার,
শরীর সুস্থ এবং মন থাকবে সতেজ। যদি না জেনে থাকেন তবে চলুন জেনে আসি।
সকালের শুরুটা যদি হয় সঠিকভাবে, তাহলে সারা দিনের কর্মক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই
বেড়ে যায়। আর এই শুরুটা কোথা থেকে হয়? অবশ্যই খাওয়া থেকে।
পোস্ট সূচিপত্র: সকালে খালি পেটে এই ৫টি খাবার খেতে ভুলবেন না
সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের জন্য সকালটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আমাদের দিন শুরু হয় সকাল দিয়ে। তাই
সকাল বেলা যদি ভালো খাবার আমাদের শরীরে না যায় তবে সারাদিন আমরা ঠিকমতো কাজ করতে
পারবো না এবং সারাদিন ক্লান্তি বোধ করবো। তাই সকালে এমন কিছু খেতে হবে যাতে
আমাদের শরীর সারাদিন সবল বা শক্তিশালী থাকে এবং কাজের একটি যেন মনোযোগী হয়।
সকালে খালি পেটে এই ৫টি খাবার খেতে ভুলবেন না’এই বিষয়ের সর্বপ্রথম খাবারটি হচ্ছে
জল বা পানি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক গ্লাস জল পান করা আমাদের শরীরের জন্য খুবই
উপকারী। রাতের দীর্ঘ বিশ্রামের পর আমাদের শরীর কিছুটা জলশূন্য থাকে এবং জল পান
করলে তা পূরণ হয়। এটি শুধু আমাদের তৃষ্ণাই মেটায় না, বরং শরীরের ভেতরের
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে সতেজ করে তোলে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে চলতে সাহায্য
করে। জল আমাদের শরীরকে ডিটক্সিফাই করতেও দারুণ কাজ করে, অর্থাৎ শরীরের জমে থাকা
ক্ষতিকর টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। তাই, সকালে খালি
পেটে জল পান করা যেন একটি নতুন দিনের জন্য আমাদের শরীরকে প্রস্তুত করে তোলার
প্রথম ধাপ। এটি আমাদের সারাদিনের শক্তি যোগায় এবং শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার
রাখে। অনেকে মনে করেন, সকালে এক গ্লাস জল পান করলে শরীর বেশ চনমনে থাকে, যা দিনের
শুরুটা ভালো করতে সাহায্য করে।
আমরা অনেকেই সকালে চা বা কফি পান করার আগে জল পান করতে ভুলে যান, যা মোটেও ঠিক
নয়। কারণ চা বা কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীরকে আরো জলশূন্য করে তুলতে পারে। তাই,
প্রথমে এক গ্লাস জল পান করে শরীরকে হাইড্রেটেড করা বুদ্ধিমানের কাজ। এটি
মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়াকেও উন্নত করে, যার ফলে শরীর খাবার থেকে শক্তি উৎপাদন
করতে আরো বেশি সক্ষম হয়। জল পানের অভ্যাসটি সহজ হলেও এর উপকারিতা অনেক গভীর। এটি
শুধু শারীরিক নয়, মানসিক সুস্থতার জন্যও অপরিহার্য। সকালে ঘুম থেকে উঠে জল পান
করলে এক ধরনের সতেজতা অনুভব হয়, যা মনকে শান্ত ও চনমনে রাখে। অনেকেই সকালে
শরীরচর্চা করার আগে জল পান করেন, যা শরীরকে ওয়ার্কআউটের জন্য প্রস্তুত করে এবং
শক্তি যোগায়। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে। চলুন তবে জেনে আসি
সকালে খালি পেটে জল পান করার আরো কিছু কার্যকারি উপকারিতা সম্পর্কে।
শরীরের ডিটক্সিফিকেশন ও পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি:
সকালে খালি পেটে জল পান করলে শরীরের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সতেজ হয় এবং জমে
থাকা বিষাক্ত পদার্থ বা টক্সিন শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে। আমরা উপরে
জেনেছি, রাতের দীর্ঘ বিশ্রামের পর আমাদের শরীর নিজস্ব প্রক্রিয়াতে টক্সিন জমা
করে। সকালে জল পান করলে এই টক্সিনগুলো প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে
যায়। এটি লিভার এবং কিডনির কাজকে সহজ করে তোলে, যা শরীরের প্রাকৃতিক পরিশোধন
প্রক্রিয়াকে আরো শক্তিশালী করে। এছাড়া, পরিপাকতন্ত্রের জন্য জল অপরিহার্য। এটি
মলের নরমতা বজায় রাখে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক। সকালে জল পান করলে
অন্ত্রের গতি বৃদ্ধি পায় এবং হজম প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। এটি খাবার
হজমে সাহায্যকারী এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে তোলে এবং পুষ্টি উপাদান শোষণ ক্ষমতা
বাড়ায়। ফলস্বরূপ, আমাদের শরীর খাবারের পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে পারে
এবং হজম সংক্রান্ত সমস্যা কমে আসে। তাই, সকালে খালি পেটে জল পান করা যেন শরীরের
ভেতরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার একটি সহজ উপায়, যা আমাদের সামগ্রিক
স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।
মেটাবলিজম বৃদ্ধি ও ওজন নিয়ন্ত্রণ:
সকালে খালি পেটে জল পান করলে আমাদের শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়াকে
বাড়িয়ে তোলে। মেটাবলিজম হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শরীর খাবারকে শক্তিতে
রূপান্তরিত করে। দ্রুত মেটাবলিজম হলে শরীর আরো বেশি ক্যালোরি পোড়ায়, এমনকি
বিশ্রামরত অবস্থায়ও। তাই, সকালে জল পান করলে আপনার শরীরের ক্যালোরি পোড়ানোর
ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সকালে
জল পান করলে পেট ভরা মনে হয় যা অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমায়। অনেকে
ক্ষুধা পেলে খাবারের বদলে জল পান করেন, যা ওজন কমাতে দারুণ সহায়ক। গবেষণায় দেখা
গেছে, যারা প্রতিদিন সকালে পর্যাপ্ত জল পান করেন, তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
অন্যদের তুলনায় সহজ হয়। জল শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় চর্বি এবং বিষাক্ত পদার্থ
বের করে দিতে সাহায্য করে, যা ওজন কমাতেও পরোক্ষভাবে সহায়তা করে। তাই, সকালে
খালি পেটে জল পান করা একটি সহজ এবং কার্যকর উপায় যা আপনার মেটাবলিজম বাড়িয়ে
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ত্বকের সতেজতা ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি:
সুন্দর এবং সতেজ ত্বকের জন্য জল অপরিহার্য। সকালে খালি পেটে জল পান করলে ত্বকের
কোষগুলো সতেজ থাকে এবং ত্বক ভেতর থেকে হাইড্রেটেড হয়। পর্যাপ্ত জল পান না করলে
ত্বক শুষ্ক, নিস্তেজ এবং বলিরেখা প্রবণ হয়ে ওঠে। জল ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে
সাহায্য করে, যা ত্বককে কোমল এবং মসৃণ রাখে। এটি ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়
এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে যে বলিরেখা দেখা দেয়, তা কমাতেও সহায়ক। আপনার
যদি ত্বকে ব্রণ উঠে তবে আপনি জল পান করুন কেননা জলের মধ্যে এমন একটি শক্তি আছে যা
আপনার ব্রণকে দূর করতে সাহায্য করবে। জল শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা ত্বকের
কোষগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন এবং পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।
ফলস্বরূপ, ত্বক আরো উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত দেখায়। এছাড়া, জল ত্বকের ছিদ্রপথ
থেকে বিষাক্ত পদার্থ এবং ময়লা বের করে দিতে সাহায্য করে, যা ব্রণ এবং অন্যান্য
ত্বকের সমস্যা কমাতে সহায়ক। তাই, সকালে খালি পেটে জল পান করা আপনার ত্বকের
সৌন্দর্য বাড়ানোর একটি প্রাকৃতিক উপায়। নিয়মিত এই অভ্যাসটি অনুসরণ করলে ত্বক
ভেতর থেকে উজ্জ্বল ও সতেজ থাকবে।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও মনোযোগ বৃদ্ধি:
আমাদের মস্তিষ্ক প্রায় ৭৫% জল দিয়ে গঠিত। তাই, মস্তিষ্কের সঠিক কার্যকারিতার
জন্য পর্যাপ্ত জল অপরিহার্য। সকালে খালি পেটে জল পান করলে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের
সরবরাহ বাড়ে, যা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সতেজ রাখে এবং তাদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি
করে। জলশূন্যতা হলে মস্তিষ্কের কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যেমন- মনোযোগের অভাব,
ক্লান্তি, মাথা ঘোরা এবং স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা। সকালে জল পান করলে মস্তিষ্কের
কোষগুলো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে এবং বর্জ্য পদার্থ অপসারণ
করতে পারে। এটি আমাদের মানসিক সতেজতা বাড়ায় এবং মনোযোগ ও একাগ্রতা বৃদ্ধি করে।
যারা সকালে কাজ শুরু করার আগে এক গ্লাস জল পান করেন, তারা নিজেদের আরো ফোকাসড এবং
এনার্জেটিক অনুভব করেন। এটি আমাদের মনকে শান্ত রাখে এবং উদ্বেগ ও চাপ কমাতে
সাহায্য করে। তাই, আপনার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক মানসিক কার্যকারিতা
উন্নত করার জন্য সকালে খালি পেটে জল পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:
সকালে খালি পেটে জল পান করলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়।
জল শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন এবং ব্যাকটেরিয়া বের করে দিতে সাহায্য করে, যা
সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্যাপ্ত জল পান করলে শ্বেত
রক্তকণিকা ভালোভাবে কাজ করতে পারে, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধের মূল ভিত্তি।
শ্বেত রক্তকণিকা বাইরের জীবাণু এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরকে সুস্থ
রাখে। এছাড়া, জল আমাদের লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমকে সচল রাখে, যা রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতাকে সমর্থন করে। লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম শরীরের বর্জ্য পদার্থ এবং টক্সিন
অপসারণে সাহায্য করে এবং এটি আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য
অংশ। নিয়মিত সকালে জল পান করলে গলা ব্যথা, সর্দি-কাশি এবং অন্যান্য সাধারণ রোগের
ঝুঁকি কমে। এটি শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে এবং আমাদের
শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখে।
সকালে খালি পেটে মধু ও হালকা গরম জল খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে এই ৫টি খাবার খেতে ভুলবেন না’এই বিষয়ের দ্বিতীয় খাবারটি হচ্ছে
মধু ও হালকা গরম জল। সকালে খালি পেটে গরম জলের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করলে শরীরের
অনেক উপকার হয়ে থাকে। এটি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজম শক্তি বাড়ায় এবং
শরীরের নানা সমস্যা দূর করে। যারা প্রতিদিন সকালে মধু ও গরম জল পান করেন, তারা
সাধারণত অনেক বেশি সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকেন। চলুন নিচে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে
জেনে আসা যাক:
ওজন কমাতে সহায়ক:
সকালে খালি পেটে মধু ও হালকা গরম জলের মিশ্রণ পান করা ওজন কমানোর জন্য একটি দারুণ
কার্যকর উপায়। মধু শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে।
দ্রুত মেটাবলিজম মানে শরীর আরো বেশি ক্যালোরি পোড়ায়, যা ওজন কমানোর জন্য খুবই
জরুরি। এই মিশ্রণটি পান করলে পেট ভরা মনে হয়, যা অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা
কমায়। অনেকেই সকালের খাবারে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করেন, যা ওজন বাড়ার একটি
প্রধান কারণ। মধু ও জলের মিশ্রণ সকালের ক্ষুধা নিবারণ করে এবং জাঙ্ক ফুড খাওয়ার
ইচ্ছা কমায়। মধু একটি প্রাকৃতিক চিনি হলেও এটি প্রক্রিয়াজাত চিনির মতো দ্রুত
রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না, বরং শরীরকে শক্তি যোগায়। এটি শরীরের অতিরিক্ত
চর্বি কমাতে পরোক্ষভাবে সহায়তা করে। এছাড়া, মধু শরীরে জমে থাকা টক্সিন বের করে
দিতে সাহায্য করে, যা ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করে তোলে। তাই, সকালে খালি
পেটে এই মিশ্রণটি পান করা একটি স্বাস্থ্যকর এবং সহজলভ্য উপায় যা আপনাকে আপনার
ওজনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে:
সকালে খালি পেটে মধু ও হালকা গরম জল পান করলে হজম প্রক্রিয়া দারুণভাবে উন্নত
হয়। হালকা গরম জল পরিপাকতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে এবং অন্ত্রের গতি বৃদ্ধি করে। মধু
একটি প্রাকৃতিক প্রিবায়োটিক, যা অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত
করে। এই উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো হজমে সহায়তা করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায়
রাখে। এই মিশ্রণটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই কার্যকর। মধু মলকে নরম করে এবং
সহজে শরীর থেকে বের হতে সাহায্য করে। এটি পেটে গ্যাস, ফোলাভাব এবং অ্যাসিডিটির
মতো সমস্যা কমাতেও সহায়ক। মধু হজমকারী এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে তোলে, যা
খাবারকে আরো ভালোভাবে ভাঙতে এবং পুষ্টি উপাদান শোষণ করতে সাহায্য করে। ফলস্বরূপ,
আমাদের শরীর খাবার থেকে আরো বেশি পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে এবং হজম সংক্রান্ত
সমস্যা কমে আসে। নিয়মিত এই অভ্যাসটি অনুসরণ করলে আপনার পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকবে
এবং আপনি নিজেকে আরো সতেজ অনুভব করবেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
মধু একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদান।
সকালে খালি পেটে মধু ও হালকা গরম জলের মিশ্রণ পান করলে আমাদের শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। মধুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী শরীরের
কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিকেলস বা ক্ষতিকর কণার হাত থেকে রক্ষা করে। ফ্রি র্যাডিকেলস
কোষের ক্ষতি করে এবং বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সংক্রমণ ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এটি
সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা এবং ফ্লুর মতো সাধারণ অসুস্থতা প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর।
মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলে এবং
শরীরের ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখে। এটি শরীরের লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমকে সচল রাখে, যা
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিয়মিত এই মিশ্রণটি পান করলে
আপনার শরীর ভেতর থেকে শক্তিশালী হবে এবং আপনি কম অসুস্থ হবেন।
গলা ব্যথা উপশম ও শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্য:
সকালে খালি পেটে মধু ও হালকা গরম জলের মিশ্রণ গলা ব্যথা এবং শ্বাসযন্ত্রের
সমস্যায় দারুণ উপশম দেয়। মধু একটি প্রাকৃতিক কফ নিরাময়কারী এবং
অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি এজেন্ট। এটি গলার প্রদাহ এবং জ্বালা কমাতে সাহায্য করে।
হালকা গরম জল গলার শুষ্কতা দূর করে এবং শ্লেষ্মা পাতলা করতে সাহায্য করে, যা কাশি
কমাতে সহায়ক। এই মিশ্রণটি সর্দি, কাশি, ব্রঙ্কাইটিস এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের
সংক্রমণে খুব উপকারী। মধু গলায় একটি পাতলা স্তর তৈরি করে, যা গলাকে আরাম দেয়
এবং জ্বালা কমাতে সাহায্য করে। এটি ঘুমানোর সময় কাশি কমাতেও সহায়ক। অনেক
চিকিৎসক সর্দি-কাশির চিকিৎসায় ওষুধের পাশাপাশি মধু ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তাই,
যদি আপনার গলা ব্যথা বা শ্বাসযন্ত্রের কোনো সমস্যা থাকে, তবে সকালে খালি পেটে মধু
ও হালকা গরম জলের মিশ্রণ পান করা একটি প্রাকৃতিক এবং কার্যকর সমাধান হতে পারে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও ডিটক্সিফিকেশন:
সকালে খালি পেটে মধু ও হালকা গরম জলের মিশ্রণ পান করলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা
বৃদ্ধি পায়। মধু একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং ময়েশ্চারাইজার, যা
ত্বককে পরিষ্কার ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে। এই মিশ্রণটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ
বা টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে অপরিহার্য।
যখন শরীর ভেতর থেকে পরিষ্কার থাকে, তখন ত্বকেও তার প্রভাব দেখা যায়। এটি ত্বকের
ছিদ্রপথ থেকে ময়লা এবং বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়, যা ব্রণ এবং অন্যান্য
ত্বকের সমস্যা কমাতে সহায়ক। মধু ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা ত্বকের
কোষগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন এবং পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।
ফলস্বরূপ, ত্বক আরো উজ্জ্বল, মসৃণ এবং প্রাণবন্ত দেখায়। নিয়মিত এই মিশ্রণটি পান
করলে আপনার ত্বক ভেতর থেকে স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল থাকবে, যা আপনার আত্মবিশ্বাস
বাড়াতেও সাহায্য করবে।
সকালে খালি ভেজানো বাদাম খাওয়ার পুষ্টিগুণ
আজকের আমাদের বিষয় সকালে খালি পেটে এই ৫টি খাবার খেতে ভুলবেন না’এর তৃতীয় খাবারটি
হচ্ছে ভেজানো বাদাম। অনেকেই জানেন না, বাদাম ভিজিয়ে খেলে তার পুষ্টিগুণ আরো বাড়ে।
সকালে খালি পেটে ৪-৫টি ভেজানো বাদাম খেলে শরীর যেমন সুস্থ থাকে, তেমনি নানা রোগ
প্রতিরোধ হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
-
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়: বাদামে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং
ভিটামিন ই মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং মানসিক
চাপ কমায়।
-
হাড় মজবুত করে: ভেজানো বাদামে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড়ের গঠন ও
শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বিশেষ করে বাচ্চা ও বয়স্কদের জন্য এটি অত্যন্ত
প্রয়োজনীয়।
-
হার্ট ভালো রাখে: বাদামে থাকা স্বাস্থ্যকর চর্বি রক্তে খারাপ
কোলেস্টেরল কমায় এবং হার্টের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে। নিয়মিত বাদাম খেলে
হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে।
-
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী: বাদামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণাগুণ
ত্বককে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত রাখে এবং চুলের গোড়া মজবুত করে। এতে চুল পড়ে
যাওয়ার সমস্যা কমে যায়।
-
পাচনতন্ত্র সুস্থ রাখে: বাদামে থাকা ফাইবার পেট পরিষ্কার রাখতে
সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। এটি হজমে সহায়ক এবং পেটের গ্যাস কমাতে
কার্যকরী।
সকালে খালি ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার উপকারিতা
ইসুবগুলের ভুষি একটি প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান, যা খালি পেটে খেলে অনেক রোগ নিরাময়ে
সাহায্য করে। এটি মূলত ফাইবারে সমৃদ্ধ এবং হজম প্রক্রিয়ায় দারুণ কার্যকর। চলুন
তবে জেনে আসা যাক সকালে খালি ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
-
কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণ: ইসুবগুলের ভুষি কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য একটি
প্রাকৃতিক এবং অত্যন্ত কার্যকর সমাধান। এতে প্রচুর পরিমাণে সলুবল এবং ইনসলুবল
ফাইবার থাকে। সলুবল ফাইবার জল শোষণ করে জেলের মতো পদার্থ তৈরি করে, যা মলকে
নরম করে এবং অন্ত্রের মধ্য দিয়ে এর চলাচল সহজ করে। ইনসলুবল ফাইবার মলের
পরিমাণ বাড়ায় এবং নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে। এটি অন্ত্রের গতি বৃদ্ধি
করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ সহজে বের করে দেয়। নিয়মিত সকালে খালি
পেটে ইসুবগুলের ভুষি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয় এবং অন্ত্রের
স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
-
হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে: ইসুবগুলের ভুষি হজম প্রক্রিয়াকে
সামগ্রিকভাবে উন্নত করে। এটি পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার রাখে এবং অন্ত্রে
উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। এই উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো হজমে
সহায়তা করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। ইসুবগুলের ভুষি খেলে পেট
ফাঁপা, গ্যাস এবং অ্যাসিডিটির মতো হজম সংক্রান্ত সমস্যা কমে আসে। এটি খাবার
থেকে পুষ্টি উপাদান শোষণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে আরো ভালোভাবে পুষ্টি
গ্রহণ করতে সাহায্য করে। তাই, একটি সুস্থ হজমতন্ত্রের জন্য ইসুবগুলের ভুষি
একটি অপরিহার্য উপাদান।
-
কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: ইসুবগুলের ভুষিতে থাকা সলুবল
ফাইবার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়ক। এটি কোলেস্টেরলকে অন্ত্র
থেকে শোষিত হতে বাধা দেয় এবং শরীর থেকে বের করে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে,
নিয়মিত ইসুবগুলের ভুষি খেলে খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমে আসে এবং ভালো
কোলেস্টেরল এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক, যা হৃদপিণ্ডের
স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি।
-
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইসুবগুলের
ভুষি একটি চমৎকার প্রাকৃতিক প্রতিকার। এতে থাকা ফাইবার শর্করা শোষণকে ধীর করে
দেয়, যার ফলে খাবার খাওয়ার পর রক্তে শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধি ঘটে না। এটি
ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা
স্থিতিশীল রাখে। যারা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
রাখতে চান, তাদের জন্য সকালে খালি পেটে ইসুবগুলের ভুষি খাওয়া খুবই উপকারী
হতে পারে।
-
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: ইসুবগুলের ভুষি ওজন কমাতেও কার্যকরী ভূমিকা
পালন করে। এতে থাকা ফাইবার জল শোষণ করে পেটে ফুলে ওঠে, যার ফলে দীর্ঘক্ষণ পেট
ভরা থাকে এবং ক্ষুধা কমে। এটি অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমায় এবং
ক্যালোরি গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ইসুবগুলের ভুষি খেলে শরীর থেকে
বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায় এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়, যা পরোক্ষভাবে
ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। সকালে খালি পেটে এটি পান করলে দিনের
শুরুটা স্বাস্থ্যকর হয় এবং ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জন করা সহজ হয়।
সকালে খালি পেটে কলা খাওয়ার উপকারিতা
আজকে আমাদের মূল বিষয় অর্থাৎ “সকালে খালি পেটে এই ৫টি খাবার খেতে ভুলবেন না” এর
সর্বশেষ খাবারটি হচ্ছে কলা। কলা এমন একটি ফল, যা খালি পেটে খেলে অনেক উপকার পাওয়া
যায়। এটি সহজপাচ্য, পুষ্টিকর এবং শক্তি বৃদ্ধিকারী। চলুন জেনে আসি কলার কিছু
উপকারিতা সম্পর্কে।
দ্রুত শক্তি যোগান ও ক্লান্তি দূরীকরণ:
সকালে খালি পেটে কলা খেলে আপনার শরীর দ্রুত শক্তি পায় এবং ক্লান্তি দূর হয়।
কলায় প্রাকৃতিক চিনি যেমন গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ থাকে, যা দ্রুত রক্তে
শোষিত হয়ে শরীরে শক্তি যোগান দেয়। রাতের দীর্ঘ বিশ্রামের পর সকালে আমাদের শরীরে
শক্তির অভাব দেখা দেয় এবং একটি কলা খেলে এই অভাব দ্রুত পূরণ হয়। এটি শুধু
তাৎক্ষণিক শক্তিই দেয় না, বরং কলায় থাকা ফাইবার শক্তির মাত্রা স্থিতিশীল রাখে
এবং হঠাৎ করে শক্তির ওঠানামা প্রতিরোধ করে। যারা সকালে ব্যায়াম করেন বা দিনের
শুরুতে অনেক কাজ থাকে, তাদের জন্য কলা একটি চমৎকার জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। এটি
পেশীগুলোকে সতেজ রাখে এবং ওয়ার্কআউটের সময় ভালো পারফরম্যান্স দিতে সাহায্য করে।
হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে:
কলা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে দারুণ কার্যকর। এতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি
ফাইবার থাকে, যা অন্ত্রের চলাচলকে নিয়মিত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে
সহায়ক। কলায় থাকা রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ হজম হতে সময় নেয় এবং এটি অন্ত্রে
উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখে।
এটি মলের নরমতা বজায় রাখে এবং সহজে শরীর থেকে বের হতে সাহায্য করে। যারা নিয়মিত
হজম সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য সকালে খালি পেটে কলা খাওয়া খুবই
উপকারী হতে পারে। এটি পেটে গ্যাস, ফোলাভাব এবং অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা কমাতেও
সহায়ক। কলা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবেও কাজ করতে পারে, যা পেটের
অতিরিক্ত অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে।
হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষা:
কলা পটাশিয়ামের একটি চমৎকার উৎস, যা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে এবং উচ্চ
রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান
কারণ। কলায় থাকা ফাইবারও হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী, কারণ এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা
নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিয়মিত কলা খেলে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে এবং এর
কার্যকারিতা উন্নত হয়। এছাড়া, কলায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম হৃদপিণ্ডের পেশীগুলোর
সঠিক কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। তাই, সকালে খালি পেটে কলা খাওয়া আপনার
হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদী হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে দারুণ সহায়ক হতে
পারে।
মেজাজ ভালো রাখে ও মানসিক চাপ কমায়:
কলা আপনার মেজাজ ভালো রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। কলায় ট্রিপটোফান
নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা শরীরে সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়। সেরোটোনিন
একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা "সুখ হরমোন" নামে পরিচিত। এটি মেজাজ ভালো রাখতে,
উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা কমাতে সাহায্য করে। সকালে কলা খেলে আপনি দিনের শুরুটা
ইতিবাচকভাবে করতে পারবেন এবং মানসিক সতেজতা অনুভব করবেন। কলায় থাকা ভিটামিন বি৬
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতার জন্য
গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানসিক চাপ মোকাবিলায় শরীরকে সাহায্য করে এবং ভালো ঘুমের জন্য
সহায়ক।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
সকালে খালি পেটে কলা খাওয়া ওজন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলায়
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং ক্ষুধা কমায়। এটি
অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমায় এবং ক্যালোরি গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করতে
সাহায্য করে। যদিও কলাতে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, তবুও এর ফাইবার শর্করা শোষণকে ধীর
করে দেয়, যার ফলে রক্তে শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধি ঘটে না। এটি ইনসুলিনের স্পাইক
প্রতিরোধ করে, যা অতিরিক্ত চর্বি জমার ঝুঁকি কমায়। সকালে কলা খেলে দিনের শুরুটা
স্বাস্থ্যকর হয় এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমে। এটি একটি
স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবেও কাজ করে, যা আপনাকে দীর্ঘক্ষণ সতেজ রাখে।
সকালে খালি পেটে খাওয়ার গ্রহণের সঠিক সময়
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা উপরে বিস্তারিতভাবে জেনে আসলাম, সকালে কোন ৫টি খাবার খেলে
আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী হতে পারে। আমরা জানি, সকালের সময়টা শরীরের জন্য
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাতে ঘুমানোর পরে দীর্ঘ সময় শরীর কোনও খাবার পায় না। এই
সময় শরীর ভিতরে পরিষ্কার হয়ে যায় এবং হজম ব্যবস্থাও কিছুটা ধীর হয়ে পড়ে। এই কারণে
সকালে খালি পেটে কিছু খাওয়ার আগে সময় এবং খাবার দুটি বিষয়ই গুরুত্বের সাথে
বিবেচনা করা উচিত। অনেকেই তাড়াহুড়া করে ঘুম থেকে উঠে কিছু একটা খেয়ে নেয়, কিন্তু
এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় নিজের শরীরকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে
দিন। এরপর এক গ্লাস কুসুম গরম পানি খেয়ে নিতে পারেন। এতে হজমের গতি বাড়ে এবং
শরীরে জমে থাকা টক্সিন বেরিয়ে যেতে শুরু করে। অনেকে এই সময়টাতে লেবু বা মধু
মিশিয়ে খান, তাও ভালো এবং আমরা উপরে কিন্তু এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনেছি। তবে
একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন প্রিয় পাঠকবৃন্দ- এই পানির সঙ্গে কখনই দুধ বা চা মেশানো
উচিত নয়। খালি পেটে চা বা কফি খেলে অ্যাসিডিটি বাড়তে পারে।
এক গ্লাস গরম পানি খাওয়ার অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর আপনি সকালে খালি পেটে এই ৫টি
খাবার খেতে ভুলবেন না এমন তালিকার যেকোনো একটি গ্রহণ করতে পারেন। যেমন মধু মেশানো
হালকা গরম জল, কলা, ভেজানো বাদাম, ইসুবগুলের ভুষি কিংবা একাধিক ফল-এগুলো সঠিক
সময়ে খাওয়া শরীরকে সারাদিন কর্মক্ষম রাখে। তবে এখানে সময়ের ব্যাপারটি খুব
গুরুত্বপূর্ণ। একেবারে ঘুম থেকে উঠে কিছু খেয়ে নেওয়া যেমন ঠিক না, তেমনই বেশি
দেরি করাও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
অনেকেই মনে করেন, যত তাড়াতাড়ি খাবেন ততই ভালো, কিন্তু বাস্তবতা হলো-সঠিক সময় মানে
হলো শরীর প্রস্তুত হওয়ার পর খাওয়া। যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে সঙ্গে সঙ্গে আপনি
টয়লেটে যান, তাহলে খাবারের পূর্বে কিছু সময় অপেক্ষা করাই ভালো। এর ফলে শরীর
স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসতে পারে এবং খাবার ভালোভাবে হজম হয়। বিশেষ করে যারা সকালে
ব্যায়াম করেন, তারা ব্যায়ামের আগে খালি পেটে কিছু খাওয়া একদমই উচিত নয়। এ সময়
শরীর ক্লান্ত থাকে এবং হজম ক্ষমতাও দুর্বল থাকে। যারা সকালের নাশতা করার অভ্যাস
রাখেন না বা খুব কম খেয়ে থাকেন, তাদের জন্য খালি পেটে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ
করা আরো বেশি জরুরি। কারণ এই অভ্যাস শরীরকে শক্তি দেয়, মনকে সতেজ করে এবং পেটের
গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে রক্ষা করে। তাই সকালে খালি পেটে খাওয়ার গ্রহণের
সঠিক সময় মানে হলো-নিজের শরীর বুঝে, ধীরে ধীরে এবং নিয়ম মেনে স্বাস্থ্যকর কিছু
খাওয়া। এতে করে সারা দিন আপনি ফুরফুরে বোধ করবেন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে।
খালি পেটে ফল খাওয়া কতটা উপকারী?
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের শরীর অনেকটা রিসেট অবস্থায় থাকে। এমন সময় শরীরে যে
কোনও খাবার প্রবেশ করলেই তার প্রভাব অনেক দ্রুত পড়ে। এই কারণে সকালের প্রথম খাবার
হিসেবে ফল খাওয়া বিশেষ উপকারী। ফলের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক শর্করা,
ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। খালি পেটে ফল
খেলে শরীর খুব সহজে ফলের পুষ্টিগুণ গ্রহণ করতে পারে, কারণ তখন পেট একেবারে খালি
থাকে এবং হজম প্রক্রিয়াও থাকে সক্রিয় অবস্থায়।
ফল খাওয়ার সময় সবচেয়ে ভালো হয় যদি তা চিবিয়ে ধীরে ধীরে খাওয়া যায়। এতে করে ফলের
ফাইবার ও এনজাইম শরীর সহজে নিতে পারে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত স্বাভাবিক
হয়ে আসে। খালি পেটে আপেল, পেঁপে, কলা, পেয়ারা, খেজুর, কিসমিস কিংবা আঙ্গুর জাতীয়
ফল খাওয়া যেতে পারে। এসব ফলে থাকা ভিটামিন 'সি', পটাশিয়াম, এবং প্রাকৃতিক গ্লুকোজ
মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে, মনকে প্রশান্ত রাখে এবং হজমে সহায়তা করে। এছাড়াও, ফলের রস
নয় বরং সম্পূর্ণ ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়ায়। আপনি চাইলে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে
ভেজানো ছোলা
খেতে পারেন যা আপনার শরীরে প্রচুর পরিমাণে শক্তি জোগাবে।
ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন। যেমন- খালি পেটে টক
জাতীয় ফল যেমন আমড়া বা কাঁচা আম না খাওয়াই ভালো। এগুলো পেটে অ্যাসিড তৈরি করে এবং
অনেকের গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তবে পেঁপে বা কলা জাতীয় ফল খুব ভালো কাজ
করে। পেঁপেতে থাকা এনজাইম পাকস্থলীর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং হজমে
সাহায্য করে। কলা আবার শরীরের শক্তি বাড়ায় ও মানসিক চাপ কমায়। ফলে, প্রতিদিন
সকালে খালি পেটে একটি বা দুটি পছন্দের মৌসুমি ফল খেলে শরীর দিনভর চাঙ্গা থাকে এবং
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
ফলের আরেকটি বিশেষ দিক হলো, এটি স্বাভাবিকভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
বিশেষ করে যেসব মানুষ অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত, তাদের জন্য খালি পেটে ফল খাওয়া
একটি কার্যকর অভ্যাস হতে পারে। কারণ ফল শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে দেয় না এবং
অন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তাই যারা স্বাস্থ্য সচেতন, ওজন নিয়ন্ত্রণে
রাখতে চান কিংবা দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বাঁচতে চান, তাদের জন্য ফল খাওয়ার বিকল্প
নেই। এমন অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই গড়ে তুললে ভবিষ্যতের জন্য এক ধরনের পুঁজি হয়ে
থাকবে।
সকালে খালি পেটে (জল, মধু ও হালকা গরম জল, ভেজানো বাদাম, ইসুবগুলের ভুষি, কলা)
এই ৫টি খাবার অভ্যাসের উপকারিতা
যদি সকালের শুরুটা সঠিক উপায়ে করা হয়, তবে সারা দিনটা ভালোভাবে কাটানো যায়।
আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি অংশ সকালের খাবার থেকে একটা শক্তি নেয়, যার ভিত্তিতে
সারা দিনের কার্যক্ষমতা নির্ভর করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন সকালে নির্দিষ্ট
কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে শরীরের ভেতরে ও বাইরে পরিবর্তন
দেখা যায়। বিশেষ করে কয়েকটি নির্দিষ্ট খাবার রয়েছে যেগুলো খালি পেটে খেলে উপকার
পাওয়া যায় বহু গুণে।
-
প্রথমেই বলা যায় জল বা পানি নিয়ে; যা সম্পর্কে আমরা উপরে বিস্তারভাবে জেনেছি।
ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক বা দুই গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করলে তা পেট
পরিষ্কার রাখে। দীর্ঘ রাত্রির উপবাসের পর আমাদের শরীর ডিহাইড্রেটেড থাকে। এই
সময় পর্যাপ্ত পানি পান শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে এবং হজমে সহায়তা করে।
অনেকে এতে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করেন। এতে আরো উপকার পাওয়া যায়। মধুর
প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং
পেটের ভেতরের অস্বস্তি দূর করে। গরম পানির সঙ্গে লেবু মেশালে তা লিভার
ডিটক্সে সাহায্য করে। এটি একদিকে যেমন মেটাবলিজম বাড়ায়, তেমনি ওজন
নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
-
পরের উপকারি খাদ্য হচ্ছে ভেজানো বাদাম এবং আমরা এটি সম্পর্কেও উপরে
বিস্তারভাবে জেনেছি। বিশেষ করে কাঁচা কাঠবাদাম বা আখরোট রাতভর ভিজিয়ে সকালে
খালি পেটে খাওয়ার উপকারিতা প্রচুর। এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদপিণ্ড
ভালো রাখে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। বাদামের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন
'ই', ম্যাগনেসিয়াম ও ফাইবার যা পেট ভরিয়ে রাখে অনেকক্ষণ। এতে অতিরিক্ত খাওয়ার
প্রবণতা কমে এবং দিনভর মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়। ভেজানো বাদাম পেট ঠান্ডা
রাখে, হজমে সাহায্য করে এবং শরীরের ত্বক ও চুল সুন্দর রাখতে ভূমিকা রাখে।
-
এরপর হচ্ছে, ইসুবগুলের ভুষি খালি পেটে খেলে পেট পরিষ্কার থাকে। এটি একটি
প্রাকৃতিক ফাইবার যা অন্ত্রে পানি ধরে রাখে এবং মল সহজে নির্গমনে সহায়তা করে।
যারা কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটের গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য ইসুবগুল খুব
কার্যকর। এক চামচ ইসুবগুল হালকা গরম দুধ বা পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে অনেক
উপকার পাওয়া যায়। এটি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। তবে
খেয়াল রাখতে হবে, এটি খাওয়ার পরপর প্রচুর পানি পান করতে হবে। না হলে উল্টো
সমস্যা হতে পারে।
-
সর্বশেষ হচ্ছে কলা। এই সহজলভ্য ফলটি খালি পেটে খাওয়ার উপকার অনেক। কলা
পটাশিয়াম সমৃদ্ধ যা হৃদপিণ্ড এবং পেশির কার্যক্রমে সাহায্য করে। এছাড়া এটি
হজমে সহায়তা করে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে। অনেকেই সকালের নাশতায় ভারী কিছু
না খেয়ে দুটি কলা খেয়ে থাকেন, যা একদিকে শক্তির উৎস আবার অন্যদিকে ওজন
নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। কলায় রয়েছে ট্রিপটোফ্যান নামক একটি উপাদান যা মস্তিষ্কে
সেরোটোনিন নিঃসরণে সহায়তা করে, যার ফলে মানসিক চাপ কমে এবং মন ভালো থাকে।
এই পাঁচটি খাবার প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খাওয়ার অভ্যাস করলে শুধু হজমই ভালো হয়
না, বরং শরীর ও মন দুটোই সুস্থ থাকে। নিয়মিত এই অভ্যাস আপনাকে বহু রোগ থেকে দূরে
রাখবে।
সকালে খালি পেটে কী কী ফল খাওয়া যেতে পারে?
সকালে ফল খাওয়ার কথা আগেই বলা হয়েছে, তবে প্রশ্ন থাকে-সব ফল কি খালি পেটে খাওয়া
যায়? এর উত্তর হলো-না। কিছু নির্দিষ্ট ফল রয়েছে যেগুলো খালি পেটে খেলে উপকার হয়
এবং কিছু ফল আছে যেগুলো খালি পেটে খেলে সমস্যা তৈরি করে। তাই ফল নির্বাচন করতে
হবে বুঝে শুনে এবং সময় অনুযায়ী।
খালি পেটে খাওয়ার জন্য আদর্শ ফলগুলোর মধ্যে রয়েছে আপেল, পেঁপে, কলা, কিসমিস,
আঙ্গুর, খেজুর ও তরমুজ। আপেল ফাইবার সমৃদ্ধ একটি ফল। এটি পেট পরিষ্কার রাখে এবং
ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সকালের শুরুতে একটি আপেল খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা
থাকে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে। তেমনি পেঁপে একটি চমৎকার পাচক ফল। এতে
থাকা এনজাইম হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং যারা পেটের গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্যে
ভোগেন তাদের জন্য বিশেষ উপকারী। কলাও একটি সহজলভ্য এবং উপকারী ফল। এতে থাকা
পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম শরীরকে শক্তি দেয় এবং মানসিক প্রশান্তি আনে। এছাড়াও
খেজুর খালি পেটে খাওয়া যায় কারণ এতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি, যা শরীরকে তাৎক্ষণিক
শক্তি দেয়। যারা রোজা রাখেন বা দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকেন, তারা খেজুর খেয়ে দিন
শুরু করতে পারেন। তরমুজের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই পানি। এটি শরীরকে হাইড্রেট রাখে
এবং কিডনির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তরমুজ খুব ঠান্ডা
হওয়া উচিত নয়।
অনেকে মনে করেন, খালি পেটে আম বা আনারস খাওয়া ভালো, কিন্তু এগুলো অ্যাসিডিক
প্রকৃতির ফল হওয়ায় খালি পেটে খেলে পেটে জ্বালাপোড়া বা অ্যাসিডিটি হতে পারে। তাই
এই ধরনের ফল দুপুর বা বিকেলে খাওয়া ভালো। এছাড়া টক জাতীয় ফল যেমন কমলালেবু,
মাল্টা এসব খালি পেটে না খাওয়াই ভালো যদি আপনার অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে। তবে কেউ
যদি একদম সুস্থ ও হজমশক্তি ভালো হয়, তাহলে মাঝেমধ্যে এসব ফল খেতে পারেন।
খালি পেটে যেসব খাবার খাওয়া উচিত নয়
খালি পেটে কিছু খাবার গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সকালে ঘুম থেকে উঠে
পেট যখন একদম খালি থাকে, তখন কিছু খাবার সরাসরি হজম হওয়া কঠিন হয় বা এগুলো পেটে
অ্যাসিড তৈরি করে যা অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যার জন্ম দেয়। তাই খালি পেটে কোন
খাবারগুলি এড়ানো উচিত, সেটা জানা খুব জরুরি।
-
প্রথমেই বলা যেতে পারে টকজাতীয় ফল যেমন আম, আনারস, লেবু ইত্যাদি খালি পেটে
খাওয়া উচিত নয়। এই ফলগুলোতে প্রচুর অ্যাসিড থাকে, যা পেটের আলসার বা
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। যারা গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির
সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এগুলো খুবই ক্ষতিকর। এমনকি সুস্থ ব্যক্তির
ক্ষেত্রেও সকালে খালি পেটে এই ধরনের টক ফল খেলে পেটে জ্বালা বা অস্বস্তি হতে
পারে।
-
এরপর তেল ও মশলাযুক্ত ভারি খাবার খালি পেটে গ্রহণ করা ঠিক নয়। যেমন
ঝাল-মসলাযুক্ত নাস্তা বা ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার। এগুলো হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে
এবং অনেক সময় পেটে গ্যাস, ফুলে যাওয়া বা পেট ব্যথার কারণ হয়। বিশেষ করে যারা
ডাইজেস্টিভ সমস্যা রয়েছে, তাদের এ ধরনের খাবার পরিহার করা দরকার।
-
চা-কফি খালি পেটে খাওয়া শরীরের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপকারী নয়। চায়ের
মধ্যে থাকা ক্যাফেইন পেটের লাইনিং (mucosa) ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং
অ্যাসিডিটির সমস্যাকে তীব্র করে তোলে। এর ফলে অনেকেই সকালে খালি পেটে চা
খাওয়ার পর পেটে অস্বস্তি বা গ্যাসের সমস্যা অনুভব করেন। তাই সকালে গরম পানি
বা হালকা মিষ্টি জল খাওয়া ভালো।
-
দুগ্ধজাত দ্রব্য যেমন দুধ বা দুধ থেকে তৈরি পণ্য খালি পেটে না খাওয়াই ভালো।
দুধ হজমে বেশ সময় নেয় এবং অনেকের পেট ঠিকমতো দুধ হজম করতে পারে না, বিশেষ
করে যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স রয়েছে তাদের জন্য। ফলে দুধ খালি পেটে খেলে পেট
ফাঁপা, গ্যাস বা বদহজম হতে পারে।
-
প্রক্রিয়াজাত বা রেডিমেড খাবার যেমন কেক, পেস্ট্রি, শর্করাযুক্ত নাশতা,
ফাস্ট ফুড খালি পেটে একেবারে এড়ানো উচিৎ। এগুলো শরীরের জন্য অতিরিক্ত
ক্ষতিকর এবং দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। খালি পেটে এইসব খাবার
শরীরের মেটাবলিজমকে ধীর করে এবং রক্তে সুগারের মাত্রা দ্রুত বাড়ায় যা
স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
সুতরাং, পেটের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে সকালে খালি পেটে এই ধরণের খাবার খাওয়া
এড়ানো খুবই জরুরি। বরং হালকা, সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার নির্বাচন করলে শরীর
সুস্থ থাকে এবং বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
নিয়মিত খাবারের পাশাপাশি আরো কিছু টিপস
অনেকেই শুধুমাত্র সকালে ভালো কিছু খেয়েই দিন ভালো কাটানোর আশা করেন। কিন্তু
স্বাস্থ্য ধরে রাখতে হলে শুধু একটি সময়ের খাবার নয়, বরং সারাদিনের খাদ্যাভ্যাসকেও
গুরুত্ব দিতে হয়। সকালে খালি পেটে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি
অতিরিক্ত টিপস মেনে চললে শরীর আরো সুস্থ রাখা সম্ভব। এসব টিপস প্রতিদিনের জীবনে
সহজে অনুসরণযোগ্য এবং বিজ্ঞানসম্মত।
-
প্রথম টিপস: খাবার চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। আমরা অনেক সময়
তাড়াহুড়ার কারণে খাবার চট করে গিলে ফেলি। এতে করে খাবার সঠিকভাবে হজম হয় না
এবং পেটে গ্যাস, বমি ভাব বা পেট ফেঁপে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিটি
খাবার কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ বার চিবিয়ে খেলে তা সহজে হজম হয় এবং শরীর পুষ্টি
গ্রহণে সক্ষম হয়। এমনকি পানি খাওয়ার সময়ও হঠাৎ করে গলাধঃকরণ না করে ধীরে ধীরে
পান করা উচিৎ। এতে শরীর পানি ধরে রাখতে পারে বেশি সময়।
-
দ্বিতীয় টিপস: পর্যাপ্ত ঘুম। ঘুমের সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক অনেক। রাতভর
ভালো ঘুম হলে হজম ভালো হয়, এবং সকালে উঠে খিদেও জাগে স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু
যারা রাতজেগে মোবাইল বা টিভি দেখে সময় কাটান এবং পর্যাপ্ত ঘুমান না, তারা
সকালে খালি পেটে খাবার খেলেও তার প্রভাব তেমনভাবে পড়ে না। শরীর ক্লান্ত থাকে,
হজমে সমস্যা হয় এবং খাবারের পুষ্টিগুণ শরীর ঠিকমতো নিতে পারে না। তাই প্রতি
রাতে অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
-
তৃতীয় টিপস: প্রতিদিন অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করা
দরকার। এটি সকালে খালি পেটে করা যেতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে পানির পাশাপাশি
হালকা কিছু খেয়ে নেওয়া উচিত। যেমন একটি কলা বা ভেজানো বাদাম। ব্যায়াম শরীরকে
চনমনে রাখে, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়।
যারা সকালে হাঁটতে যান বা হালকা জগিং করেন, তারা দেখবেন সারাদিন ক্লান্তি কম
লাগে এবং মনও থাকে সতেজ।
এই অতিরিক্ত টিপসগুলো আপনার সকালের স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রভাব আরো বাড়িয়ে দেবে।
তাই কেবল কী খাব তা জানলেই চলবে না, কীভাবে খাব, কতটা খাব এবং শরীরকে কীভাবে
প্রস্তুত রাখব-এগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ মন্তব্য
আমরা আজকের আর্টিকেলে শেষ অংশে পৌছে গেছে এবং আমরা শেষ মন্তব্য হিসেবে বলতে পারি
যে- সকালে খালি পেটে শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি সারা
দিনের কর্মক্ষমতা, মনোযোগ এবং শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখতে সাহায্য
করে। তাই সকালে খালি পেটে স্বাস্থ্যসম্মত কিছু খাবার গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তোলা
একদমই ভুল নয়, বরং সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য।
উপরে যেসব খাবারের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো নিয়মিত খেলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা যেমন
গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্য, অতিরিক্ত ওজন, ক্লান্তি ইত্যাদি থেকে রক্ষা পাওয়া
সম্ভব। তাছাড়া শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তিও
বেশি হয়। এই অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে আপনার জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করবে। তবে সবকিছুতেই
পরিমিতি মেনে চলা উচিত। অনেক সময় অতিরিক্ত ভালো কিছু খাওয়া ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর
হতে পারে। তাই নিজ শরীরের ওপর খেয়াল রাখুন, কোন খাবার আপনার জন্য ভালো কাজ করছে
আর কোন খাবার সমস্যার কারণ হচ্ছে, তা বুঝে চলুন। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ
নিন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের শুরুটা হয় সকালে খালি পেটে খাওয়া
দিয়েই। তাই আজ থেকেই খালি পেটে কিছু সুস্থকর খাবারের অভ্যাস করুন। এতে শরীর ও মন
দুই হবে চাঙ্গা, থাকবেন দীর্ঘদিন সুস্থ ও কর্মক্ষম। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে
কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে আপনার জীবন হবে আরো ভালো এবং সুন্দর।
BLOGGER MRH-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url