সকালে খালি পেটে এই ৫টি খাবার খেতে ভুলবেন না
আজকে আমাদের আলোচনার মূল বিষয়টি হচ্ছে- "কিডনি সুস্থ রাখতে মেনে চলুন এই ৭ টি
নিয়ম"। আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো। তবে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
আমরা আজকে বিস্তারিতভাবে জানবো কিডনি সুস্থ রাখা কার্যকরী মোট ৭টি উপায় সম্পর্কে
ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করবো।
পোস্ট সূচিপত্র: কিডনি সুস্থ রাখতে মেনে চলুন এই ৭ টি নিয়ম
কিডনি সুস্থ রাখতে মেনে চলুন এই ৭ টি নিয়ম
কিডনি আমাদের শরীরের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আমরা প্রতিদিন নানান কাজে
ব্যস্ত থাকি, কিন্তু আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর দিকে নজর দেওয়া
হয় না। কিডনি ঠিক তেমনই একটি অঙ্গ, যা আমাদের শরীর থেকে ময়লা, অতিরিক্ত পানি ও
বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। অথচ এই অঙ্গটি যদি ঠিকমতো কাজ না করে, তাহলে আমাদের
পুরো শরীরের ক্ষতি হয়। তাই কিডনি ভালো রাখতে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলা খুব জরুরি।
বিশেষ করে কিডনি সুস্থ রাখার কথা মাথায় রেখে দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাস গড়ে
তুললে এই কিডনি সমস্যা থেকে বাঁচা সম্ভব।
প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে, কিডনি ভালো রাখতে হলে সঠিক জীবনযাপন করতে হবে। এর মানে
হচ্ছে- খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম, পানি পান, ব্যায়াম, ওষুধ খাওয়া, মানসিক চাপ- সব
কিছুতেই ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। যেকোনো একটি জায়গায় অসতর্কতা দেখা দিলে কিডনি
ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। অনেক সময় মানুষ বুঝতেই পারে না, কখন কিডনিতে
রোগ আক্রামণ করেছে বা কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাই আগেই সাবধানতা অবলম্বন করাই
সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
কিডনি সুস্থ রাখার জন্য পরিবারের সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি। একজন
ব্যক্তি যদি নিজের যত্ন নেয়, তাহলে তার দেখাদেখি অন্যরাও তা থেকে উৎসাহ পায়। অনেক
সময় বাবা-মা নিজের শরীরের যত্ন না নিলে, সন্তানরাও গুরুত্ব দেয় না। তাই ছোট থেকেই
সন্তানকে শেখাতে হবে কিডনির যত্ন নেওয়ার কথা। এতে করে পুরো পরিবার মিলে সুস্থ
জীবনযাপন সম্ভব হয়। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কিডনির সমস্যা শুরু হলে তা
পুরো শরীরকে প্রভাবিত করে। শরীরে পানি জমা, রক্তে বিষাক্ত পদার্থ বেড়ে যাওয়া,
প্রস্রাবের সমস্যা- এসব কিছু দেখা দিতে পারে। তাই আগে থেকে নিয়ম মেনে চললে বড় রোগ
হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এটাই সবচেয়ে বড় করনীয়- আগে থেকেই যত্ন নেওয়া।
প্রিয় পাঠক, আমরা এখন ধারাবাহিকভাবে কিডনি সুস্থ রাখার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ
পয়েন্ট সম্পর্কে আলোচনা করবো। আপনি যদি এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলেন তবে
অবশ্যই আপনি কিডনি সমস্যা থেকে সমাধান পাবেন এবং সুস্থ সুন্দর জীবন স্বাচ্ছন্দে
উপভোগ করতে পারবেন।
পরিমাণ মতো পানি পান করুন
কিডনি ভালো রাখতে সবচেয়ে সহজ অথচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস হলো- প্রতিদিন
যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করা। আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষ, অঙ্গ, এমনকি রক্ত
চলাচলের ক্ষেত্রেও পানির প্রয়োজন পড়ে। কিডনি পানির মাধ্যমে শরীরের বিষাক্ত
পদার্থগুলো ফিল্টার করে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। কিন্তু যদি পানি কম পান
করা হয়, তাহলে এই বর্জ্যগুলো শরীরে জমে যেতে পারে এবং কিডনির ওপর চাপ পড়ে। তাই
প্রতিদিনের অভ্যাসে পর্যাপ্ত পানি পান করা আবশ্যক। অনেকে আবার মনে করেন, কেবল
গরমকালে শরীর ঘেমে গেলে পানি পান করলেই যথেষ্ট। কিন্তু আসলে তা নয়। শীতকালেও শরীর
পানি হারায়, শুধু ঘামের মাধ্যমে সেটা টের পাওয়া যায় না। দিনে অন্তত ৮ থেকে ১০
গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। পানি পান শরীরে শুধু কিডনি নয়, ত্বক, হজম ও
রক্তচাপ সবকিছুর উন্নতিতে সাহায্য করে। তাই কিডনির যত্ন নেওয়ার জন্য এটি সবচেয়ে
সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি।
একটি বড় সমস্যা হলো- অনেকেই যখন তৃষ্ণা পায় তখনই কেবল পানি পান করেন। কিন্তু
আমাদের শরীর তৃষ্ণা অনুভব করার আগেই পানি চায়। সেজন্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর
পানি পান করা জরুরি। সকালের সময়টিতে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি কিডনি পরিষ্কারে
সহায়ক হয়। আবার খালি পেটে এক গ্লাস পানি পান করলে তা শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের
করে দিতে সাহায্য করে। এটা একটি ভালো অভ্যাসে পরিণত করা যেতে পারে। অনেক সময় চা,
কফি বা কোমল পানীয়কে পানি পান করার বিকল্প মনে করা হয়। কিন্তু এসব পানীয় শরীরে
ডিহাইড্রেশন তৈরি করে এবং কিডনির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। সুতরাং শুধু পানি পান
করাই কিডনির জন্য উপকারী। যদি কেউ পর্যাপ্ত পানি না পান করেন, তাহলে প্রস্রাব ঘন
ঘন হবে না বা হলেই তা গাঢ় রঙের হতে পারে, যেটি কিডনি সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হতে
পারে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে পানি পান করাটা সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর করণীয়।
সর্বদা স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
কিডনি সুস্থ রাখতে খাদ্যাভ্যাসের কোনো বিকল্প নেই। আমরা যা খাই, তার প্রভাব
সরাসরি কিডনির উপর পড়ে। অতিরিক্ত লবণ, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চর্বিযুক্ত মাংস বা
চিপস, ফাস্টফুড- এসব খাবার কিডনির বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। নিয়মিত এসব খেলে
শরীরে সোডিয়াম বেড়ে যায়, যা রক্তচাপ বাড়ায় এবং কিডনির ওপর চাপ ফেলে। তাই খাদ্য
তালিকায় পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি। প্রথমেই বলতে হয়, খাবারে লবণের পরিমাণ কমাতে
হবে। লবণ বেশি খেলে রক্তচাপ বাড়ে এবং কিডনির ফিল্টারিং ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়া
প্রচুর পরিমাণে সবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে শসা, তরমুজ,
লাউ, পালং শাক ইত্যাদি কিডনির জন্য খুবই উপকারী। এই খাবারগুলো শরীরকে হাইড্রেট
রাখে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে।
অনেক সময় আমরা দেহের প্রোটিন চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত মাংস খেয়ে ফেলি, বিশেষ করে
গরুর বা খাসির মাংস। এতে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়, যা কিডনির জন্য
ক্ষতিকর হতে পারে। প্রোটিন গ্রহণে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ডাল, সয়াবিন, ডিমের
সাদা অংশ এসব থেকেও প্রয়োজনীয় প্রোটিন পাওয়া যায়। তাই পরিমাণমতো প্রোটিন খাওয়া
উচিত। খাবারে চিনির পরিমাণও কমাতে হবে। মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন: মিষ্টি, চকলেট,
সফট ড্রিংকস, কিডনির ক্ষতি করে। এগুলো ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়, আর ডায়াবেটিস
থাকলে কিডনি সহজেই আক্রান্ত হয়। তাই প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে এসব খাবার এড়িয়ে চলা
এবং স্বাস্থ্যকর বিকল্প খোঁজা খুব দরকার। এটি কেবল কিডনি নয়, শরীরের প্রতিটি
অঙ্গকে ভালো রাখতে সহায়ক।
রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস। এই দুইটি রোগ যদি
নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে কিডনির রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে কিডনি
তার কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে হলে সবার আগে রক্তচাপ ও
ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এটি শুধু চিকিৎসকের কাজ নয়, নিজেরও
দায়িত্ব রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কিডনির ক্ষুদ্র রক্তনালীতে চাপ পড়ে এবং কিডনি
পর্যাপ্ত রক্ত পায় না। ফলে কিডনি তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। একইভাবে
ডায়াবেটিসে শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ জমে যায়, যা কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেমে ক্ষতি
করে। তাই যাদের এই দুইটি রোগ আছে, তাদের অবশ্যই নিয়মিত রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার
পরীক্ষা করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
খাবারের অভ্যাস, শরীরচর্চা, ওষুধ গ্রহণ- এই তিনটি বিষয় এই দুই রোগ নিয়ন্ত্রণে বড়
ভূমিকা রাখে। কম লবণ, কম চিনি এবং পরিমিত খাবার খাওয়া উচিত। প্রতিদিন অন্তত ৩০
মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম কিডনি এবং রক্তচাপ দুটোর জন্যই ভালো। অনেকেই নিয়মিত
ওষুধ না খেয়ে বিরতি দেন বা চিকিৎসকের পরামর্শ মানেন না, যা ভবিষ্যতে ভয়াবহ হতে
পারে। সবার আগে মনে রাখা দরকার, কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে তা আর আগের অবস্থায় ফিরে আসে
না। তাই শুরুতেই রোগ নিয়ন্ত্রণে আনলে কিডনি সুস্থ রাখা সম্ভব হয়। এই কারণেই
“কিডনি সুস্থ রাখতে মেনে চলুন এই ৭ টি নিয়ম”-এর মধ্যে রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম। এটি মানলে অনেক বড় ঝুঁকি এড়ানো যায়।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য ব্যায়াম করার কোনো বিকল্প নেই। ঠিক তেমনভাবে কিডনি ভালো
রাখার ক্ষেত্রেও ব্যায়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা প্রায়ই শুনি ব্যায়াম শরীরের
রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে, মানসিক চাপ কমায়। এই সবকিছু
কিডনির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। কারণ রক্তচাপ এবং রক্তের গুণগত মান ঠিক না থাকলে
কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায়। তাই প্রতিদিনের রুটিনে অন্তত ৩০ মিনিট সময় বের করে
নিয়মিত হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করলে কিডনি সুস্থ থাকে।
এখন প্রশ্ন আসে- কোন ব্যায়ামগুলো মূলত করবে? ব্যায়াম বলতে জিমে যাওয়া বা দৌড়ানো
বুঝায় না। আপনি প্রতিদিন ভোরে বা বিকেলে হালকা হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। চাইলেই
ঘরের ভেতরে বসেই কিছু হালকা স্ট্রেচিং বা যোগব্যায়ামও করতে পারেন। যারা ব্যস্ত
থাকেন বা কাজের সময় পান না, তারা অফিস থেকে ফেরার পথে কিছুটা হেঁটে আসতে পারেন।
এমনকি প্রতিদিন সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করলেও তা শরীরের রক্তচলাচল ভালো রাখে এবং
কিডনিকে চাঙ্গা করে। নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের বাড়তি চর্বি গলে যায়। এতে
করে ওজন কমে এবং ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগ দূরে থাকে। আর এ দুটো রোগ না
থাকলে কিডনির ওপর চাপ কম পড়ে। এছাড়া ব্যায়াম করলে ঘাম হয়, শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ
ও পানি বেরিয়ে যায়, যেটা কিডনির কাজকে সহজ করে। এই ছোট ছোট অভ্যাস ভবিষ্যতের বড়
অসুবিধা থেকে বাঁচায়।
অনেকেই ভাবেন, বয়স বেশি হলে বা শরীর দুর্বল হলে ব্যায়াম করা যায় না। আসলে বয়সভেদে
ব্যায়ামের ধরন বদলাতে হয়, কিন্তু একেবারে বাদ দেওয়া ঠিক নয়। বয়স্ক ব্যক্তিরাও
হালকা হাঁটা বা শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের ব্যায়াম করতে পারেন। তাই “কিডনি সুস্থ
রাখতে মেনে চলুন এই ৭ টি নিয়ম”- এর মধ্যে নিয়মিত ব্যায়াম করা একটি চমৎকার উপায়,
যা সহজ, কম খরচে করা যায় এবং ফলও অনেক বেশি।
ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন
ধূমপান এবং অ্যালকোহল- এই দুটি জিনিস কিডনির সবচেয়ে বড় শত্রু। অনেকে ভাবেন এগুলো
শুধু ফুসফুস বা লিভারের ক্ষতি করে, কিন্তু বাস্তবে তা কিডনির উপরও মারাত্মক
প্রভাব ফেলে। ধূমপানের কারণে শরীরের রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়, ফলে কিডনি সঠিকভাবে
রক্ত পায় না। অপরদিকে অ্যালকোহল শরীরে অতিরিক্ত টক্সিন তৈরি করে, যেগুলো কিডনি
দিয়ে ছেঁকে ফেলতে হয়। নিয়মিত এই অভ্যাস থাকলে কিডনির উপর চাপ পড়ে এবং তা ধীরে
ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। এছাড়া, ধূমপান করলে রক্তচাপ বাড়ে এবং রক্তের ভিতর ক্ষতিকর
উপাদান তৈরি হয়। এই উপাদানগুলো কিডনির ক্ষুদ্র রক্তনালী বন্ধ করে দেয়। ফলে কিডনি
পর্যাপ্ত রক্ত পায় না এবং ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। দীর্ঘদিনের ধূমপান কিডনি
ফেইলিওরের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। যারা প্রতিদিন ৫ থেকে ১০টি সিগারেট খান,
তাদের কিডনি ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক বেশি। অথচ ধূমপান বন্ধ করলে সেই ঝুঁকি ধীরে
ধীরে কমে আসে।
অন্যদিকে অ্যালকোহল শরীরের পানির ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে। অনেকেই মদ্যপান করার পর
প্রচণ্ড প্রস্রাবের চাপ অনুভব করেন, কারণ এটি কিডনিকে অতিরিক্ত কাজ করাতে বাধ্য
করে। ফলে শরীর দ্রুত পানি হারায় এবং কিডনি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে
অ্যালকোহল গ্রহণ করলে কিডনি তার স্বাভাবিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং রক্ত পরিশোধন
ব্যাহত হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- এই দুটি অভ্যাস মানসিক ও শারীরিকভাবে
এক ধরনের নির্ভরতা তৈরি করে। তাই এগুলো ছাড়তে হলে মন থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং
ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হয়। যারা ধূমপান বা মদ্যপান ছাড়তে চাচ্ছেন, তারা
বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সহায়তা নিতে পারেন। এটি সহজ নয়, কিন্তু সম্ভব। কারণ
“কিডনি সুস্থ রাখতে মেনে চলুন এই ৭ টি নিয়ম”- এর মধ্যে এটি সবচেয়ে জরুরি
নিয়মগুলোর একটি। কিডনি বাঁচাতে হলে জীবনযাপনেও বড় পরিবর্তন আনতে হবে।
ব্যথানাশক ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ কম গ্রহণ করুন
আজকাল অনেক মানুষ সামান্য ব্যথা অনুভব করলেই নিজে নিজেই ওষুধ সেবন করে থাকেন।
বিশেষ করে মাথাব্যথা, কোমর ব্যথা বা পেশির ব্যথায় অনেকে নিজ দায়িত্বে ব্যথানাশক
খাওয়া শুরু করেন। অথচ এই অভ্যাসটি কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। আমাদের
কিডনি শরীরের রক্ত ছেঁকে টক্সিন বা বর্জ্য বের করে দেয়। কিন্তু অতিরিক্ত
ব্যথানাশক ওষুধ এই প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে দেয়, ফলে কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম
বাধাগ্রস্ত হয়। অনেক সময় ওষুধে থাকা উপাদান কিডনির রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দেয়। বিশেষত
আইবুপ্রোফেন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধ দীর্ঘদিন সেবনের ফলে কিডনির কোষ ধীরে
ধীরে নষ্ট হতে শুরু করে। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাঁদের
কিডনির ঝুঁকি এমনিতেই বেশি থাকে। তার ওপর আবার নিয়মিত ব্যথানাশক খেলে ক্ষতি
দ্বিগুণ হয়ে যায়।
অনেকে অল্প কিছু ব্যথা বা অসুস্থতার কারণে অ্যান্টাসিড বা নানা ধরনের পেইন
রিলিভার খেয়ে থাকেন। এসব ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করলে শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য
নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলেও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এ ধরনের ওষুধ যতটা সম্ভব এড়িয়ে
চলা উচিত। যদি কখনো খুব প্রয়োজন হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে
হবে। মনে রাখবেন- একটা ছোট অভ্যাস কিডনি বিকল হওয়ার কারণ হতে পারে। কিডনি একবার
নষ্ট হয়ে গেলে আর আগের অবস্থায় ফেরা যায় না। তাই শরীর সচেতন হতে হবে, ব্যথা হলে
প্রথমে প্রাকৃতিক উপায় চেষ্টা করতে হবে, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
নিজের খেয়ালখুশি মতো ওষুধ খাওয়ার দিন শেষ।
পর্যাপ্ত ঘুম ও স্ট্রেস কমান
একটি সুস্থ শরীর ও সক্রিয় কিডনির জন্য ঘুম এবং মানসিক প্রশান্তি অপরিহার্য। যখন
আমরা ঘুমিয়ে থাকি, তখন আমাদের শরীরের কোষগুলো মেরামত হয় এবং রক্তচলাচল স্বাভাবিক
থাকে। এতে কিডনির ছাঁকনির কাজ সহজ হয় এবং কিডনি অনেকটা আরাম পায়। অপরপক্ষে,
দীর্ঘদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে কর্টিসল নামে এক ধরনের হরমোন বেড়ে যায়, যা
রক্তচাপ এবং রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে কিডনির উপর বাড়তি চাপ পড়ে।
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কেবল মনের ক্ষতি করে না, শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ,
বিশেষ করে কিডনির ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে। মানসিক চাপের কারণে রক্তনালীগুলো
সংকুচিত হয় এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ দীর্ঘদিন থাকলে কিডনির রক্তনালী
ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। ফলে কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না এবং ধীরে ধীরে তার
কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
সুস্থ কিডনির জন্য ঘুম যেন নিয়মিত হয়- এ বিষয়টি নিশ্চিত করা খুব জরুরি। একজন
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুম যেন গভীর ও
স্বস্তিদায়ক হয়, সেজন্য রাতে মোবাইল বা স্ক্রিন টাইম কমানো, নিরিবিলি ঘুমের
পরিবেশ তৈরি করা, এবং একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। স্ট্রেস
কমাতে নিয়মিত হাঁটা, ধ্যান বা মেডিটেশন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটানো এবং
আনন্দদায়ক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রয়োজন। মানসিক শান্তি থাকলে রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না। তাই ঘুম এবং মানসিক
স্বস্তিকে ছোট বিষয় মনে না করে জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া
উচিত।
প্রোটিন খাওয়ায় সতর্কতা অবলম্বন করুন
প্রোটিন শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান। এটি পেশি গঠনে
সাহায্য করে এবং দেহের কোষগুলো পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে অতিরিক্ত
প্রোটিন গ্রহণ কিডনির জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। কারণ, প্রোটিন ভেঙে শরীরে যে
বর্জ্য তৈরি হয়, তা ছেঁকে ফেলার কাজ কিডনিকে করতে হয়। অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের
ফলে কিডনির উপর চাপ বেড়ে যায়, ফলে এটি দ্রুত ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
বিশেষ করে যারা শরীরচর্চা করছেন বা ওজন বাড়াতে চাইছেন, তাঁরা অনেক সময় অতিরিক্ত
ডিম, মাংস বা প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে থাকেন। যদিও এতে শরীরের পেশি বাড়তে
পারে, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে কিডনি নীরবেই ক্ষতিগ্রস্ত
হয়। যারা আগে থেকেই কিডনি সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই চাপ আরও ভয়াবহ হতে
পারে। প্রতিদিন কতটা প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত, তা নির্ভর করে বয়স, ওজন ও শারীরিক
অবস্থার উপর। গড়ে একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.৮ গ্রাম
প্রোটিন যথেষ্ট। কারো যদি ৬০ কেজি ওজন হয়, তাহলে তাঁর ৪৮ গ্রাম প্রোটিন যথেষ্ট।
এর বেশি প্রোটিন নিয়মিত গ্রহণ করলে তা শরীরে জমে গিয়ে কিডনিকে চাপ দিতে শুরু করে।
সুতরাং, সুস্থ কিডনি পেতে হলে প্রোটিনের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। এমন নয় যে
প্রোটিন একেবারে বাদ দিতে হবে, তবে সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। খাদ্য তালিকায়
ডাল, দুধ, ডিম ও মাছের মতো প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রোটিন নিলে তা সহজে হজম হয় এবং
কিডনির উপরও কম চাপ পড়ে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অতিরিক্ত ওজন কেবল সৌন্দর্যের ক্ষতি করে না, এটি শরীরের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের
ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে কিডনির ওপর এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী এবং
মারাত্মক হতে পারে। ওজন বাড়লে শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ে, যা ডায়াবেটিসের
দিকে নিয়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিস আবার কিডনি বিকল হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
স্থূলতা কিডনির ওপর দুটি দিক থেকে চাপ তৈরি করে। প্রথমত, শরীরের অতিরিক্ত চর্বি
কিডনির ফিল্টার করার কাজে বাধা সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত ওজনের কারণে
রক্তচাপও বেড়ে যায়, যা সরাসরি কিডনির রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে কিডনির
ছাঁকনির কাজ দুর্বল হয়ে পড়ে।
ওজন কমানোর জন্য অনেকেই হঠাৎ করে না খেয়ে থাকেন বা ক্রাশ ডায়েট শুরু করেন, যা
মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বরং নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি
পান, এবং নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ও হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ৩০
মিনিট হাঁটা এবং ফাস্টফুড বা অতিরিক্ত চিনি বাদ দেওয়া ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার
অন্যতম উপায়। সুস্থ কিডনি পেতে হলে নিজেকে আয়নায় নয়, বরং ওজন মাপার যন্ত্রে
প্রতিমাসে একবার চেক করুন। ওজন যদি বেশি হয়, তাহলে ধীরে ধীরে সেটি কমাতে হবে।
অতিরিক্ত ওজন থাকলে শুধু কিডনি নয়, হার্ট, লিভার ও ফুসফুসও ক্ষতির মুখে পড়ে। তাই
প্রতিদিনের ছোট ছোট পরিবর্তনেই হতে পারে কিডনি রক্ষার বড় পদক্ষেপ।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
শরীরের ভেতরের অনেক রোগ বাইরে থেকে বোঝা যায় না। বিশেষ করে কিডনি সম্পর্কিত
সমস্যা শুরুতেই কোনো লক্ষণ দেয় না। তাই অনেক সময় যখন বোঝা যায় তখন অনেক দেরি হয়ে
যায়। এই কারণে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। কিডনি ঠিক আছে কি না,
তা জানতে রক্ত এবং প্রস্রাব পরীক্ষা করলেই অনেক কিছু জানা যায়। বিশেষত যাঁরা
ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাঁদের প্রতি ছয় মাস অন্তর কিডনি পরীক্ষা করা
উচিত।
একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষা যেমন: সিরাম ক্রিয়েটিনিন বা ইজিএফআর (eGFR) পরীক্ষার
মাধ্যমে বোঝা যায় কিডনি ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা। আবার ইউরিন টেস্টে প্রোটিন লিক
হচ্ছে কিনা, সেটিও ধরা পড়ে। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো লক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও
ইউরিনে প্রোটিন পাওয়া যাচ্ছে, যা কিডনি সমস্যার প্রাথমিক ইঙ্গিত দিতে পারে।
নিয়মিত এ ধরনের পরীক্ষা করলে সমস্যা আগে থেকেই ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা শুরু করা যায়।
এছাড়া, কিডনির স্বাস্থ্য জানার জন্য কিছু বিশেষ টেস্টও রয়েছে, যেমন:
আল্ট্রাসনোগ্রাফি, কিডনি স্ক্যান ইত্যাদি। যারা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ বা
অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগারে ভুগছেন, তাঁদের বছরে অন্তত একবার এই পরীক্ষা করানো
দরকার। অনেকেই ভাবেন, কিডনির সমস্যা হলে বোঝা যাবে। কিন্তু বাস্তবে এটি ‘নীরব
ঘাতক’। তাই শরীরে সমস্যা দেখা দেওয়ার আগেই সচেতন হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা অনেক সময় নিজের শরীরের যত্ন নিতে ভুলে যাই। কিন্তু মনে
রাখতে হবে, আমাদের কিডনি প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা নিরবিচারে কাজ করে যাচ্ছে। তাই তার
যত্ন নেওয়া আমাদের দায়িত্ব। মাসে একদিন ডাক্তার দেখানো বা পরীক্ষা করানো কোনো
কঠিন কাজ নয়। ছোট একটি পরীক্ষাই হয়তো বড় বিপদ এড়াতে পারে। তাই নিজেদের এবং
পরিবারের সবার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা উপরে বিস্তারিতভাবে জেনে নিলাম, ‘কিডনি সুস্থ রাখতে মেনে
চলুন এই ৭ টি নিয়ম’ সম্পর্কে। তবে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক কিডনি রোগের
প্রাথমিক লক্ষণসমূহ সম্পর্কে।
অনেক সময় কিডনির সমস্যা শরীরে নীরবে শুরু হয়। কোনো রকম শারীরিক ব্যথা বা অস্বস্তি
না থাকলেও ভেতরে ভেতরে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। তাই কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ যদি
বুঝে ফেলা যায়, তাহলে সময় থাকতেই চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়। নিচে এমন ৫টি
গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ তুলে ধরা হলো যেগুলোর প্রতি আমাদের কঠর দৃষ্টি দেওয়া দরকার-
প্রস্রাবে ফেনা বা অতিরিক্ত ফেনা হওয়া:
প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফেনা হওয়া বা সাবানের মতো ফেনা দেখা গেলে তা হতে পারে কিডনির
সমস্যার প্রথম লক্ষণ। এর মানে আপনার শরীরের প্রোটিন প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে
যাচ্ছে, যা একদম স্বাভাবিক নয়। কিডনি যদি সঠিকভাবে ফিল্টার করতে না পারে, তবে
প্রোটিন প্রস্রাবে চলে আসে। তাই এ রকম হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যাওয়া
জরুরি।
পায়ের গোড়ালি ও চোখের নিচে ফোলা:
শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে গেলে তা সাধারণত প্রথমে চোখের নিচে বা পায়ের গোড়ালিতে
ফোলার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। কিডনি যদি পানি ও সোডিয়াম সঠিকভাবে ছেঁকে বাইরে না
পাঠাতে পারে, তবে শরীরে ফুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এমন হলে একে হালকাভাবে
নেওয়া উচিত নয়।
অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা:
কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে প্রয়োজনীয় হরমোন তৈরি হয় না, যার কারণে রক্তে
অক্সিজেন কমে যায়। ফলে মানুষ সারাদিন ক্লান্ত অনুভব করে। হঠাৎ করে যদি প্রতিদিন
ঘুমিয়েও ক্লান্তি কাটে না, তাহলে কিডনির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো দরকার।
প্রস্রাবের রঙ বা গন্ধ পরিবর্তন:
প্রস্রাবের রঙ যদি খুব গাঢ় হয় বা তার গন্ধ তীব্র হয়, কিংবা বারবার প্রস্রাব যেতে
হয়, তাহলে কিডনির সমস্যা হতে পারে। কখনো কখনো প্রস্রাবে রক্তও দেখা যেতে পারে, যা
কিডনি ইনফেকশনের ইঙ্গিত দেয়। তাই যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেওয়া
উচিত।
হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া বা ক্ষুধা কমে যাওয়া:
কিডনি দুর্বল হলে শরীরে টক্সিন জমে যায়, যার কারণে ক্ষুধা কমে যায় এবং অনেক সময়
হঠাৎ করে ওজনও কমে যেতে পারে। এ অবস্থায় অনেকেই ভাবেন এটি ডায়েট বা অন্য কোনো
কারণে হচ্ছে, কিন্তু এটি হতে পারে কিডনির অবনতি।
কিডনি ভালো রাখার ঘরোয়া উপায়
কিডনিকে সুস্থ রাখতে আমরা অনেক কিছুই করতে পারি আমাদের রান্নাঘরের উপাদান দিয়েই।
বাজারে বিভিন্ন ‘কিডনি ক্লিনজার’ পাওয়া গেলেও, ঘরোয়া এবং ভেষজ উপায়ই সবচেয়ে
নিরাপদ ও কার্যকর। নিচে ১০টি উপাদান ও পদ্ধতি দেওয়া হলো যা কিডনি পরিষ্কার রাখতে
সহায়তা করে-
-
পানি পান বাড়ান: দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি কিডনির
মাধ্যমে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে।
-
লেবু পানি: সকালে খালি পেটে এক গ্লাস গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে
কিডনি পরিষ্কার থাকে।
-
মেথি ভেজানো পানি: রাতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেই পানি
খেলে কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ে।
-
তুলসী পাতা: তুলসীর রস কিডনিতে জমে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ পরিষ্কার করতে
সাহায্য করে।
-
করলা বা করল্লা রস: করলার রস কিডনির জন্য উপকারী, বিশেষ করে যারা
ডায়াবেটিসে ভোগেন তাঁদের জন্য।
-
অশ্বগন্ধা: এই ভেষজ উপাদান কিডনি সুরক্ষায় সাহায্য করে এবং স্ট্রেস
কমায়।
-
আদা ও রসুন: আদা ও রসুনের মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকে,
যা কিডনিকে সুস্থ রাখে।
-
আমলকী: এটি কিডনি থেকে ইউরিক অ্যাসিড বের করতে সাহায্য করে, পাশাপাশি
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
-
তরমুজ: এটি কিডনির জন্য প্রাকৃতিক ডিউরেটিক, অর্থাৎ শরীর থেকে পানি ও
বর্জ্য সহজে বের করে।
-
ডাঁটা শাকের স্যুপ: এটি নিয়মিত খেলে কিডনিতে জমে থাকা খনিজ সহজে বের
হয়ে যায়।
এই সব উপায় শুধু কিডনি পরিষ্কার করেই না, বরং কিডনি ফেইলিওর প্রতিরোধেও কাজ করে।
তবে অবশ্যই যাঁদের কিডনি সমস্যা আছে, তাঁদের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শেষ মন্তব্য
‘কিডনি সুস্থ রাখতে মেনে চলুন এই ৭ টি নিয়ম’ এই বিষয়ের আমরা আজকে অন্তিম পর্যায়ে
চলে এসেছি এবং অন্তিম পর্যায়ে এসে আমরা বলতে পারি যে- কিডনি আমাদের শরীরের সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি, যা প্রতিদিন আমাদের শরীর পরিষ্কার রাখার কাজ করে।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা এর যত্ন খুব কমই নিয়ে থাকি। এই লেখাটিতে কিডনি সুস্থ
রাখার ৭টি সহজ কিন্তু কার্যকর নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, যা প্রতিটি
মানুষের মেনে চলা উচিত। শুধু খাদ্যাভ্যাস বা ব্যায়াম নয়, কিডনি সুস্থ রাখতে হলে
আমাদের জীবনধারার পুরোটা পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান, ওষুধের
ব্যবহার সীমিত রাখা, পর্যাপ্ত ঘুম এবং স্ট্রেসমুক্ত জীবন-এসব ছোট ছোট অভ্যাস
কিডনিকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
একটি কথা মনে রাখবেন-কিডনির বিকল হওয়া মানে শুধু ডায়ালাইসিস নয়, বরং পুরো জীবন
বদলে যাওয়া। তাই সময় থাকতে সচেতন হওয়া দরকার। একবার কিডনি নষ্ট হলে আর সহজে ফেরত
পাওয়া যায় না। সেই তুলনায় প্রতিদিন একটু যত্ন নেওয়া অনেক সহজ। সর্বশেষে আমরা বলতে
পারি যে, কিডনির যত্ন নেওয়া মানেই নিজের ভবিষ্যতের যত্ন নেওয়া। আপনি, আমি বা যে
কেউ-আমাদের সবারই উচিত প্রতিদিনের এই ছোট ছোট নিয়ম মেনে চলা। সচেতন থাকুন, সুস্থ
থাকুন, কিডনিকে ভালো রাখুন।
BLOGGER MRH-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url