উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ৭ টি প্রাকৃতিক উপায়

আপনি কি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এবং জানতে চান উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ৭ টি প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে। তবে আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। কারণ এই ৭টি প্রাকৃতিক উপায় আপনাকে সহায়তা করবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে।

উচ্চ-রক্তচাপ-নিয়ন্ত্রণে-৭-টি-প্রাকৃতিক-উপায়

উচ্চ রক্তচাপ-যাকে আমরা অনেকেই হাই ব্লাড প্রেসার নামে জানি-একটি নীরব ঘাতক। এটা এমন এক সমস্যা, যেটা ধীরে ধীরে শরীরের নানা অঙ্গের ক্ষতি করে দেয়, কিন্তু আমরা তা বুঝতেই পারি না।

পোস্ট সূচিপত্র: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ৭ টি প্রাকৃতিক উপায়

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ৭ টি প্রাকৃতিক উপায়

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা সর্বপ্রথমে আলোচনা করবো উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ৭ টি প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে। আমরা ৭টি প্রাকৃতিক উপায় ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করবো। প্রিয় পাঠক আপনি কি জানেন, প্রতিদিন কিছু ছোট ছোট অভ্যাসের মাধ্যমে এই রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখা সম্ভব? ভাবছেন, কিভাবে? চলুন, জানি প্রাকৃতিক কিছু উপায়ে কীভাবে আপনি আপনার রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, ওষুধ ছাড়াই।

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কোন খাবার খাবেন এবং কোন খাবার বর্জন করবেন?

উচ্চ রক্তচাপ আমাদের দেশের একটি প্রচলিত স্বাস্থ্য সমস্যা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে ওষুধের পাশাপাশি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কিছু পরিবর্তন আনা খুবই জরুরি। কারণ আমাদের খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাসই অনেকাংশে রক্তচাপকে প্রভাবিত করে। আপনি যদি প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাহলে সবার আগে জানতে হবে কোন খাবার খাওয়া উচিত আর কোনগুলো থেকে দূরে থাকা দরকার। চলুন জেনে নেওয়া যাক তবে।

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর খাবার:

  • কাঁচা রসুন: রসুনে এমন কিছু উপাদান থাকে যা রক্তনালিকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে। দিনে এক কোয়া কাঁচা রসুন খেলে রক্তচাপ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এটি রক্তে থাকা খারাপ চর্বিও কমায়, যা হৃদয়ের ওপর চাপ কমায়।
  • কলা: কলা একটি সস্তা আর সহজলভ্য ফল, যা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। এই পটাশিয়াম আমাদের দেহের সোডিয়ামের প্রভাব কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। দিনে একটি কলা খাওয়ার অভ্যাস উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে পারে।
  • তরমুজ: তরমুজে থাকা ‘সিট্রুলিন’ নামের একটি উপাদান রক্তচাপ কমাতে কাজ করে। এটি রক্ত চলাচল সহজ করে এবং হৃদযন্ত্রে চাপ কমায়। গরমকালে নিয়মিত তরমুজ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • ওটস বা ওটমিল: ওটমিল ফাইবারে ভরপুর এবং এটি সহজে হজম হয়। যারা সকালের নাস্তা হিসেবে ওটস খান, তাদের রক্তচাপ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমায়।
  • কমলালেবু: এই ফলে ভিটামিন সি এবং খনিজ পদার্থ থাকে, যা হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। কমলালেবুতে থাকা পটাশিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রক্তচাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • ডালিম বা বেদানা: বেদানায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রক্তের প্রবাহ সহজ করে। এটি রক্তনালির স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং উচ্চ রক্তচাপ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করে। প্রতিদিন এক গ্লাস বেদানার রস খাওয়া যেতে পারে।
  • দুধ ও টক দই: কম চর্বিযুক্ত দুধ ও টক দইয়ে থাকে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। দিনে এক কাপ দুধ বা দই খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি মেলে এবং রক্তচাপও স্বাভাবিক থাকে।
  • শাকসবজি (বিশেষ করে পালংশাক): পালংশাক, লাল শাক বা মিষ্টি কুমড়ার শাক পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামে ভরপুর। এগুলো উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক। দৈনন্দিন খাবারে বিভিন্ন ধরনের শাক রাখলে হৃদয় সুস্থ থাকে।
  • টমেটো: টমেটোতে লাইকোপিন থাকে, যা রক্তনালির কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। কাঁচা টমেটো সালাদে খাওয়ার অভ্যাস করলে উপকার পাবেন।
  • বাদাম ও চিনাবাদাম: বাদামে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ও স্বাস্থ্যকর চর্বি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। অবশ্যই লবণ ছাড়া বাদাম খেতে হবে, নতুবা উল্টো ক্ষতি হতে পারে। প্রতিদিন অল্প পরিমাণ বাদাম খাওয়া নিরাপদ।
  • মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলুতে প্রচুর পটাশিয়াম ও আঁশ থাকে, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে ও বেশি খাওয়া রোধ করে। ভাপে সেদ্ধ করে খেলে উপকার বেশি।
  • লাল আঙ্গুর: আঙ্গুরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও পটাশিয়াম থাকে, যা রক্ত চলাচল সহজ করে। এটি হৃদয়ের ওপর চাপ কমায় এবং উচ্চ রক্তচাপ কমায়। আঙ্গুর খেতে মিষ্টি, তাই ছোটরাও সহজে খেতে পারে।
  • ব্রকলি: ব্রকলি একটি সবুজ শাকসবজি, যাতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি রয়েছে। এটি রক্তনালির চাপ কমায় এবং হৃদপিণ্ড ভালো রাখে। রান্না করে বা হালকা ভাপ দিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
  • কুমড়ো বীজ: এই ছোট ছোট বীজে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম ও দেহের প্রয়োজনীয় চর্বি থাকে। এটি রক্তনালির চাপ কমাতে কার্যকর। দিনে এক চামচ কুমড়ো বীজ খাওয়া উপকারী হতে পারে।
  • লবণ কম খাওয়া: যদিও এটি খাবার নয়, তবে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে লবণ কম খাওয়া সবচেয়ে জরুরি। অতিরিক্ত লবণ শরীরে পানি ধরে রাখে, যা রক্তচাপ বাড়ায়। তাই রান্নায় লবণ কম ব্যবহার করতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ থাকলে যেসব খাবার খাওয়া যাবে না:

  • অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার: লবণ আমাদের শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা রক্তচাপ বাড়ানোর অন্যতম কারণ। চিপস, প্যাকেটজাত খাবার, আচার বা সসে থাকা অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপকে আরও খারাপ করে তোলে। তাই প্রতিদিনের খাবারে লবণের পরিমাণ কমানো খুব দরকার।
  • ভাজাপোড়া খাবার: তেলেভাজা খাবার যেমন- সিঙ্গারা, সমোচা, পুরি, প্যাকেটের চিপস- এসব খাবারে ট্রান্স ফ্যাট থাকে, যা হৃদপিণ্ডের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এসব খাবার খেলে রক্তনালিতে চর্বি জমে এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়।
  • প্রসেসড মাংস (হট ডগ, সসেজ): হট ডগ, সসেজ বা প্রসেসড মাংসে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও কেমিক্যাল থাকে। এই ধরনের খাবার নিয়মিত খেলে রক্তচাপ বাড়ে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
  • ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: চা, কফি বা এনার্জি ড্রিংকস-এ থাকে ক্যাফেইন, যা রক্তচাপ হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেয়। যারা আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, তাদের জন্য এসব পানীয় বিপজ্জনক হতে পারে।
  • সফট ড্রিংকস বা কোল্ড ড্রিংকস: বাজারে পাওয়া বিভিন্ন কোমল পানীয়তে চিনি ও সোডিয়াম অনেক বেশি থাকে। এসব পানীয় শুধু রক্তচাপই বাড়ায় না, ওজনও বাড়ায়। নিয়মিত খেলে এটি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
  • মিষ্টি জাতীয় খাবার (রসগোল্লা, জিলাপি): অতিরিক্ত মিষ্টি শরীরে ইনসুলিন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। ফলে রক্তচাপ বাড়ে এবং হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ পড়ে। রসগোল্লা, লাড্ডু, জিলাপির মতো মিষ্টি খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
  • চর্বিযুক্ত লাল মাংস: গরু বা খাসির মাংসে থাকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা রক্তনালিতে জমে রক্তচাপ বাড়ায়। সপ্তাহে একদিন খেলেও পরিমাণে কম খেতে হবে এবং যতটা সম্ভব সিদ্ধ করে খাওয়া ভালো।
  • মাখন ও ঘি: মাখন ও ঘিতে প্রচুর ফ্যাট থাকে। এসব খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়, যা রক্তচাপ বাড়ায় এবং হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ায়। তাই রান্নায় এগুলো কম ব্যবহার করা উচিত।
  • ফাস্ট ফুড (বার্গার, পিজ্জা): ফাস্ট ফুডে একসাথে লবণ, চর্বি ও চিনি থাকে, যা তিনটিই উচ্চ রক্তচাপের জন্য ক্ষতিকর। এই খাবারগুলো খেতে যেমন মজা লাগে, শরীরের জন্য তেমনই বিপজ্জনক।
  • আচার: আচার তৈরিতে লবণ ও তেল ব্যবহার করা হয় অনেক বেশি পরিমাণে। দিনের পর দিন এসব খাওয়া হলে রক্তচাপ অনেক বেড়ে যেতে পারে। তাই উচ্চ রক্তচাপ থাকলে আচারের পরিমাণ কমিয়ে দিন।
  • নুডলস ও ইনস্ট্যান্ট খাবার: এ ধরনের খাবার সাধারণত বেশি লবণ ও প্রিজারভেটিভ দিয়ে তৈরি হয়। এগুলো দ্রুত তৈরি হয় ঠিকই, কিন্তু শরীরের জন্য একেবারে ভালো নয়। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে এগুলো না খাওয়াই ভালো।
  • কেক, বিস্কুট ও বেকড খাবার: বেকারি খাবারে লুকিয়ে থাকে চিনি, লবণ ও ট্রান্স ফ্যাট। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। প্রতিদিন সকালে বা বিকেলে এই খাবারগুলো খাওয়ার অভ্যাস রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • আলুর চিপস ও স্ন্যাকস: আলুর চিপসে সোডিয়াম এবং তেল দুই-ই বেশি থাকে। এগুলো নিয়মিত খেলে রক্তচাপ বাড়ে এবং কিডনির ওপরও চাপ পড়ে। তাই এমন খাবার যতটা সম্ভব কম খেতে হবে।
  • অতিরিক্ত ডিমের কুসুম: যদিও ডিম উপকারী, তবে ডিমের কুসুমে প্রচুর কোলেস্টেরল থাকে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সপ্তাহে ১-২টির বেশি কুসুম খাওয়া উচিত নয়। ডিমের সাদা অংশ খাওয়া নিরাপদ।
  • অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়: মদ বা অ্যালকোহল রক্তচাপ হঠাৎ বাড়িয়ে দেয়। এটি হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত করে এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের কারণ হতে পারে। তাই উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলা উচিত।

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার এমন একটি সমস্যা যা নীরবে শরীরকে ক্ষতি করে। তবে নিয়মিত ভালো খাবার খাওয়া এবং ক্ষতিকর খাবার এড়িয়ে চললে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আপনি যদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় উপকারী খাবারগুলো রাখেন এবং অপকারি খাবার থেকে দূরে থাকেন, তাহলে রক্তচাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাবার নিয়েই প্রথম সচেতনতা শুরু করা উচিত।

লবণ গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে যেসব অভ্যাস পরিবর্তন প্রয়োজন তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমানো। আমরা প্রতিদিন রান্নার খাবারের পাশাপাশি নানা ধরনের অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার খেয়ে থাকি, যা আমাদের অজান্তেই রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষ নিয়মিত অতিরিক্ত লবণ খান, তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ। তাই খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য যত কম লবণ ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো। লবণে থাকা সোডিয়াম রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে, যার ফলে হৃদযন্ত্রের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়। যারা প্রতিদিনের খাবারে অতিরিক্ত লবণ খান, তারা বুঝতে না পারলেও শরীরের ভেতরে ধীরে ধীরে রক্তচাপের ভারসাম্য নষ্ট হয়। সাধারণত দিনে ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়, কিন্তু আমাদের দেশে অনেকেই দিনে ৮ থেকে ১০ গ্রামেরও বেশি লবণ গ্রহণ করেন। এটি হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ায়।

লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমাতে চাইলে প্রথমেই কাঁচা লবণ দিয়ে ভর্তা বা সালাদ খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। অনেকে রান্না হয়ে যাওয়ার পর খাবারের ওপরে কাঁচা লবণ ছিটিয়ে খান, এটি খুবই ক্ষতিকর। সেইসঙ্গে রেস্তোরাঁর খাবার বা প্যাকেটজাত স্ন্যাকসেও অতিরিক্ত সোডিয়াম থাকে, যা সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা উচিত। বরং রান্নায় অন্যান্য মসলা যেমন আদা, রসুন, পেঁয়াজ, ধনে, জিরা ইত্যাদি ব্যবহার করে খাবারে স্বাদ আনা যেতে পারে। এতে লবণের প্রয়োজনও কমে আসে। অনেক সময় লবণ ছাড়াই খাবার বেশি সুস্বাদু করা যায়, শুধু অভ্যাসের পরিবর্তন প্রয়োজন। ধাপে ধাপে লবণের ব্যবহার কমানো হলে জিভের স্বাদ মানিয়ে নেয়। খাবারে লেবুর রস, টক দই বা নানা ধরনের ভেষজ মশলা যোগ করে আপনি খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে তুলতে পারেন। নিয়মিত কম লবণ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয় এবং ওষুধের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকাংশে কমে যায়।

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কোন ধরনের ব্যায়াম কার্যকর?

উচ্চ রক্তচাপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যায়াম এক গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। শারীরিক পরিশ্রম রক্তনালীর নমনীয়তা বজায় রাখে, হৃদযন্ত্রকে সক্রিয় রাখে এবং রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে। ফলে নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে রক্তচাপ অনেকটাই প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে ভারী ব্যায়াম নয়, বরং হালকা ও নিয়মিত ব্যায়াম বেশি কার্যকর। নিচে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়ামের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে:

উচ্চ-রক্তচাপ-কমাতে-কোন-ধরনের-ব্যায়াম-কার্যকর

  • হাঁটা: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হেঁটে চলাফেরা করলে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থাকে এবং রক্তচাপ কমে আসে। এটি সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ ব্যায়াম।
  • হালকা জগিং: সকালের ঠাণ্ডা পরিবেশে হালকা দৌড় হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • সাইকেল চালানো: নিয়মিত সাইকেল চালালে শরীরের নীচের অংশ সক্রিয় থাকে এবং রক্তসঞ্চালন সহজ হয়।
  • যোগব্যায়াম (ইয়োগা): বিশেষ করে প্রাণায়াম বা শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম মস্তিষ্কের চাপ কমায় এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে।
  • মেডিটেশন বা ধ্যান: মানসিক চাপ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। ধ্যান করার ফলে মন শান্ত হয় এবং রক্তচাপ কমে আসে।
  • সাঁতার: এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যায়াম যা শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সক্রিয় রাখে এবং হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
  • স্ট্রেচিং: প্রতিদিন হালকা স্ট্রেচিং করলে রক্তনালীগুলো নমনীয় থাকে এবং রক্তচাপ বাড়তে পারে না।
  • দড়ি লাফ: যারা নিয়মিত ঘরে ব্যায়াম করতে চান, তাদের জন্য দড়ি লাফ একটি উপকারী পদ্ধতি, তবে ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া এটি না করাই ভালো।
  • হালকা নাচ: মিউজিকের সঙ্গে নাচ শরীরের প্রতিটি অংশকে সক্রিয় করে, যা একটি আনন্দদায়ক ব্যায়ামের উপায়।
  • গার্ডেনিং বা বাগান পরিচর্যা: এই কাজে শরীরের বিভিন্ন পেশী সক্রিয় থাকে, যা এক ধরনের হালকা ব্যায়াম হিসেবেই কাজ করে।

নিয়মিত ব্যায়াম করলে শুধু উচ্চ রক্তচাপই নয়, ওজন, কোলেস্টেরল, ও ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে যে কোনো ব্যায়াম শুরুর আগে নিজের শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সুস্থ ওজন কীভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে?

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ৭ টি প্রাকৃতিক উপায়’এর মধ্যে ওজন একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়। শরীরের ওজন যদি অতিরিক্ত হয় তাহলে তা রক্তচাপের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে পেটের চারপাশে অতিরিক্ত মেদ জমে গেলে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকগুণ বাড়ে। সুস্থ ওজন বজায় রাখা মানে শুধু সৌন্দর্য রক্ষা নয়, বরং এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং উচ্চ রক্তচাপ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার অন্যতম উপায়।

দেহের অতিরিক্ত ওজন আমাদের হৃদপিণ্ডকে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করে। এটি রক্তচাপ বাড়ায় এবং রক্তনালীতে চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওজন কমানোর মাধ্যমে রক্তচাপ প্রায় ৫-১০ পয়েন্ট পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি। 

সুস্থ ওজন বজায় রাখার জন্য দরকার সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম। শর্করা ও চর্বিযুক্ত খাবার কমিয়ে বেশি করে ফল, শাকসবজি, আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত আর এগুলো সম্পর্কে আমরা উপরে কিন্তু জেনে এসেছি। এছাড়া প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটা, সাইকেল চালানো বা হালকা ব্যায়াম করলে ধীরে ধীরে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে। শরীরের ওজন অনুযায়ী উপযুক্ত পানি পান করাও জরুরি। ওজন কমাতে গিয়ে অনেকেই একদম না খেয়ে থাকেন, যা দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ক্ষতি করে। বরং স্বাস্থ্যকর খাবার সময়মতো খাওয়া এবং ধৈর্য ধরে অভ্যাস গড়ে তোলাই দীর্ঘস্থায়ী সমাধান। একবার যদি ওজন স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসে, তাহলে তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বড় ভূমিকা রাখে।

ভেষজ উপাদান ও আয়ুর্বেদিক প্রতিকার

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ৭ টি প্রাকৃতিক উপায়’এর মধ্য হতে ভেষজ উপাদান ও আয়ুর্বেদিক প্রতিকার একটি কার্যকর উপায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভেষজ উপাদান ও আয়ুর্বেদিক প্রতিকার বহু প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রাকৃতিক এসব চিকিৎসা পদ্ধতি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যেহেতু উচ্চ রক্তচাপ অনেক সময় বছরের পর বছর ধরে থেকে যায়, তাই দীর্ঘমেয়াদে ভেষজ প্রতিকার অনেক বেশি কার্যকর এবং নিরাপদ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে যারা প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়ে সুস্থ থাকতে চান, তাদের জন্য আয়ুর্বেদ ও ভেষজ পথ্য অনেক উপকার বয়ে আনে।

রসুন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে একটি বিস্ময়কর উপাদান। এটি রক্তনালীকে প্রসারিত করে এবং রক্তপ্রবাহ সহজ করে তোলে। প্রতিদিন সকালে এক কোয়া কাঁচা রসুন খেলে ধীরে ধীরে রক্তচাপ স্বাভাবিক হতে শুরু করে। একইভাবে তুলসী পাতাও দারুণ কার্যকর। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৪-৫টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া অথবা এক কাপ গরম পানিতে পাতাগুলো ভিজিয়ে চা বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে শুধু রক্তচাপই নয়, মানসিক চাপও কমে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ হলো অশ্বগন্ধা। এটি শরীরকে চাপমুক্ত রাখতে সহায়তা করে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে। যাদের রাতে ঘুম হয় না বা মানসিক দুশ্চিন্তা বেশি, তাদের জন্য অশ্বগন্ধা গুঁড়া দুধ বা কুসুম গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। লবঙ্গ ও দারুচিনিও রক্তচাপ কমাতে ব্যবহার করা হয়। রান্নায় নিয়মিত এই দুটি মসলা ব্যবহার করলে তা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি পরিচিত নাম হলো 'ত্রিফলা'। এটি তিনটি ভেষজ উপাদান হরিতকী, বহেরা ও আমলকী দিয়ে তৈরি হয়। ত্রিফলা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এবং হজম ক্ষমতা বাড়ায়, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। রাতে ঘুমানোর আগে এক চামচ ত্রিফলা গুঁড়া গরম পানির সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া 'অরজুন বাক' নামক ভেষজ গাছের ছালের গুঁড়াও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। এটি পানি ফুটিয়ে চায়ের মতো পান করা যায়। এছাড়া অনেক আয়ুর্বেদিক চর্চায় মধু ও লেবুর রস একত্রে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে তা হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে এবং রক্তচাপ হ্রাসে সহায়তা করে। তবে এসব ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহারের আগে নিজের শারীরিক অবস্থা বুঝে নেওয়া দরকার। কারও যদি আগে থেকেই অন্য রোগ থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ঘুমের গুরুত্ব

ঘুম শুধু বিশ্রামের জন্য নয়, এটি শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ঘুম না হলে আমাদের হৃদযন্ত্র অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়ে এবং রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে ৫ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে রাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ও নিরবিচারে ঘুম খুবই প্রয়োজন। অনিদ্রা বা কম ঘুম রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে, কারণ ঘুমের সময় শরীরের রক্তনালী ও হরমোনের ভারসাম্য স্বাভাবিক থাকে। ঘুম কম হলে শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা সরাসরি রক্তচাপ বাড়ায়। তাই গভীর ঘুম না হলে শরীর পুরোপুরি বিশ্রাম নিতে পারে না এবং পরের দিন মন মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। এই মানসিক উত্তেজনা ও ক্লান্তি রক্তচাপ বাড়ানোর বড় কারণ।

ভালো ঘুম নিশ্চিত করতে রাতে ঘুমানোর আগে মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপ থেকে দূরে থাকতে হবে। এগুলো থেকে নির্গত নীল আলো ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ঘুমের আগে এক গ্লাস হালকা গরম দুধ খাওয়া বা হালকা সঙ্গীত শোনা ঘুমে সাহায্য করতে পারে। রুমের আলো নরম রাখা, ঠাণ্ডা পরিবেশে ঘুমানো ও এক নির্দিষ্ট সময়ে শোয়ার অভ্যাস তৈরি করলেও ঘুমের মান বাড়ে। ঘুমের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো এবং একই সময়ে জেগে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুললে শরীরের জৈবঘড়ি সঠিকভাবে কাজ করে। এতে মানসিক চাপ কমে, শরীর বিশ্রাম পায় এবং রক্তচাপ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে আসে। যারা ঘুমের সমস্যা বা অনিদ্রায় ভোগেন, তারা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘুম উন্নয়নের পরিকল্পনা নিতে পারেন।

ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করতে করণীয়

ধূমপান ও মদ্যপান শরীরের জন্য ধ্বংসাত্মক। এই অভ্যাসগুলো শুধু হৃদরোগ নয়, উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। যারা দীর্ঘদিন ধরে এসব অভ্যাসে আসক্ত, তারা ধীরে ধীরে শরীরের ভেতরে ময়লা তৈরি করেন, যা পরবর্তীতে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনে। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে এই দুই অভ্যাস থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অভ্যাসগুলো একদিনে ছাড়া সম্ভব না হলেও ধাপে ধাপে চেষ্টা করলে তা সম্ভব। এই পরিবর্তন আনতে চাইলে কিছু কার্যকর করণীয় রয়েছে। যেমন:

  • আপনি যদি ধূমপানের বদলে মুখে চুইং গাম রাখেন, তাহলে ধোঁয়া নেওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। 
  • মদের বদলে ডাবের পানি বা তাজা ফলের রস পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। 
  • নিজের হাতে ব্যস্ততা তৈরি করুন, যেমন ছবি আঁকা, রান্না শেখা বা বই পড়া। 
  • পরিবারের কাউকে বলুন যেন প্রতিদিন আপনাকে মনে করিয়ে দেয় এই ক্ষতিকর অভ্যাসটি বন্ধ করার কথা। 
  • একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন, যেমন "আগামী এক মাসের মধ্যে আমি ধূমপান ছাড়ব"- এতে নিজেকে মনোযোগী রাখতে পারবেন। 
  • যে জায়গাগুলোতে ধূমপান বা মদ্যপান করা হয় যেমন পার্কের কোণ, ছাদ, বন্ধুদের আড্ডাস্থল, এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। 
  • মোবাইলে একটি অভ্যাস ত্যাগ অ্যাপ ব্যবহার করুন, যেখানে আপনি আপনার অগ্রগতি ট্র্যাক করতে পারবেন। 
  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন- এতে শরীর সতেজ থাকে এবং নেশার চাহিদা কমে যায়। 
  • প্রতিদিন সকালে ৫ মিনিট মেডিটেশন বা ধ্যানের অভ্যাস গড়ে তুলুন- এটি মানসিক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। 
  • এক সপ্তাহ এই অভ্যাস থেকে দূরে থাকতে পারলে নিজেকে পুরস্কার দিন- এতে আত্মবিশ্বাস ও প্রেরণা দুটোই বাড়বে।

এই দশটি ছোট-ছোট পরিবর্তন ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগে সহায়তা করতে পারে। নিয়মিত চর্চা ও মানসিক শক্তিই এখানে সবচেয়ে বড় অস্ত্র। মনে রাখবেন, আপনি একা নন- হাজারো মানুষ একই পথ পেরিয়ে এসেছে, আপনিও পারবেন।

প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ আসলে কতটা কার্যকর

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেকেই প্রথমেই ওষুধের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তবে জানলে অবাক হবেন, আমাদের প্রতিদিনের খাবারের মধ্যেই এমন কিছু উপাদান আছে, যা নিয়মিত খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। ধরুন, আপনি যদি প্রতিদিন খাবারের তালিকায় শাকসবজি, ফল, বাদাম, দুধ বা দই রাখেন, তাহলে অনেকটাই উপকার পাবেন। কারণ এসব খাবারে থাকে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, যা আমাদের শরীরের রক্তচাপ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো- এই পদ্ধতিতে শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। এতে শরীরও সুস্থ থাকে এবং বাড়তি টাকা খরচ হয় না। তাই অনেক চিকিৎসক প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের কথাই আগে বলেন।

প্রাকৃতিক খাবারের আরেকটি বড় উপকার হলো, এগুলো শরীরের ভেতর থেকে কাজ করে। বাজারের তৈরি খাবার বা প্রক্রিয়াজাত খাবার আমাদের শরীরে সোডিয়াম বা লবণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়। কিন্তু ফলমূল, শাকসবজি এসবের ঠিক উল্টো কাজ করে। এগুলো শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ বের করতে সাহায্য করে। ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে না। যেমন, কলা বা পালং শাক খেলে রক্তনালীগুলো আরাম পায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে। তাই প্রতিদিন খাবারের তালিকায় এসব রাখা খুবই জরুরি।

অনেকেই ভাবেন, শুধু খাওয়াদাওয়ায় একটু পরিবর্তন করে হয়তো রক্তচাপের মতো জটিল সমস্যা কমানো সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবে অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খায় এবং প্রাকৃতিক উপায়ে জীবনযাপন করে, তাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেকটাই কম। বিশেষ করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে খাবারের দিকে যত্ন নেওয়া আরও বেশি প্রয়োজন। নিয়মিত লবণ কম খাওয়া, চিনি বর্জন করা, প্রচুর পানি পান করা-এই সবই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই নিয়মগুলো যদি একসাথে মেনে চলা যায়, তাহলে ওষুধ ছাড়াও স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব।

সবশেষে বলতে হয়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ৭ টি প্রাকৃতিক উপায়ের মধ্যে সঠিক খাবার নির্বাচন সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর একটি উপায়। এটি শুধু রক্তচাপই নয়, বরং পুরো শরীরের সুস্থতার জন্য দরকারি। তাই খাবারকে শুধু পেট ভরানোর মাধ্যম না ভেবে একে ওষুধ হিসেবে দেখা উচিত। প্রতিদিন সঠিক খাবার খেলে আপনি ধীরে ধীরে নিজেই টের পাবেন শরীরের ভেতরের পরিবর্তন। এতে শুধু রক্তচাপ কমবে না, শরীর হবে হালকা, মন থাকবে ভালো এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত কিছু টিপস

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা উপরে বিস্তারিতভাবে জেনে নিলাম, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ৭ টি প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে। তবে আমাদের আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। আমরা এখন আলোচনা করবো এবং জানবো, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত কিছু টিপস সম্পর্কে।

উচ্চ-রক্তচাপ-নিয়ন্ত্রণে-অতিরিক্ত-কিছু-টিপস

উচ্চ রক্তচাপ শুধু ওষুধ খেয়েই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। অনেক সময় ছোট ছোট দৈনন্দিন অভ্যাস পরিবর্তন করেই এই রোগ থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকা সম্ভব। অনেক মানুষ আছেন যারা স্বাস্থ্য সচেতন হলেও কিছু সাধারণ ভুল করে বসেন, যার ফলে রক্তচাপ ঠিক রাখতে পারছেন না। এই জন্যই কিছু অতিরিক্ত পরামর্শ জানা ও মেনে চলা খুবই দরকার। নিচে এমন পাঁচটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন:

দেহের প্রতিটি কোষ ও অঙ্গকে সচল রাখতে পানি খুবই প্রয়োজন। অনেকে দিনের বেলা একেবারেই পানি পান করেন না, কিংবা তৃষ্ণা না লাগলে পানি পান করার প্রয়োজন মনে করেন না। কিন্তু এটি ভুল অভ্যাস। দেহে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে রক্ত ঘন হয়ে যায়, যার ফলে রক্তচাপ বাড়ে। দিনে অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। গরমের দিনে অথবা শারীরিক পরিশ্রম বেশি করলে এর পরিমাণ আরও বাড়ানো দরকার। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করা খুব উপকারী।

মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন:

অতিরিক্ত মানসিক চাপ উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে- এটি এখন প্রমাণিত একটি তথ্য। পরিবার, অফিস, আর্থিক চিন্তা কিংবা ব্যক্তিগত দুশ্চিন্তা থেকে অনেকেই মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এই চাপ কমাতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন নিজেকে বোঝা এবং নিজের জন্য কিছু সময় বের করা। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট সময় নিজের জন্য রাখুন, যেটাতে আপনি গান শুনতে পারেন, বই পড়তে পারেন কিংবা কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ধ্যান করতে পারেন। মানসিক প্রশান্তিই শরীরকে সুস্থ রাখার মূল চাবিকাঠি।

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম নিশ্চিত করুন:

অনিয়মিত ঘুম রক্তচাপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। যারা রাতে দেরি করে ঘুমান বা ঘুমের সময়কাল খুব কম, তাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি থাকে। ঘুম শরীরের সমস্ত কার্যকলাপকে স্বাভাবিক রাখে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি। রাত ১০টার আগেই ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করুন এবং সকালে নিয়ম করে একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খান:

চিনি রক্তে ইনসুলিন হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়, যা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি তৈরি করে। মিষ্টিজাতীয় খাবার যেমন মিষ্টি, কেক, মিষ্টান্ন, সফট ড্রিংকস ইত্যাদি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। অনেকে ভাবেন শুধু লবণই সমস্যা তৈরি করে, কিন্তু চিনি আরও ভয়ানক হতে পারে। স্বাভাবিক চিনি বাদ দিয়ে প্রাকৃতিক মিষ্টির উৎস যেমন ফল-মূল গ্রহণ করাই ভালো। এতে শরীরও শক্তি পায়, আবার রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ক্যাফেইন ও কোল্ড ড্রিংকস থেকে দূরে থাকুন:

চা, কফি কিংবা সফট ড্রিংকসের মধ্যে থাকা ক্যাফেইন রক্তচাপ বাড়ায়। যারা দিনে অনেকবার চা বা কফি পান করেন, তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। বিশেষ করে খালি পেটে কফি পান করলে হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। কোল্ড ড্রিংকস বা এনার্জি ড্রিংকসের ক্ষেত্রে একই অবস্থা ঘটে। তাই এগুলো কমিয়ে ধীরে ধীরে ত্যাগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তার বদলে লেবুর শরবত, ডাবের পানি কিংবা হারবাল চা পানে অভ্যস্ত হওয়া উচিত।

উচ্চ রক্তচাপ কী এবং কেন হয়?

রক্তচাপ হল সেই বল যা রক্ত চলাচলের সময় ধমনী দেওয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে তাকে বলে উচ্চ রক্তচাপ। অনেকে এটি ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে চেনেন, কারণ দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা থাকলেও অনেক সময় কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে এই রোগ যদি সময়মতো নিয়ন্ত্রণে না আনা হয়, তাহলে তা হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি বিকল পর্যন্ত গড়াতে পারে। তাই বুঝতে হবে, এটি মূলত কী এবং কেন হয়? চলুন তবে জেনে নেই:

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:

আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম প্রধান কারণ। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড, চিপস, ভাজাভুজি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার নিয়মিত খেলে শরীরের সোডিয়াম ও ফ্যাটের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে রক্তের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং রক্তচাপ বাড়তে থাকে। অনেকে ভাবেন পেট ভরে খাচ্ছেন মানেই সুস্থ থাকবেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পুষ্টিকর খাবার না খেলে শরীর ভেতর থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রক্তচাপ বাড়ার পথ খুলে যায়।

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ:

চিন্তা, মানসিক চাপ, অফিস বা পারিবারিক সমস্যার জন্য আমাদের মন অস্থির হয়ে পড়ে। এই অস্থিরতা স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে এবং দেহে কর্টিসল নামক হরমোন নিঃসরণ বাড়ে। এর ফলে হৃদস্পন্দন দ্রুত হয় ও রক্তচাপ বেড়ে যায়। প্রতিদিন যদি আমরা চাপ নিয়ে থাকি এবং মনকে শান্ত না রাখতে পারি, তাহলে শরীরও চাপ নিতে নিতে একসময় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে যেসব মানুষ সারাক্ষণ উদ্বিগ্ন থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে।

শরীরচর্চার অভাব:

আজকাল প্রযুক্তির কারণে অনেকেই বসে কাজ করেন, হাঁটা-চলা কম করেন, এমনকি একটানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাটান। এই নিষ্ক্রিয়তা রক্তচাপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। শরীরচর্চা না করলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি জমে, রক্তনালীগুলো সরু হয় এবং রক্তচাপ বাড়ে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটলে বা হালকা ব্যায়াম করলে দেহে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।

ওজন বৃদ্ধি ও স্থুলতা:

অনেকেই জানেন না যে অতিরিক্ত ওজন রক্তচাপ বাড়ানোর একটি প্রধান কারণ। দেহের ওজন বাড়লে হৃদপিণ্ডকে অতিরিক্ত রক্ত পাম্প করতে হয়, যার ফলে ধমনীতে চাপ বাড়ে। এই চাপে ধীরে ধীরে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। বিশেষ করে পেটের চর্বি বেশি থাকলে রক্তচাপ দ্রুত বেড়ে যায়। তাই স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, পরিমিত খাওয়া ও শারীরিক পরিশ্রম করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

বংশগত বা জেনেটিক কারণ:

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হচ্ছে পারিবারিক ইতিহাস। যদি পরিবারের বাবা, মা কিংবা দাদা-দাদির মধ্যে কারো উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তাহলে সন্তানের মধ্যেও এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটি সম্পূর্ণ জেনেটিক, তবে প্রতিরোধযোগ্য। যারা জানেন তারা ঝুঁকিতে রয়েছেন, তারা শুরু থেকেই সতর্ক থাকলে এই সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। নিয়মিত চেকআপ ও জীবনধারায় পরিবর্তন এই ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে।

শেষ মন্তব্য

আমরা আজকের আর্টিকেলের একদম শেষ অংশে চলে এসেছি, তাই আমরা শেষ মন্তব্য হিসেবে বলতে পারি যে- স্বাস্থ্যই আমাদের জীবনের মূল ভিত্তি। আর এই স্বাস্থ্য ধরে রাখতে হলে উচ্চ রক্তচাপের মতো নীরব ঘাতক রোগকে দূরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। আজকের এই ব্যস্ত জীবনে আমরা এতটাই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছি যে নিজের শরীরের দিকে নজর দেওয়ার সময়ই হয়ে ওঠে না। অথচ সময়মতো একটু সচেতন হলে এবং কিছু সহজ স্বাভাবিক অভ্যাস পরিবর্তন করলেই আমরা বড় বড় রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে পারি। উচ্চ রক্তচাপ এমন একটি সমস্যা, যা দীর্ঘ সময় শরীরে থাকলে ধীরে ধীরে হৃৎপিণ্ড, কিডনি এবং মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। তাই এর প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আমাদের সবার দায়িত্ব।

সব শেষে বলা যায়, শরীরের যত্ন নেওয়া মানেই শুধু রোগ হলে চিকিৎসা নয়, বরং আগে থেকে রোগ প্রতিরোধে সচেতন হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে প্রাকৃতিক উপায়গুলো শুধু শরীরকে সুস্থ রাখে না, মানসিক প্রশান্তিও এনে দেয়। সকালে খালি পেটে ফল খাওয়া, সঠিক সময়ে ঘুম, পানি পানের অভ্যাস, আর মাঝে মাঝে নিজেকে সময় দেওয়াও এক ধরনের চিকিৎসা। এই ছোট ছোট অভ্যাসই একদিন বড় পরিবর্তন এনে দিতে পারে আমাদের জীবনে। তাই আসুন, আজ থেকেই স্বাস্থ্য সচেতনতাকে জীবনের অংশ করি এবং সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের দিকে এগিয়ে যাই।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

BLOGGER MRH-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url