বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত রেফ্রিজারেটরের উপযুক্ত তাপমাত্রা কত
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আপনি কি জানেন, ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা কত রাখা উচিত? আপনি কি
কখনো ভেবে দেখেছেন, ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা ঠিকমতো সেট করা না থাকলে আপনার
ফ্রিজে থাকা খাবারগুলো কেন দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়? অনেকেই ফ্রিজ চালু করে রেখে
দেন, কিন্তু তাপমাত্রার সেটিংস নিয়ে মাথা ঘামান না। অথচ একটু সচেতন হলে খাবার
থাকবে দীর্ঘদিন টাটকা, আর বিদ্যুৎ বিলও হবে অনেক কম।
তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো- ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা কত রাখা উচিত, কেন
এটা গুরুত্বপূর্ণ, এবং কিভাবে আপনি সহজে এটি সেট করতে পারেন। চলুন তবে বিষয়টি
সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক এবং জেনে আসা যাক।
পোস্ট সূচিপত্র: ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা কত রাখা উচিত?
ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা কত রাখা উচিত?
চলুন প্রিয় পাঠকবৃন্দ জেনে নেওয়া যাক ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা কত রাখা উচিত? এ
সম্পর্কে। ওয়ালটন ফ্রিজ আমাদের ঘরের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র।
এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাবার সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তবে ফ্রিজ
ব্যবহারে তাপমাত্রা ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি। যদি ফ্রিজের তাপমাত্রা খুব
বেশি বা খুব কম থাকে, তাহলে খাবারের গুণগত মান নষ্ট হতে পারে এবং ফ্রিজের
কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। সাধারণভাবে ফ্রিজের ভেতরের তাপমাত্রা ১ থেকে ৫ ডিগ্রি
সেলসিয়াসের মধ্যে রাখাই সবচেয়ে ভালো। এই মাত্রায় ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর
বংশবিস্তার খুব কম হয়, ফলে খাবার দীর্ঘ সময় ভালো থাকে।
ফ্রিজের তাপমাত্রা নির্ধারণে কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হয়। যেমন, আপনি কী ধরণের
খাবার সংরক্ষণ করছেন, বাইরে কতটা গরম বা ঠান্ডা পড়ছে, ফ্রিজ কতবার খোলা-বন্ধ করা
হচ্ছে, ইত্যাদি। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেশি থাকায় ফ্রিজের উপর চাপ বাড়ে এবং
ঠান্ডা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ফ্রিজের তাপমাত্রা ১ থেকে ২
ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলে ভালো ফল পাওয়া যায়। অপরদিকে, শীতকালে বাইরের
তাপমাত্রা অনেক কম থাকে, ফলে ফ্রিজকে অতিরিক্ত ঠান্ডা করতে হয় না। এই সময়ে
ফ্রিজের তাপমাত্রা ৪ থেকে ৫ ডিগ্রিতে রাখলেই যথেষ্ট হয়।
ফ্রিজে রাখা দুধ, মাছ, মাংস, ফলমূল ইত্যাদি দ্রুত নষ্ট হতে পারে যদি তাপমাত্রা
ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না হয়। তাই এদের জন্য নিচের তাকগুলো তুলনামূলক ঠান্ডা রাখাই
ভালো। খাবারের ধরন অনুযায়ী তাকের ব্যবহার ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সবচেয়ে
কার্যকর উপায়। এছাড়া প্রতিনিয়ত ফ্রিজ পরিষ্কার রাখাও জরুরি, যাতে গন্ধ ও
ব্যাকটেরিয়া জমতে না পারে। ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা নিয়মিত ঠিক রেখে আমরা
শুধু খাবারকে ভালো রাখতে পারি না, বরং ফ্রিজের স্থায়ীত্বও বাড়িয়ে তুলতে পারি।
তাই সঠিক তাপমাত্রায় রাখার বিষয়টি সর্বদা গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত। একটি ভালো
মানের ওয়ালটন ফ্রিজ সঠিক তাপমাত্রায় চালালে দীর্ঘদিন ভালো সেবা দেয়।
শেষে বলা যায়, সঠিকভাবে ফ্রিজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করলে খাবার দীর্ঘ সময়
সতেজ থাকে, ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পায় এবং বিদ্যুৎ বিলও তুলনামূলকভাবে
কম আসে। তাই ঋতু পরিবর্তন, খাবারের ধরন এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের পরিমাণ বুঝে
ফ্রিজের তাপমাত্রা সামঞ্জস্য করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র খাবার
সংরক্ষণের জন্যই নয়, বরং একটি সাশ্রয়ী ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের জন্যও
অপরিহার্য।
ওয়ালটন ফ্রিজের ডিপ ফ্রিজের তাপমাত্রা কত হওয়া উচিত?
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা উপরে থেকে জেনে আসলাম, ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা কত রাখা
উচিত তা সম্পর্কে। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক, ওয়ালটন ফ্রিজের ডিপ ফ্রিজের
তাপমাত্রা কত হওয়া উচিত তা সম্পর্কে।
ডিপ ফ্রিজ বা ফ্রিজারের মূল কাজ হচ্ছে খাবারকে দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করা।
ওয়ালটনের ডিপ ফ্রিজগুলো এই কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করে থাকে। তবে এর জন্য
সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদর্শ ডিপ ফ্রিজের তাপমাত্রা
হওয়া উচিত -১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক জন্মাতে
পারে না, ফলে খাবার অনেক দিন ভালো থাকে। যেমন: মাংস, মাছ, আইসক্রিম, রান্না করা
খাবার বা প্যাকেটজাত খাবার ডিপ ফ্রিজে -১৮ ডিগ্রিতে রাখা হলে ৬ মাস বা তার বেশি
সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। তবে যদি তাপমাত্রা বেশি হয় যেমন -১০ ডিগ্রির
মতো, তাহলে সেই খাবার খুব দ্রুতই খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই সব সময় তাপমাত্রা
মনিটর করা উচিত।
ওয়ালটনের কিছু ডিপ ফ্রিজে ডিজিটাল ডিসপ্লে থাকে, যার মাধ্যমে তাপমাত্রা সহজে
দেখা ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য ফ্রিজ খোলার পর দ্রুত বন্ধ
করা উচিত এবং ভেতরে গরম খাবার না রাখা উচিত। গরম খাবার রাখলে ফ্রিজের অভ্যন্তরের
তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং ফ্রিজ অতিরিক্ত কাজ করতে গিয়ে দ্রুত নষ্ট হতে পারে।
অন্যদিকে, বিদ্যুৎ চলে গেলে বা লো-ভোল্টেজ থাকলে ফ্রিজের কার্যকারিতা কমে যেতে
পারে। সেক্ষেত্রে স্ট্যাবিলাইজার বা ভালো মানের পাওয়ার সাপ্লাই ব্যবহার করা
ভালো। যদি ডিপ ফ্রিজ দীর্ঘ সময় ব্যবহার না করা হয়, তাহলে ভিতরে শুকনো কাপড়
রেখে বন্ধ করে রাখতে হবে যাতে দুর্গন্ধ না হয়।
ওয়ালটন ফ্রিজের নরমাল অংশের তাপমাত্রা কত রাখতে হয়?
আমরা উপর থেকে জেনে আসলাম, ওয়ালটন ফ্রিজের ডিপ ফ্রিজের তাপমাত্রা কত হওয়া উচিত?
চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক, ওয়ালটন ফ্রিজের নরমাল অংশের তাপমাত্রা কত রাখতে হয়
তা সম্পর্কে।
ওয়ালটন ফ্রিজের সাধারণ বা রেফ্রিজারেটর অংশে আমরা প্রতিদিনের ব্যবহারের অনেক
খাবার রাখি। যেমন: দুধ, ফল, শাকসবজি, রান্না করা খাবার ইত্যাদি। এই অংশে সঠিক
তাপমাত্রা বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানে রাখা খাবারগুলো প্রতিদিন
ব্যবহৃত হয় এবং দ্রুত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আদর্শভাবে এই অংশের তাপমাত্রা ৩
থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা উচিত। যদি ফ্রিজের তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি বা
তার বেশি হয়, তাহলে খাবারে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে এবং খাবার নষ্ট হয়ে যেতে
পারে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রিতে রাখলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া
যায়। তবে শীতকালে ৫ ডিগ্রি পর্যন্ত রাখলেও সমস্যা হয় না। ওয়ালটনের ফ্রিজগুলোতে
সাধারণত একটি ঘূর্ণনযোগ্য কন্ট্রোল থাকে যার মাধ্যমে সহজেই তাপমাত্রা বাড়ানো বা
কমানো যায়।
ফ্রিজের উপরের অংশ অপেক্ষাকৃত বেশি ঠান্ডা থাকে, তাই সেখানে দুধ, দই ইত্যাদি রাখা
ভালো। নিচের দিকের তাক সবজির জন্য উপযোগী। তবে খাবার রাখার সময় গরম অবস্থায়
রাখা একদম উচিত নয়, কারণ এতে ফ্রিজের অভ্যন্তরে জলীয় বাষ্প জমে ঠান্ডা কমে
যায়। খাবারের গন্ধ যাতে না ছড়ায় সে জন্য আলাদা পাত্রে রেখে ঢেকে রাখা উচিত।
এবং ফ্রিজে অতিরিক্ত ভিড় না করে ফাঁকা জায়গা রাখা ভালো, যাতে বাতাস চলাচল করতে
পারে। এইভাবে রেফ্রিজারেটর অংশে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখলে খাবার দীর্ঘ সময়
ভালো থাকবে এবং বিদ্যুৎ খরচও কম হবে।
খাবার সংরক্ষণের জন্য ওয়ালটন ফ্রিজের সঠিক তাপমাত্রা কত হওয়া উচিত?
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা মূলত উপরে থেকে জেনে আসলাম, ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা কত
রাখা উচিত তা সম্পর্কে এবং আমরা ডিপ ও নরমালের তাপমাত্রা সম্পর্কে জেনেছি। তবে
আমরা কি জানি খাবার সংরক্ষণের জন্য সঠিক তাপমাত্রা কত? চলুন তবে জেনে আসা যাক।
খাবার সংরক্ষণে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ওয়ালটন ফ্রিজে
বিভিন্ন খাবারের ধরন অনুযায়ী আলাদা তাপমাত্রা প্রয়োজন হতে পারে। যেমন কাঁচা
মাছ-মাংস -১ থেকে ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ভালো থাকে, দুধ-দই ৩-৪ ডিগ্রিতে এবং ফলমূল
ও সবজি ৪-৫ ডিগ্রিতে ভালো থাকে। তাই ফ্রিজে একসাথে সব খাবার রাখার সময় এসব বিষয়
খেয়াল রাখা জরুরি। প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য ফ্রিজের তাপমাত্রা সাধারণত ৪
ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখাই নিরাপদ। এই তাপমাত্রায় অধিকাংশ খাবার এক সপ্তাহ পর্যন্ত
ভালো থাকে। তবে মাছ বা মাংস বেশি দিন রাখতে হলে অবশ্যই ডিপ ফ্রিজে রাখতে হবে।
রুটির মতো শুকনো খাবার তুলনামূলক একটু বেশি তাপমাত্রায় ভালো থাকে।
ফ্রিজে সংরক্ষণের আগে খাবার ঠান্ডা করে নিতে হবে। গরম খাবার সরাসরি রাখলে ফ্রিজের
তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায় এবং এতে অন্যান্য খাবার খারাপ হতে পারে। এছাড়া, আলাদা
আলাদা খাবার পাত্রে ভরে রাখতে হবে এবং প্রতিটি পাত্রে তারিখ লিখে রাখা ভালো, যাতে
কোন খাবার কতদিন ধরে রাখা হয়েছে তা জানা যায়। ওয়ালটন ফ্রিজে কিছু মডেলে আলাদা
আলাদা চেম্বার থাকে, যেখানে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় আলাদা খাবার রাখা যায়। এর
মাধ্যমে আপনি সহজেই প্রতিটি খাবারের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা বজায় রাখতে পারেন।
এইভাবে সঠিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে খাবার সংরক্ষণ করলে তা শুধু
স্বাস্থ্যকরই হয় না, বরং অপচয়ও কমে যায়।
গ্রীষ্মকালে ও শীতকালে ফ্রিজের তাপমাত্রা কেমন হওয়া উচিত?
চলুন প্রিয় পাঠকবৃন্দ এবার বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক, গ্রীষ্মকালে ও শীতকালে
ফ্রিজের তাপমাত্রা কেমন হওয়া উচিত সেটি সম্পর্কে।
গ্রীষ্মকালে ফ্রিজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
গ্রীষ্মকালে পরিবেশের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। এই সময় ঘরের
ভেতরের আবহাওয়াও অনেক উষ্ণ হয়ে পড়ে। ফলে ফ্রিজের ভেতরের তাপমাত্রা ধরে রাখা বেশ
চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। গরম আবহাওয়ার কারণে ফ্রিজের বাইরের তাপ ফ্রিজের ভেতরে
প্রবেশ করে এবং এতে করে সংরক্ষিত খাবার দ্রুত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই কারণে
গ্রীষ্মকালীন সময় ফ্রিজের তাপমাত্রা সাধারণত ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে
রাখতে বলা হয়। এই তাপমাত্রা খাবারকে সতেজ রাখে এবং ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস
জন্মানোর সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। তবে অনেক সময় মানুষ মনে করেন যত ঠান্ডা রাখা
যাবে, খাবার তত ভালো থাকবে- এ ধারণা ভুল। কারণ অতিরিক্ত ঠান্ডা রাখলে ফলমূল ও
কিছু সবজি বরফে জমে যায় এবং খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে। গ্রীষ্মকালে ফ্রিজ দরজা কম
খোলা উচিত এবং বেশি ভরে না রাখাই ভালো। অতিরিক্ত ভরা থাকলে বাতাস ঠিকভাবে চলাচল
করতে পারে না এবং তাপমাত্রা সমভাবে বজায় থাকে না। এক্ষেত্রে সঠিক তাপমাত্রা বাছাই
ও বজায় রাখাই ফ্রিজের দক্ষতা ও খাবারের মান বজায় রাখার মূল চাবিকাঠি।
শীতকালে ফ্রিজের তাপমাত্রা কীভাবে সামঞ্জস্য করবেন?
শীতকালে আবহাওয়া স্বাভাবিকভাবেই ঠান্ডা থাকে। ফলে এই সময় ফ্রিজের উপর তাপমাত্রা
নিয়ন্ত্রণের চাপ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। অনেকেই এই সময় ফ্রিজের তাপমাত্রা আগের
মতোই রেখে দেন, কিন্তু সেটি প্রয়োজনীয় নাও হতে পারে। সাধারণত শীতকালে ফ্রিজের
তাপমাত্রা ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখলেই যথেষ্ট হয়। কারণ বাইরে যখন ঠান্ডা
থাকে, তখন ফ্রিজের বাইরের উষ্ণতা ভেতরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। এতে ফ্রিজের
কম্প্রেসার অনেক সময় বেশি ঠান্ডা তৈরি করে ফেলে, যা খাবার জমে যাওয়ার কারণ হয়ে
দাঁড়ায়। বিশেষ করে দুধ, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি এই সময় অতিরিক্ত ঠান্ডায় জমে
গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাই শীতকালে ফ্রিজ ব্যবহার করার সময় সেটিংস একটু পরিবর্তন
করে রাখতে হয়। অনেক ওয়ালটন ফ্রিজেই তাপমাত্রা ম্যানুয়ালি কমানো বা বাড়ানোর
সুবিধা থাকে। এই বৈশিষ্ট্য কাজে লাগিয়ে শীতকালে প্রয়োজন অনুযায়ী তাপমাত্রা
সামঞ্জস্য করতে হবে। তাপমাত্রা ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে খাবারের মান বজায় থাকে
এবং বিদ্যুৎ খরচও অনেকটা কম হয়। তাই শুধুমাত্র গ্রীষ্ম নয়, শীতকালেও সঠিক
তাপমাত্রা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মৌসুমভিত্তিক তাপমাত্রার পার্থক্য কেন দরকার?
প্রতিটি মৌসুমে পরিবেশের গঠন ও তাপমাত্রা আলাদা হয়। গ্রীষ্মকালে যখন দিন দীর্ঘ
হয়, তাপমাত্রা উষ্ণ হয়, তখন ফ্রিজে সংরক্ষিত খাবার দ্রুত পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অন্যদিকে, শীতকালে কম্পার্টমেন্ট ঠান্ডা থাকায় খাবার সহজে নষ্ট হয় না। এই
মৌসুমভেদে তাপমাত্রার পার্থক্য রাখার প্রয়োজনীয়তা এখানেই। গরমে বেশি ঠান্ডা
প্রয়োজন, আর ঠান্ডায় সামান্য বেশি তাপমাত্রা রাখলেও চলে। অনেকেই সারা বছর একইভাবে
ফ্রিজ চালান- এটি ভুল অভ্যাস। যেমন ধরুন, গ্রীষ্মকালে যেভাবে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রির
মতো রাখছেন, সেই একই মাত্রা শীতকালেও রাখলে খাবার জমে যেতে পারে। সেজন্য প্রতিটি
মৌসুমে কিছু সময় পরপর ফ্রিজের তাপমাত্রা চেক করা উচিত এবং প্রয়োজন হলে সেটিংস
পরিবর্তন করতে হবে। এটি শুধু খাবারের জন্য ভালো নয়, ফ্রিজের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির
জন্যও সহায়ক। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিলে পার্থক্য দেখা যায়, কারণ কম্প্রেসার বেশি
চাপ না খেয়ে কাজ করতে পারে। ফলে আপনার মাসিক খরচও কমে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে বেশ
লাভজনক।
ফ্রিজের সঠিক তাপমাত্রা কিভাবে চেক করবেন?
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা উপরে বিস্তারিতভাবে জেনেছি, ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা কত
রাখা উচিত? তবে আমরা কি জানি ফ্রিজের সঠিক তাপমাত্রা কিভাবে চেক করা যায়? চলুন
তবে এই বিষয়টি সম্পর্কেও জেনে নেওয়া যাক।
ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা সঠিকভাবে চেক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর উপর
নির্ভর করে খাবারের সতেজতা এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাপমাত্রা বেশি হলে খাবার নষ্ট
হয়ে যেতে পারে, আর কম হলে তা জমে যেতে পারে। তাই ঘরের তাপমাত্রা ও ব্যবহারের ধরন
অনুযায়ী ফ্রিজের অভ্যন্তরের তাপমাত্রা নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা উচিত।
তাপমাত্রা চেক করার সহজ কিছু পদ্ধতি নিচে দেওয়া হলো:
ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করুন: ফ্রিজের মাঝামাঝি স্থানে একটি ডিজিটাল
থার্মোমিটার রাখুন এবং ৫-৬ ঘণ্টা পর তাপমাত্রা লক্ষ্য করুন। আদর্শ তাপমাত্রা ৩
থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হওয়া উচিত।
-
ফ্রিজের বিল্ট-ইন ডিসপ্লে দেখুন: অনেক ওয়ালটন ফ্রিজেই ডিজিটাল
তাপমাত্রা ডিসপ্লে থাকে। সেখান থেকে সরাসরি বর্তমান তাপমাত্রা দেখা যায়।
-
জলের পাত্র ব্যবহার করুন: একটি গ্লাসে পানি রেখে ফ্রিজের মাঝখানে
রাখুন এবং ৮ ঘণ্টা পর পরীক্ষা করুন। যদি পানি হালকা জমে যায় তবে ফ্রিজের
তাপমাত্রা প্রায় সঠিক।
-
দুধ বা খাবারের অবস্থান দেখে অনুমান করুন: দুধের মতো সংবেদনশীল খাবার
ফ্রিজে রাখার পর যদি দ্রুত নষ্ট না হয়, তবে বুঝবেন ফ্রিজের তাপমাত্রা ঠিক
আছে।
-
গন্ধ ও রঙ দেখে বুঝুন: খাবারে কোনো অস্বাভাবিক গন্ধ বা রঙ পরিবর্তন
হলে তা ইঙ্গিত দেয় তাপমাত্রা হয়তো সঠিক নয়।
ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা কমানো বা বাড়ানো কিভাবে যায়?
ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব
পদ্ধতিতে করা যায়। সাধারণত এই ফ্রিজগুলোতে ম্যানুয়াল নোব বা ডিজিটাল কন্ট্রোলার
দেওয়া থাকে, যার মাধ্যমে আপনি সহজেই তাপমাত্রা বাড়াতে বা কমাতে পারবেন। তবে
তাপমাত্রা পরিবর্তনের আগে আপনার পরিবেশ, ব্যবহার এবং খাবারের ধরন বিবেচনা করা
উচিত।
তাপমাত্রা পরিবর্তনের পদ্ধতিগুলি নিচে দেওয়া হলো:
-
ডায়াল ঘুরিয়ে সেট করুন (ম্যানুয়াল মডেল): পুরনো মডেলের ওয়ালটন
ফ্রিজে সাধারণত ১ থেকে ৭ পর্যন্ত সংখ্যা দেওয়া থাকে। ১ হচ্ছে গরম এবং ৭
হচ্ছে সবচেয়ে ঠান্ডা। গরমকালে ৪-৫, আর শীতকালে ৩-৪ এ রাখা উত্তম।
-
ডিজিটাল কন্ট্রোল প্যানেল ব্যবহার করুন: নতুন মডেলের ফ্রিজে টাচ
কন্ট্রোল বা বোতামযুক্ত ডিসপ্লে থাকে। সেখান থেকে সরাসরি সেলসিয়াস অনুযায়ী
তাপমাত্রা সেট করা যায়।
-
ডিপ ফ্রিজ আলাদা ভাবে নিয়ন্ত্রণ করুন: অনেক ফ্রিজে ডিপ ফ্রিজের জন্য
আলাদা কন্ট্রোলার থাকে। মাছ-মাংস সংরক্ষণের জন্য -১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস যথাযথ।
-
ফ্রিজ খালি বা ভর্তি অবস্থায় আলাদা সেটিংস করুন: যদি ফ্রিজে বেশি
খাবার থাকে তবে একটু ঠান্ডা রাখতে হবে। আবার খালি থাকলে খুব ঠান্ডা করার
দরকার নেই।
-
পাওয়ার সেভ মোড ব্যবহার করুন: কিছু মডেলে পাওয়ার সেভ মোড থাকে যা
তাপমাত্রাকে ব্যালেন্সড রাখে এবং বিদ্যুৎ কম খরচ হয়।
ওয়ালটন ফ্রিজের বিভিন্ন মডেলের আদর্শ তাপমাত্রা কি আলাদা হয়?
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন, ওয়ালটন ফ্রিজের বিভিন্ন মডেলের আদর্শ তাপমাত্রা কি
আলাদা হয়? হ্যাঁ, ওয়ালটন ফ্রিজের বিভিন্ন মডেল অনুযায়ী আদর্শ তাপমাত্রা কিছুটা
পার্থক্য থাকতে পারে। যেমন- এক দরজার, দুই দরজার, ডাবল কুলিং, ইনভার্টার ফ্রিজ বা
স্মার্ট ফ্রিজ- প্রত্যেকটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তাপমাত্রা সামঞ্জস্য করতে
হয়। সাধারণ মডেলে যেখানে একটাই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকে, সেখানে স্মার্ট বা
ইনভার্টার মডেলে আলাদা আলাদা চেম্বারের জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রা সেট করা যায়।
এক দরজার ফ্রিজে সাধারণত ৩-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ডিপ ফ্রিজ অংশে -১৫ থেকে -১৮
ডিগ্রি রাখা শ্রেয়। তবে ইনভার্টার প্রযুক্তির ফ্রিজে তাপমাত্রা স্বয়ংক্রিয়ভাবে
নিয়ন্ত্রণ করা যায়, ফলে এতে অনেক সময় অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম হওয়ার ঝুঁকি কম
থাকে।
স্মার্ট ফ্রিজের ক্ষেত্রে আপনি নির্দিষ্ট খাবারের জন্য আলাদা তাপমাত্রা সেট করতে
পারেন যেমন- ফলমূলের জন্য ৫ ডিগ্রি, দুধ ও তরল জাতীয় খাদ্যের জন্য ৩ ডিগ্রি এবং
মাছ-মাংসের জন্য -১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই আপনি কোন মডেল ব্যবহার করছেন তার উপর
ভিত্তি করে তাপমাত্রা ঠিক করতে হবে। ফ্রিজ কেনার সময় এর সঙ্গে থাকা নির্দেশিকা
পড়ে নেয়া এবং মডেল অনুযায়ী কাস্টমার কেয়ার থেকে পরামর্শ নেয়া খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। এতে আপনার ফ্রিজ দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং খাবারও নিরাপদ থাকবে।
ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা সেট করার সঠিক নিয়ম কি?
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা উপরে জেনে এসেছি, ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা কত রাখা উচিত
তা সম্পর্কে। চলুন তবে এবার জেনে আসা যাক, ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা সেট করার
সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।
ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা সঠিকভাবে সেট করা হলে শুধুমাত্র খাবার দীর্ঘদিন ভালো
থাকে না, বরং বিদ্যুৎ খরচও অনেক কম হয়। তবে অনেকেই সঠিক নিয়ম না জানার কারণে
ভুলভাবে সেট করেন, যা খাবার নষ্ট হওয়া বা অতিরিক্ত ঠান্ডা হওয়ার কারণ হয়ে
দাঁড়ায়।
তাপমাত্রা সেট করার সময় যেসব নিয়ম মানা উচিত তা নিচে তুলে ধরা হলো:
-
সিজন অনুযায়ী তাপমাত্রা ঠিক করুন: গরমকালে ফ্রিজের ভিতরের তাপমাত্রা
দ্রুত বেড়ে যায়, তাই এই সময়ে সেটিংস ৪ বা ৫ এ রাখুন। শীতকালে ২ বা ৩
যথেষ্ট।
-
ফ্রিজের ভেতরের অবস্থা বুঝে সেটিংস দিন: যদি অনেক খাবার থাকে, তবে
একটু বেশি ঠান্ডা দরকার পড়ে। তবে ফ্রিজ খালি থাকলে বেশি ঠান্ডা প্রয়োজন
নেই।
-
খাবারের ধরন অনুযায়ী তাপমাত্রা নির্ধারণ করুন: মাছ-মাংস সংরক্ষণের
জন্য -১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ফলমূলের জন্য ৫ ডিগ্রি উপযুক্ত।
-
রাতে তাপমাত্রা একটু কমানো যেতে পারে: কারণ রাতে ফ্রিজ কম খোলা হয়,
ফলে ঠান্ডা দ্রুত জমে। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।
-
তাপমাত্রা পরিবর্তনের পর পর্যবেক্ষণ করুন: তাপমাত্রা সেট করার পর
অন্তত ২৪ ঘণ্টা ফ্রিজের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করুন। যদি খাবার ঠিক থাকে
তাহলে সেটিংস সঠিক।
ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা বেশি বা কম রাখলে কি সমস্যা হতে পারে?
ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা যদি খুব বেশি বা খুব কম রাখা হয়, তাহলে খাবার
সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় খাবার দ্রুত
নষ্ট হয়ে যায় বা অতিরিক্ত জমে যাওয়ার কারণে স্বাদ ও গুণমান নষ্ট হয়ে যায়।
নিচে এই সমস্যাগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়া:
যদি ফ্রিজের তাপমাত্রা বেশি রাখা হয় (যেমন ৬-৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি), তাহলে
দুধ, ডিম, মাছ-মাংসসহ অন্যান্য সংবেদনশীল খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দুধে
ব্যাকটেরিয়া দ্রুত ছড়ায় এবং তা টক হয়ে যায়। ডিমের সাদা অংশ আলগা হয়ে যায়
এবং মাংসে দুর্গন্ধ দেখা দেয়। ফলে খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এছাড়া,
প্যাকেটজাত খাবারেও শেল্ফ লাইফ কমে যায় এবং এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
হতে পারে।
খাবার জমে যাওয়া:
যদি ফ্রিজের তাপমাত্রা খুব কম রাখা হয় (যেমন ০ ডিগ্রি বা তার নিচে), তবে তরল
জাতীয় খাবার যেমন- দুধ, জুস, পানি ইত্যাদি জমে যায়। এমনকি ফলমূল ও সবজি কুচিরও
রঙ ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। বেশি ঠান্ডা থাকলে ফলমূল শুকিয়ে যায়, মাংস শক্ত
হয়ে যায় এবং রান্নার সময় গুণগতমান কমে যায়। অনেক সময় তো বরফ জমে খাবার বের
করাই কষ্টকর হয়ে যায়।
বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যাওয়া:
অপ্রয়োজনীয়ভাবে তাপমাত্রা খুব কমিয়ে রাখলে ফ্রিজ বেশি সময় ধরে চালু থাকে, ফলে
বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত চাপ শুধু বিলই বাড়ায় না, বরং ফ্রিজের
কম্প্রেসারের উপরও অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলস্বরূপ, ফ্রিজ দ্রুত নষ্ট হওয়ার
সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং বারবার সার্ভিসিংয়ের দরকার পড়ে।
ফ্রিজের যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়া:
অত্যাধিক ঠান্ডা বা গরম তাপমাত্রা ফ্রিজের অভ্যন্তরের সেন্সর, কম্প্রেসার, ফ্যান
ইত্যাদির উপর প্রভাব ফেলে। সেন্সর ভুল পাঠ দিতে পারে, কম্প্রেসার অতিরিক্ত সময়
ধরে চলতে পারে এবং কুলিং সিস্টেমে সমস্যা তৈরি হয়। এতে ফ্রিজের জীবনকাল হ্রাস
পায় এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই কারণগুলোর ফলে বোঝা যায় যে, ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা সবসময় নিয়ন্ত্রিত
রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম কোনো অবস্থাই নিরাপদ নয়।
ফ্রিজের তাপমাত্রা সঠিকভাবে সেট করা হলে খাবার দীর্ঘদিন টিকবে, ফ্রিজ ভালো চলবে
এবং বিদ্যুৎও বাঁচবে।
শিশুর খাবার রাখার জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা কত?
শিশুর খাবার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
যেহেতু শিশুরা খুব সংবেদনশীল এবং তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের তুলনায় অনেক
কম, তাই তাদের খাবার নষ্ট হওয়া বা জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি একেবারেই রাখা যায়
না। ওয়ালটন ফ্রিজ ব্যবহারের সময় শিশুর খাবার ঠিক কী তাপমাত্রায় রাখা উচিত, তা
জানা অত্যন্ত জরুরি।
শিশুর দুধ, সেদ্ধ করা ডিম, রান্না করা ভাত বা সবজি, ফলমূল ইত্যাদি সংরক্ষণে আদর্শ
তাপমাত্রা হলো ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই সীমার মধ্যে
তাপমাত্রা রাখলে খাবার দীর্ঘ সময় সতেজ থাকে এবং জীবাণুর বংশবৃদ্ধি বন্ধ থাকে।
বিশেষ করে যদি মায়ের দুধ সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে তা অবশ্যই ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস
বা তার নিচে রাখা উচিত এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার করা উচিত। শিশুর খাবার রাখার
সময় কিছু অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। যেমন: খাবার ঠান্ডা না করে
সরাসরি ফ্রিজে না রাখা, ফ্রিজের দরজা বারবার না খোলা, শিশুর খাবার রাখা অংশটি সব
সময় পরিষ্কার রাখা, ওয়ালটন ফ্রিজে নির্ধারিত Child Care Mode ব্যবহার করা
ইত্যাদি। এসব নিয়ম মানলে শিশুর খাবার দীর্ঘ সময় ভালো থাকবে এবং শিশুর
স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমবে। শুধু ফ্রিজে রাখলেই হবে না, বরং সঠিক তাপমাত্রা ও সময়
মেনে সংরক্ষণ করাটাই শিশুর খাবার নিরাপদ রাখার মূল চাবিকাঠি।
ফ্রিজের ভুল তাপমাত্রা কি কি ক্ষতিকর করতে পারে?
ফ্রিজের তাপমাত্রা ঠিক না থাকলে তা শুধু খাবারের মান নষ্টই করে না, বরং আমাদের
স্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অনেক সময় আমরা বুঝতেই পারি না, আমাদের
ফ্রিজ সঠিকভাবে কাজ করছে কি না। অথচ এই ছোট একটি বিষয়ের কারণে হতে পারে বড়
ধরণের সমস্যা।
ভুল তাপমাত্রার কারণে যেসব ক্ষতি হতে পারে তা নিচে তুলে ধরা হলো:
-
খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়া: তাপমাত্রা যদি ৫ ডিগ্রির উপরে থাকে,
তাহলে খাবারে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক দ্রুত জন্ম নিতে পারে, ফলে খাবার
দুর্গন্ধযুক্ত ও অখাদ্য হয়ে পড়ে।
-
অস্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ: যেমন স্যালমোনেলা বা ই-কোলাই,
যেগুলো মানুষের পাকস্থলীতে সংক্রমণ ঘটিয়ে ডায়রিয়া, জ্বর বা বমির মতো
অসুস্থতা তৈরি করতে পারে।
-
বিদ্যুৎতের অপচয়: ফ্রিজ খুব বেশি ঠান্ডা করলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ
হয়, আবার খুব কম ঠান্ডা করলে কম্প্রেসর বারবার চলতে বাধ্য হয়, ফলে বিদ্যুৎ
খরচ বেড়ে যায়।
-
ফ্রিজের যন্ত্রাংশের ক্ষতি: সঠিক তাপমাত্রা বজায় না থাকলে ফ্রিজের
কম্প্রেসর ও ফ্যানের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, ফলে যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার
আশঙ্কা বেড়ে যায়।
-
ফ্রিজে বরফ জমে যাওয়া: ভুল তাপমাত্রায় ফ্রিজের ভিতরে অতিরিক্ত বরফ
জমে গিয়ে খাবার ঠান্ডা হওয়া ব্যাহত করে এবং ফ্রিজের কার্যকারিতা হ্রাস করে।
তাই প্রতিদিন ফ্রিজের তাপমাত্রা মনিটর করা, ফ্রিজ ওভারলোড না করা, দরজা বেশিক্ষণ
খোলা না রাখা ইত্যাদি অভ্যাস আমাদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় সাহায্য করতে পারে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে ফ্রিজের তাপমাত্রার ভূমিকা সম্পর্কে জেনে নিন
আমরা উপরে বিস্তারিতভা জেনে এসেছি, ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা কত রাখা উচিত? এবং
একই সাথে আমরা আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কেও জেনেছি যা আমাদের জন্য
খুবই প্রয়োজনীয় এবং উপকারি। এখন আমরা আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা
করবো এবং সেটি হচ্ছে- বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে ফ্রিজের তাপমাত্রার ভূমিকা কতটুকু। চলুন
তবে জেনে নেওয়া যাক।
আজকের দিনে বিদ্যুৎ সাশ্রয় একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই জানেন
না যে, ফ্রিজের তাপমাত্রা ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদ্যুৎ
সাশ্রয় সম্ভব। ওয়ালটন ফ্রিজে আধুনিক প্রযুক্তি থাকায় সঠিক ব্যবহার করলে আপনি
সহজেই বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে ফেলতে পারেন। যেমন:
সঠিক তাপমাত্রা নির্ধারণের গুরুত্ব:
ওয়ালটন ফ্রিজে সাধারণত ৩ ডিগ্রি থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা
উপযুক্ত বলা হয়। এই সীমার বাইরে তাপমাত্রা বাড়ালে বা কমালে ফ্রিজের কম্প্রেসর
অতিরিক্ত কাজ করতে থাকে, ফলে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়। সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখলে
ফ্রিজ দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং বিদ্যুৎ খরচও কম হয়।
স্মার্ট ইনভার্টার প্রযুক্তির ব্যবহার:
ওয়ালটন ফ্রিজে ব্যবহৃত স্মার্ট ইনভার্টার প্রযুক্তি ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ
তাপমাত্রা অনুযায়ী কম্প্রেসরের গতি নিয়ন্ত্রণ করে। এতে অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ
অপচয় কম হয় এবং ফ্রিজের পারফরম্যান্সও উন্নত হয়। সঠিক তাপমাত্রা সেট করলে এই
ইনভার্টার আরও কার্যকরভাবে কাজ করে।
দরজা খোলার হার কমানো:
যতবার দরজা খোলা হয়, ততবার বাইরের উষ্ণতা ফ্রিজের ভিতরে প্রবেশ করে। এতে ফ্রিজকে
আবার ঠান্ডা হতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ করতে হয়। সঠিক তাপমাত্রা বজায় থাকলে দরজা
কম খোলার অভ্যাস গড়ে ওঠে এবং বিদ্যুৎ অপচয় কম হয়।
নিয়মিত পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ ডিগ্রি:
ফ্রিজ যদি ময়লা বা ধুলায় ভর্তি থাকে, তবে ঠান্ডা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
ওয়ালটন ফ্রিজে তাপমাত্রা নির্ধারিত মাত্রায় রাখার পাশাপাশি, মাসে অন্তত একবার
পরিষ্কার করলে ফ্রিজ ঠিকভাবে কাজ করে এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।
ওয়ালটন ফ্রিজের তাপমাত্রা সংক্রান্ত সাধারণ জিজ্ঞাসা ও সমাধান
ওয়ালটন ফ্রিজ ব্যবহারকারীদের মনে অনেক সময় তাপমাত্রা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন
দেখা যায়। সঠিক উত্তর জানা না থাকলে অনেকেই ভুল ব্যবহার করেন এবং এতে ফ্রিজের
কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এখানে আমরা কয়েকটি সাধারণ প্রশ্ন ও তার বিস্তারিত
সমাধান তুলে ধরছি যেগুলো নিয়ে আমরা উপরে জেনে এসেছি। এগুলো শেষে রাখার কারণ
হচ্ছে, এই বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের এগুলো সম্পর্কে জেনে থাকা ভালো
যেন পরবর্তীতে এগুলো আমাদের কাজে আসে। তাই পুনরায় আমরা এই বিষয়গুলোকে তুলে ধরছে
এবং শেষ অংশ হিসেবে আমরা এটিকেও ধরতে পারি অথবা আজকের আর্টিকেলের রিভিশন পয়েন্ট
এটি। চলুন জেনে আসা যাক বিষয়গুলো সম্পর্কে।
ওয়ালটন ফ্রিজের আদর্শ তাপমাত্রা কত হওয়া উচিত?
ওয়ালটন ফ্রিজের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা সাধারণত ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৫ ডিগ্রি
সেলসিয়াস পর্যন্ত। এই সীমার মধ্যে ফ্রিজে রাখা খাবার দীর্ঘ সময় তাজা থাকে এবং
জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনাও কম থাকে। ফ্রিজের ম্যানুয়াল বা ডিসপ্লে প্যানেল থেকে
আপনি সহজেই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
ফ্রিজে খাবার ঠান্ডা হতে কত সময় লাগে?
নতুন করে রান্না করা গরম খাবার একেবারে ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। সাধারণত ২ ঘণ্টা
ঠান্ডা করে তবেই ফ্রিজে রাখতে হয়। এরপর খাবার সম্পূর্ণ ঠান্ডা হতে ৪ থেকে ৬
ঘণ্টা সময় লাগে। তবে ওয়ালটনের ফাস্ট কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করলে আরও দ্রুত
ঠান্ডা হওয়া সম্ভব।
ফ্রিজে বরফ বেশি জমে গেলে কী করতে হবে?
ওয়ালটন ফ্রিজের কিছু মডেলে অটো ডিফ্রস্ট ফিচার থাকলেও কিছু মডেলে বরফ জমে যেতে
পারে। এই ক্ষেত্রে প্রতি মাসে একবার ডিফ্রস্ট করা দরকার। বরফ জমে থাকলে ফ্রিজের
কার্যকারিতা কমে যায় এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়।
তাপমাত্রা বেশি হলে বা কম হলে কীভাবে বুঝবো?
ওয়ালটন ফ্রিজে সাধারণত ডিজিটাল ডিসপ্লে থাকে যেখান থেকে তাপমাত্রা দেখে নেওয়া
যায়। যদি দেখা যায় খাবার তাড়াতাড়ি নষ্ট হচ্ছে বা ফ্রিজে অতিরিক্ত বরফ জমছে,
তাহলে বুঝতে হবে তাপমাত্রা ঠিক নেই। এই অবস্থায় ম্যানুয়াল দেখে বা
টেকনিশিয়ানের সাহায্যে সঠিক তাপমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।
শেষ মন্তব্য
আমরা আজকের আর্টিকেলে শেষ অংশে চলে এসেছি তাই শেষ মন্তব্য হিসেবে আমরা বলতে পারি,
একটি ফ্রিজের সঠিক তাপমাত্রা শুধু তার কার্যকারিতা বাড়ায় না, বরং আপনার
স্বাস্থ্য, খাবারের গুণগত মান এবং বিদ্যুৎ বিলের ওপরও তা ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
ওয়ালটন ফ্রিজের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনি খুব সহজেই নিরাপদ এবং
সাশ্রয়ী জীবনযাপন নিশ্চিত করতে পারেন। শিশুর খাবার হোক বা পরিবারের অন্যান্য
সদস্যের খাবার- প্রতিটি আইটেমের জন্য নির্ধারিত তাপমাত্রা বজায় রাখা জরুরি।
প্রতিদিনের জীবনে ছোট ছোট অভ্যাস যেমন: ফ্রিজের দরজা খোলা কমানো, ওভারলোড না করা,
সময়মতো পরিষ্কার রাখা, সঠিক তাপমাত্রা নির্ধারণ- এইসবের মাধ্যমেই আপনি ফ্রিজের
কার্যকারিতা শতভাগ পেতে পারেন। মনে রাখবেন, ওয়ালটন ফ্রিজ শুধু একটি যন্ত্র নয়,
বরং এটি আপনার পরিবারের নিরাপত্তা ও সাশ্রয়ের প্রতীক। তাই এটিকে সঠিকভাবে
ব্যবহার করুন এবং আপনার ফ্রিজকে দিন দীর্ঘস্থায়ী জীবন।
সঠিক তাপমাত্রা নির্ধারণ করে আপনি যেমন স্বাস্থ্যকর খাবার উপভোগ করতে পারবেন,
তেমনি বিদ্যুৎ বিলও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর এসবই সম্ভব হবে যদি আপনি নিয়মিত নজর
রাখেন ফ্রিজের তাপমাত্রার ওপর এবং ওয়ালটন ফ্রিজের নির্দেশনাগুলো মেনে চলেন।
BLOGGER BD-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url